বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

লাইসেন্স নবায়ন নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন ক্যাবল অপারেটররা

তথ্যমন্ত্রী বরাবর কোয়াবের চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক

লাইসেন্স নবায়ন নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন টেলিভিশন নেটওয়ার্কের ক্যাবল অপারেটররা। জরিমানা-সারচার্জ দিয়েও লাইসেন্স নবায়ন করতে পারছেন না তারা। উল্টো ক্যাবল অপারেটরদের অফিসে অভিযান চালাচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জরিমানা করছে মোটা অঙ্কের অর্থ। এতে চলমান করোনাকালীন বিপদে থাকা ক্যাবল ব্যবসায়ীরা আরও ভয়াবহ বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে, তথ্যমন্ত্রী বরাবর ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের (কোয়াব) পক্ষ থেকে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ। তিনি বলেছেন, চাঁদাবাজিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত থাকার পরও সংগঠনের আওতাভুক্ত সারা দেশের ৫ লাখ পরিবারের সঙ্গে এমন আচরণ অত্যন্ত অমানবিক। কাদের স্বার্থে এমনটা করা হচ্ছে? দ্রুততর সময়ের মধ্যে প্রয়োজনে এই পেশাকে শিল্প ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, দেশের ১ হাজার ৪৩২ জন ক্যাবল ও ফিড অপারেটরকে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার অজুহাতে লাইসেন্স নবায়ন করছে না বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) কর্তৃপক্ষ। আইন অনুসারে বিলম্ব ফি দিয়ে লাইসেন্স নবায়নের বিধান থাকলেও সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ক্যাবল ব্যবসায়ী বলেছেন, দেশের প্রায় সবকটি এলাকাতেই চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন তারা। বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দেওয়ার পরও এর সুরাহা হচ্ছে না। বর্তমানে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে সুমন দাসের চাঁদাবাজির বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়াতে উঠে আসার পরও তার আচরণের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসেনি। আসলে আমরা খুবই অসহায়বোধ করছি। তারা আরও বলেন, বিভিন্ন কারণে যারা তাদের লাইসেন্স নবায়ন করতে পারেননি তারা নবায়নের জন্য বিটিভির কন্ট্রোলার/লাইসেন্স ম্যানেজারের দফতরে যোগাযোগ করলেও নবায়নের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। ৩১ আগস্টের পর থেকে নবায়ন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোনো ফি জমা নেওয়া হচ্ছে না। কিসের ভিত্তিতে, কেন এটা করা হচ্ছে তাও অবহিত করছে না কর্তৃপক্ষ। তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ‘ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬’ অনুসারে দুই বছরের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়। লাইসেন্স ফি হচ্ছে-ক্যাবল অপারেটরদের বার্ষিক ৫০ হাজার টাকা করে। আর ফিড অপারেটরদের (যারা ক্যাবল অপারেটরদের কাছ থেকে সংযোগ নিয়ে বাড়ি বাড়ি সংযোগ দেয়) ফি হচ্ছে বিভাগীয় পর্যায়ে বার্ষিক ১৬ হাজার, জেলা পর্যায়ে ১০ হাজার এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ৬ হাজার টাকা করে। আইন অনুসারে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন করা না হলে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা হারে জরিমানা দিতে হয়। যারা ইতিমধ্যে লাইসেন্স নবায়ন করতে পারেননি তারা জরিমানা দিয়ে নবায়ন করতে চাইলেও এখন পারছেন না। ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে প্রায় ৫ হাজার ক্যাবল অপারেটর রয়েছে। এদের মধ্য থেকে ৭৩১ ক্যাবল অপারেটর এবং ৭০১ জন ফিড অপারেটর আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে তাদের লাইসেন্স নবায়ন করতে পারেননি। তারা এখন হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছেন।

রাজধানীর মিরপুর এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অপারেটর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি জানি আমার জরিমানা হবে। এরপরও আমি বিটিভির কন্ট্রোলার/লাইসেন্স ম্যানেজারের দফতরে লাইসেন্স নবায়নের জন্য যোগাযোগ করলে আমাকে বলা হয়, ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে লাইসেন্স ফি পরিশোধ করে নবায়নের আবেদনপত্র বিটিভির ডিজি বরাবরে ডাকে পাঠিয়ে দিতে। আমি তাই করেছি। এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছি না আমার চিঠিটি পৌঁছেছে কিনা!

