বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে ড. মোহাম্মদ সাদিক

প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি আমার সময়ে

নিজামুল হক বিপুল

প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি আমার সময়ে

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিদায়ী চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেছেন, তার মেয়াদে পিএসসির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেওয়ার পর বিসিএস পরীক্ষার কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। এমনকি তৈরি হয়নি বিতর্কিত কোনো প্রশ্নপত্র। পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নেওয়ার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। প্রশ্নকারক, মডারেটর, পরীক্ষক, পরিদর্শক, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আলাদা আলাদা বৈঠক করে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রতিটা পরীক্ষার আগে। তিনি বলেন, পিএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা অক্ষুণœ রাখতে এবং বিতর্কের ঊর্ধ্বে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটিকে দাঁড় করাতে চেষ্টা করেছেন তিনি এবং দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন। চাকরিপ্রার্থীদের কাছে পিএসসির যে আস্থা তৈরি হয়েছে সেটিকে ধরে রাখতে হবে। বিদায়ের প্রাক্কালে মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথোপকথনে এসব কথা বলেন পিএসসির বিদায়ী চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। শিক্ষা সচিব পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর প্রথমে তাকে পিএসসির সদস্য করেছিল সরকার। দেড় বছরের মাথায় ড. সাদিক নিয়োগ পান পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে। তারপর প্রায় সাড়ে চার বছর এই দায়িত্ব পালন করেছেন সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে। পূর্ণ মেয়াদ দায়িত্ব পালন করে আজ তিনি এই পদ থেকে বিদায় নিচ্ছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় পিএসসির বিদায়ী চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রত্যেকবার আমরা ছয় থেকে আট সেট প্রশ্নপত্র তৈরি করেছি। পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে কোড নম্বর পাঠিয়ে দিয়েছি কোন সেটে পরীক্ষা গ্রহণ হবে। ফলে কোন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে আগে থেকে কারোরই জানার সুযোগ ছিল না। এতে করে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা পুরোপুরি রোধ করতে পেরেছি। এটা একটা বড় সাফল্য। মৌখিক পরীক্ষার ক্ষেত্রেও ছিল সতর্কতা। পরীক্ষার দিন সকালে বোর্ড নির্ধারণ করা হতো। ফলে কে কোন বোর্ডে পরীক্ষা দেবে তা জানার সুযোগ ছিল না। পিএসসির বিদায়ী চেয়ারম্যান বলেন, ‘পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে আমার মেয়াদে বিসিএসের পাঁচটি পরীক্ষা নিতে পেরেছি। ৩৬তম বিসিএস থেকে ৪০তম বিসিএস পর্যন্ত। আমার সময়ে প্রায় ১৪ হাজার ক্যাডারের চাকরির সুপারিশ করেছি। বিসিএস পাস করেছে অথচ ক্যাডার পায়নি এমন সাড়ে ৯ হাজার প্রার্থীকে নন-ক্যাডার পদে পদায়ন করা হয়েছে ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত। এর মধ্যে শুধু আমার মেয়াদেই নিয়োগ দিয়েছি সাড়ে ৭ হাজার।’  তিনি বলেন, ‘আগে বিসিএসের পরীক্ষা বাংলা ও ইংরেজিতে অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু মধ্যে ইংরেজি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। আমি ৩৮তম বিসিএস থেকে বাংলার পাশাপাশি আবার ইংরেজি চালু করেছি। কারণ আমাদের দেশে অনেক তরুণ আছে, যারা ইংরেজিতে পরীক্ষা দিতেই পছন্দ করে।’ ড. সাদিক বলেন, ‘আমি পিএসসির প্রতি মানুষের, বিশেষ করে চাকরিপ্রার্থীদের একটা আস্থা তৈরি করতে পেরেছি। প্রার্থীরা এখন মনে করে, তাদের পরীক্ষা ভালো হলে চাকরি হবে। তদবিরের প্রয়োজন হবে না। যোগ্যতাতেই তারা চাকরি পাবে। আস্থা তৈরির বিষয়টা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি সেই আস্থার জায়গাটা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বিসিএস ছাড়া আমরা নন-ক্যাডার পরীক্ষাও নিই। আমরা গত বছর নন-ক্যাডারে একশর ওপরে পরীক্ষা নিয়েছি। এটা একটা বড় কাজ।’ বিদায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে পিএসসির নতুন চেয়ারম্যানের কাছে প্রত্যাশা কী- এমন প্রশ্নে জবাবে ড. সাদিক বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা থাকবে প্রতিটি নিয়োগ প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়। পিএসসির প্রতি আমাদের দেশের তরুণদের আস্থা যেন ধরে রাখা যায় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া, যাতে সরকারি চাকরিতে তরুণরা আগ্রহী হয়ে ওঠে। আমি মনে করি, সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের আস্থা ধরে রাখাই হবে পিএসসির নতুন চেয়ারম্যানের বড় চ্যালেঞ্জ।

সর্বশেষ খবর