বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

এক মাসে পিঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক মাসে পিঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হবে

ভারত থেকে পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর পণ্যটির দাম দেশের বাজারে যখন দফায় দফায় বাড়ছে তখন গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ভোক্তাদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, মাত্র ১০ দিন পিঁয়াজ খাওয়া বন্ধ রাখুন, দাম কমে যাবে। পিঁয়াজের মজুদ, সরবরাহ  ও মূল্য পরিস্থিতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করতে গিয়ে মন্ত্রী নিজের অবস্থা সম্পর্কে জানান, ভারতের ওই নিষেধাজ্ঞার পর গত (মঙ্গলবার) রাত থেকে তাঁর ঘুম হারাম হয়ে গেছে। গতকাল দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, অতিরিক্ত সচিব শরিফা খান, অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. ওবায়দুল আজম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা, টিসিবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে পিঁয়াজের হঠাৎ দাম বৃদ্ধির পেছনে তিনি অসাধু ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ভোক্তার আচরণকেও দায়ী করেন। মন্ত্রী বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়েছেন। এর ওপর ছিল ভোক্তাদের প্যানিক; যে ২ কেজি কিনত সে ১০ কেজি কিনেছে, তাই হঠাৎ বাজারে চাপ পড়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের একটি বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে টিপু মুনশি বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে সিন্ডিকেট থাকলেও জনগণের মধ্যে কোনো সিন্ডিকেট নেই। জনগণ ধৈর্য ধারণ করলে, এক মাসের মধ্যে পিঁয়াজের মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে বলে মন্ত্রী আশ্বস্ত করেন। এক মাস পর কত দামে পিঁয়াজ দেওয়া সম্ভব হবে- জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যদি আপনারা মানুষকে বোঝাতে পারেন ১০ দিন পিঁয়াজ কিনবেন না, আমি কিন্তু কমে খাওয়াতে পারব।

যদি বলেন ২ কেজির জায়গায় ১০ কেজি তাহলে আমি কোনো গ্যারান্টি দিতে পারব না। আমি বলছি আমাদের ঘাটতি আছে, এক মাসে আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে কালেক্ট করব, এই একটা মাস একটু সাশ্রয়ী হতে হবে।

মন্ত্রী জানান, আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ লাখ মেট্রিক টন পিঁয়াজের ঘাটতি আছে। অভ্যন্তরীণ মজুদ আছে ৬ লাখ মেট্রিক টন। আরও ৪ লাখ মেট্রিক টন আনতে হবে। তুরস্ক, মিয়ানমার, মিসরসহ কয়েকটি দেশ থেকে এ পিঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান তিনি।

আগের বারের মতো কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি ভারতের রাজনৈতিক কৌশল কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, এটি রাজনৈতিক কিনা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, গতবার বন্ধ করে দেওয়ার আগে তারা মিনিমাম প্রাইস বেঁধে দিয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম এবারও তাই করবে। কিন্তু তারা হঠাৎ করে বন্ধ করে দিল।

টিসিবি এবার বড় ধরনের পিঁয়াজের মজুদ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, করোনাকালে অনলাইনে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা থেকে তারা টিসিবির পিঁয়াজ ই-কমার্সে ভোক্তার ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কথা ভাবছেন।

গতবারের মতো এবারও বড় বড় শিল্পগ্রুপকে পিঁয়াজ আমদানির অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের অবহিত করেন। এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে টেন্ডার ছাড়াই যাতে পিঁয়াজ আনা যায় সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানান মন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন জানান, গত বছরের তুলনায় দেশে এবার প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন পিঁয়াজ বেশি উৎপাদিত হয়েছে। এ ছাড়া টিসিবির মাধ্যমে পরিকল্পনা চেয়ে বেশি পিঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী মার্চ পর্যন্ত তারা ন্যায্যমূল্যে ভোক্তার হাতে পণ্যটি তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন বলে জানান তিনি। পিঁয়াজ রপ্তানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় ভারতের সঙ্গে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানান বাণিজ্য সচিব।

সর্বশেষ খবর