রাজধানীর সবুজবাগের নন্দীপাড়ায় গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসায় চুরি করতে যান ওই ভবনে পানি সরবরাহকারী মনির। চুরির বিষয়টি টের পেয়ে যান জান্নাতুল। তিনি চোর মনিরকে চিনেও ফেলেন। তাই তাকে গলা কেটে হত্যা করেন মনির। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। রক্তের দাগ অনুসরণ করে ওই ভবন থেকেই গ্রেফতার করে খুনি মনিরকে। গত সোমবার রাতে নৃশংস এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সবুজবাগ থানায় মামলা করেছেন নিহতের স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান। ডিএমপির সবুজবাগ জোনের এসি মো. রাশেদ হাসান জানান, নন্দীপাড়ার লাল মসজিদ সংলগ্ন সাত তলা বাড়ির চতুর্থ তলায় স্বামী মোস্তাফিজ ও দেড় বছর বয়সী ছেলে জারিফকে নিয়ে থাকতেন গৃহবধূ জান্নাতুল। মোস্তাফিজ গুলশানের একটি হোটেলের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। তারা নির্মাণাধীন বাসায় থাকতেন। চতুর্থ তলার উপরের ফ্লোরগুলোর কাজ চলছিল।
নির্মাণাধীন ওই ভবনে পানি সরবরাহ করতেন মনির। সোমবার রাত ৮টার দিকে মনির জান্নাতুলের বাসার পেছনের গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন। একটি রুম তছনছ করেও কিছু পাননি। পরে জান্নাতুলের রুমে প্রবেশ করেন। জান্নাতুল তাকে চিনে ফেলেন। কীভাবে ভিতরে এসেছেন জানতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গেই মনির তার মুখ চেপে ধরেন। গৃহবধূ চিৎকার করতে চাইলে হাতে থাকা ছুরি দিয়ে পিঠে একে একে সাতটি আঘাত করেন।
তার পরও এক ঝটকায় গৃহবধূ মনিরের হাত থেকে ছুটে চিৎকার করতে করতে দৌড়ে আরেকটি রুমে যান। মনিরও দৌড়ে সেখানে যান। পুলিশে দেওয়া হবে বলে গৃহবধূ মনিরকে হুমকি দেন। এতে মনির ক্ষিপ্ত হয়ে বিছানায় ফেলে ছুরি দিয়ে গলা কেটে জান্নাতুলের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। গলা কাটতে গিয়ে নিজের হাতের আঙুলও কেটে যায় মনিরের। এরই মধ্যে গৃহবধূর চিৎকারে আশপাশের লোকজন দৌড়ে ওপরে আসছিল। নিচে গেলে ধরা পড়ার ভয়ে মনির পেছনের দরজা দিয়ে আবার নির্মাণাধীন ওই ভবনের ওপরে চলে যান। ভবনের ছাদ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি নিচে ফেলে দেন। নিজেকে রক্ষায় কাছে রাখেন চাপাতি। নির্মাণাধীন ওই ভবনের ছাদের এক কোণে শুয়ে থাকার ভান করেন মনির।পুলিশ কর্মকর্তা রাশেদ বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ওই বাড়িতে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি পেছনের দরজার কাছে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত। এমনকি চতুর্থ তলা থেকে পঞ্চম তলায় ওঠার সিঁড়িতেও লেগে ছিল রক্ত। পরে ছাদের ওপরে উঠে মনিরকে দেখতে পাই। তিনি পুলিশকে দেখে চাপাতি বের করে কোপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এর মধ্যেই পুলিশ তাকে ধরে ফেলে।’ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মনির হত্যাকা-ের কথা স্বীকার করে। বলেন, চুরি করতে গিয়ে বাধা পেয়ে এ হত্যাকা- ঘটিয়েছেন। মনির পুলিশকে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি পানি সরবরাহ করছেন। ক্রিকেটে জুয়া বাজি ধরতেন। সম্প্রতি জুয়ায় ১৬ হাজার টাকা হেরে যান। নিহত গৃহবধূর স্বামী মোস্তাফিজের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা ধারও নেন।
নিহত গৃহবধূর স্বামী প্রতিদিন সকাল ৯টায় বাসা থেকে বের হয়ে রাত ৯টা-১০টার দিকে ফেরেন। শিশু জারিফকে নিয়ে বাসায় থাকতেন গৃহবধূ। বিষয়টি জানতেন মনির। প্রায় ছয় মাস ধরে মনির ওই ভবনে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করছিলেন। বর্তমানে নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় একাই ভবনে পানি সরবরাহ করতেন। আজ মনিরকে আদালতে পাঠানো হবে।