রাজধানীর মগবাজার নয়াটোলা-আমবাগান এলাকার একজন অপারেটর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা চলছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর তার অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে তাকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। অথচ তার বার্ষিক লাইসেন্স ফি ১৬ হাজার টাকার সঙ্গে ভ্যাট ও সারচার্জসহ প্রায় ২০ হাজার টাকা আসার কথা। করোনার কারণে এমনিতেই ব্যবসার অবস্থা খারাপ, এর মধ্যে এত টাকা জরিমানা। কই যামু ভাই! আমার পাশের চেয়ারম্যান গলির আরেক অপারেটরকেও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে মোবাইল কোর্ট।

লাইসেন্স নবায়ন নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বিটিভির কন্ট্রোলার/লাইসেন্স ম্যানেজার জুলফিকার রহমান কোরাইশী বলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে লাইসেন্স নবায়ন করছে না ২৮ আগস্টের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে একটি ঘোষণা আগেই দেওয়া হয়েছে। এখন লাইসেন্স নবায়ন ফি জমা নেওয়ার জন্য তার কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি।

এ বিষয়ে কোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, অতীতে কেউ লাইসেন্স যথাসময়ে করতে না পারলে আইন অনুযায়ী নির্ধারিত জরিমানাসহ সমুদয় ফি যে কোনো সময় জমা দিয়ে নবায়ন করা গেছে। কিন্তু এখন একদিকে নবায়নের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। উল্টো ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করছে। যা অনেক ক্ষেত্রে নবায়ন ফির চেয়েও বেশি। তিনি আরও বলেন, এমনিতেই ক্যাবল ব্যবসায় দুর্দিন চলছে। আবার সারা দেশের ক্যাবল ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। আর্থিক সংকটে পড়ে ঠিকমতো ব্যবসাও করতে পারছে না। এমন অবস্থায় এই ব্যবসা এবং এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ৫ লাখ মানুষের জীবিকার স্বার্থে এটাকে অবিলম্বে শিল্প ঘোষণা করা উচিত। একই সঙ্গে অতি দ্রুত ডিজিটালাইজেশনের ব্যবস্থা করা উচিত।

তথ্য মন্ত্রী বরাবর চিঠি : গত ৯ সেপ্টেম্বর কোয়াবের পক্ষ থেকে তথ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে টেলিভিশন শিল্প বিকাশে ক্যাবল অপারেটরদের ভূমিকা অপরিহার্য। আমরা গত ২৫ বছরে তিলে তিলে অনেক কষ্ট করে এই ক্যাবল টেলিভিশন শিল্পকে দাঁড় করিয়েছি। আমাদের এই ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করে দেশে আজ বাংলাদেশি ৩৪টি টিভি চ্যানেল পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের ক্যাবল অপারেটর ও ফিড অপারেটরদের বিটিভি থেকে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। আমরা বেশিরভাগ ক্যাবল অপারেটর বিটিভির কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, অনেক ক্যাবল অপারেটর আর্থিক টানাপড়েন ও অবহেলাজনিত কারণে বিটিভি লাইসেন্স নবায়ন করতে পারেনি। যার ফলে প্রায় দেড় হাজার ক্যাবল অপারেটর লাইসেন্স নবায়নের জন্য অপেক্ষায় আছে। সারা দেশে বিভিন্ন ছোট ছোট নেটওয়ার্কে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে প্রচুর টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। যা ক্ষুদ্র একজন অপারেটরের পক্ষে প্রদান করা কষ্টসাধ্য।’ এ অবস্থায় মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সসমূহ বিটিভি কর্তৃক ধার্যকৃত বিলম্ব ফি, সারচার্জসহ সমুদয় ফি প্রদানের মাধ্যমে নবায়নের সুযোগ দেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদানের জন্য তথ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর