বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সভা

নিজের লোক কমিটিতে থাকলে অনুমোদন নয়

রফিকুল ইসলাম রনি

বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্ব পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। যেসব জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে শুধু নিজেদের পছন্দমতো লোক রাখবেন, যারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের কমিটি থেকে বাদ দেবেন, তাদের কমিটি অনুমোদন হবে না। দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের কমিটিতে মূল্যায়নের নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল সকালে গণভবনে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে তিনি এমন নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে চলমান বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ তথা দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ বেড়ে গেলে দলীয়ভাবে করণীয় ও আগাম প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য, বিভাগীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকম-লীর এক সদস্য এবং কার্যনির্বাহী সংসদের একজন সদস্যের সমন্বয় করে কমিটি করা হচ্ছে। এই কমিটি সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় দায়িত্ব পালন করবেন। যেসব জেলার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে সেগুলো সম্মেলন করতে বলা হয়েছে। যেসব জেলায় সম্মেলন হয়েছে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। কমিটিতে ‘মাইম্যান’ না রাখারও নির্দেশনা রয়েছে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আওয়ামী লীগের জেলা কমিটিগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বী সব পক্ষের নেতাদের স্থান দিতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেছেন, যেসব জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে শুধু নিজেদের পছন্দমতো লোক রাখবে, যারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের কমিটি থেকে বাদ দেবে তাদের কমিটি অনুমোদন হবে না। যারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন তাদেরকেও কমিটিতে মূল্যায়ন করতে হবে। যারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাদ দেবে দরকার হলে তাদের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করে দেব। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে জেলা-উপজেলা কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করার দাবি তোলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান। তিনি বলেন, আসন্ন যেসব জেলা-মহানগর কমিটি হবে সেখানে ত্যাগী-পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন করতে হবে। জবাবে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, হ্যাঁ অবশ্যই কোনোভাবেই যেন আমার পরীক্ষিত ত্যাগী বিশেষ করে ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত শাসন আমল এবং ১/১১ সরকারের সময়ে যারা দলের জন্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে, দলের জন্য অবদান রেখেছেন তাদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে। বিষয়টি তোমরা (দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা) ভালো করে দেখভাল করবে। কারও ‘মাইম্যান রাখা চলবে না’। প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীকে কমিটিতে রাখতে হবে। বৈঠকের করোনার মধ্যে দলীয় নেতা-কর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘করোনায় বিশ্ব নেতারা যখন হিমশিম খাচ্ছিল, তখন আপনার সঠিক নেতৃত্বে আমাদের জীবন-জীবিকা সচল রেখেছেন। বলা চলে এখন একটা যুদ্ধকালীন সময় যাচ্ছে। তখন আপনি সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। এ সময় নিজের মেয়ের কথা তুলে ধরে নানক বলেন, “নেত্রী, আমি যখন গণভবনে রওনা হই, তখন আমার মেয়ে বলেছে ‘তুমি ফুপির (শেখ হাসিনা) কাছে যাবে না। তার কিছু হলে দেশ বাঁচবে না।’ আগে তাকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।” বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সারা দেশে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের লক্ষ্যে আটটি বিভাগীয় কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বিভাগীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য, সম্পাদকম-লী থেকে একজন এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্যও থাকবেন। বৈঠক সূত্র জানায়, একই সঙ্গে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যেসব জেলা-উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, সেখানে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দায়িত্ব দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নেতাদের। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়া জেলা-উপজেলা ও মহানগরের দ্রুত সম্মেলন করার তাগিদও দিয়েছেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। গতকাল দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে সাংগঠনিক পরিস্থিতি, জেলা, মহানগর, দলের সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিষয়ক ভিত্তিক বিভিন্ন উপকমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, আবদুল মতিন খসরু, আবদুল মান্নান খান, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। করোনা সংক্রমণের কারণে এতদিন আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত ছিল।

সর্বশেষ খবর