বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পিঁয়াজ নিষেধাজ্ঞায় ভারতেও বিক্ষোভ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পিঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে সে দেশের চাষিরা। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের পর মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের নাসিক, লাসালগাঁও, আহমেদনগর, জলগাঁওসহ একাধিক জায়গায় প্রতিবাদ জানায় চাষিরা। খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের মোট পিঁয়াজ উৎপাদনের ৪৫ শতাংশ আসে এই অঞ্চল থেকে।

নাসিক, লাসালগাঁও, ইয়োলা, কালওয়ান, সাতানা, ভুসাওয়ালসহ মহারাষ্ট্রের একাধিক বাজারে প্রতিদিন কয়েক শত কুইন্টাল পিঁয়াজের  কেনাবেচা হয়। এসব  জায়গায় প্রতিটি মার্কেটই বন্ধ রাখা হয়।                

কোথাও আবার রাস্তা অবরোধ করে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়। চাষিদের দাবি, পিঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। গত সোমবার ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এর এক বিবৃতিতে সব ধরনের (টাটকা ও হিমায়িত) পিঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বলা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, মুম্বাই-আগ্রা, নাসিক-ঔরঙ্গাবাদ এবং সিন্নার-আহমেদনগর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে পিঁয়াজ চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এতে যান চলাচলের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে নাসিকের চাঁদওয়ার এলাকার পিঁয়াজ চাষি জয়ন্ত দুধানে বলেন, ‘এটা বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। মোদি সরকার আমাদের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে।’ তিনি বলেন, করোনা ও লকডাউনের কারণে এমনিতে গত মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত পুরো সময় পিঁয়াজ চাষিরা প্রচ- ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এখন যখন চাষিরা তাদের পিঁয়াজ বাজারে নিয়ে আসছেন, এই সরকার তা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিল। অল ইন্ডিয়া কিষাণ সভার সাধারণ সম্পাদক ড. অজিত নাওয়ালে বলেন, ‘দুই মাস আগেই মোদি সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে পিঁয়াজকে বাদ দিয়েছে। তাহলে পিঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার যৌক্তিকতা কোথায়। বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে পিঁয়াজ রপ্তানি করে চাষিরা ভালো মুনাফা করছেন। কিন্তু কেন্দ্রের এই আচমকা সিদ্ধান্তের ফলে পিঁয়াজের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) নেতা শারদ পাওয়ারও। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমি জানিয়েছি যে আন্তর্জাতিকভাবে পিঁয়াজের প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং আমাদের তা রপ্তানি চালিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের একটা আচমকা সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে পিঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে। এ অবস্থায় পাকিস্তানসহ অন্য দেশগুলো এর সুযোগ নেবে।’ এ ব্যাপারে মহারাষ্ট্রের খাদ্য ও সরবরাহমন্ত্রী ছগন ভুজবল বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। লকডাউনের কারণে চাষিদের ইতিমধ্যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার সেটা কিছুতেই এড়িয়ে যেতে পারে না। তাছাড়া চাষিরা যদি এভাবে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চালিয়ে যায় তাহলে দেশীয় বাজারে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য।’ ভারতে পিঁয়াজের ফলন হয় মূলত মহারাষ্ট্রের নাসিক, লাসালগাঁও, কর্ণাটকের মাকলি এলাকায়। নাসিকের পিঁয়াজ রপ্তানি হয় বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আরব আমিরাতেও। মঙ্গলবারও নাসিকের লাসালগাঁওতে (এশিয়ার সবচেয়ে বড় পিঁয়াজের আড়ত) কেজি প্রতি পিঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ রুপি।

সর্বশেষ খবর