শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সীমান্তে আটকা দুই শতাধিক ট্রাক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারত শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশে পিঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও এখনো দেশের প্রধান দুই স্থলবন্দর দিয়ে কোনো ভারতীয় পিঁয়াজবাহী ট্রাক দেশে ঢোকেনি। তবে আগের খোলা ঋণপত্রের বিপরীতে সীমান্তের ওপারে আটকেপড়া দুই শতাধিক পিঁয়াজবোঝাই ট্রাক আগামীকাল দেশে ঢুকতে পারে বলে হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে। গত সোমবার অভ্যন্তরীণ বাজারে পিঁয়াজের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে হঠাৎ করেই ভারত পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।

এদিকে হঠাৎ ভারতীয় পিঁয়াজ আসা বন্ধ হওয়ায় দেশের বাজারে পিঁয়াজের দাম নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। বাজারভেদে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পিঁয়াজের দাম। অনেকেই অতিরিক্ত পিঁয়াজ মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। এ পরিস্থিতিতে সরকার স্থানীয় প্রশাসনকে বাজার তদারকির নির্দেশ দিয়েছে। এরই মধ্যে অতিরিক্ত দামে পিঁয়াজ বিক্রি ও মজুদ করার অভিযোগে অনেক অসাধু ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতায় বরিশালে এক লাফে পিঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ৯ থেকে ১২ টাকা কমে যায়। এদিকে ভারতীয় পিঁয়াজ আসার খবরে দিনাজপুরের আড়তগুলোতে বুধবার পিঁয়াজের দাম কমে গেলেও গতকাল তা আবার প্রতি কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে যায়।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যÑ

দিনাজপুর : বাংলাদেশে পিঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা শর্তসাপেক্ষে তুলে নেওয়ায় আগামী শনিবার ওপারে আটকাপড়া পিঁয়াজের ট্রাকগুলো দেশে প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আগের খোলা ঋণপত্রের বিপরীতে সীমান্তের ওপারে আটকেপড়া যেসব পিঁয়াজবোঝাই ট্রাকের রপ্তানির অনুমতি মিলেছে অথচ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেনি, সেসব ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে। আমদানিকারকরা বলছেন, হিলি স্থলবন্দর সীমান্তের ওপারে প্রায় দুই শতাধিক পিঁয়াজবোঝাই ট্রাক দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আটকা পড়ে আছে। হিলি স্থলবন্দরের আড়তগুলোতে পিঁয়াজ কিনতে আসা পাইকাররা জানান, সোমবার ভারত পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর পরই দাম বেড়ে যায়। আগের দিন যে পিঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজি দরে কিনেছি, পরদিন তা বেড়ে ৬৫-৭০ টাকা হয়ে যায়। এ সময় পিঁয়াজ বিক্রির কোনো রিসিটও দিচ্ছিল না। পিঁয়াজ  আসার খবরে বুধবার আবার প্রতি কেজি পিঁয়াজের দর ৫২-৫৫ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু পিঁয়াজের ট্রাক না ঢোকায় গতকাল সকাল থেকে আবার প্রতি কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব গুদামেই পিঁয়াজ আছে, কিন্তু তারা কেউ কম দামে পিঁয়াজ ছাড়ছে না। হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর রশিদ জানান, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন রবিবার যেসব পিঁয়াজ রপ্তানির জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, শুধু ওইগুলোর বিপরীতে পিঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিতে পারে। একই সঙ্গে ওপারে প্রায় দুই শতাধিক ট্রাক আটকা পড়ে আছে। ১০ হাজার মে. টন পিঁয়াজের এলসি খোলা রয়েছে। এগুলোর বিপরীতেও পিঁয়াজগুলো দেওয়ার জন্য তাদের অনুরোধ জানিয়েছি। এ বিষয়ে তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন কিন্তু অনুমতি দিচ্ছি ও দিব বলে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। গতকালও পিঁয়াজ আসেনি। শনিবার থেকে আসতে পারে।

বেনাপোল : গতকাল সকাল থেকে বেনাপোল কাস্টমস এবং বন্দরের লোকজন চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকলেও মেলেনি ভারত থেকে পিঁয়াজ আসার কোনো আভাস। তবে আমদানি ঋণপত্র বা এলসিতে মূল্য বৃদ্ধি করা হলে ভারত বাংলাদেশে পিঁয়াজ রপ্তানি করবে বলে বেনাপোলের একজন আমদানিকারক জানিয়েছেন। ভারতীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী টেলিফোনে জানান, ইতিপূর্বে ৩০০ মার্কিন ডলারে যেসব এলসি দেওয়া ছিল, সেসব এলসির পিঁয়াজ রপ্তানির সিদ্ধান্ত জানতে গতকাল দিল্লিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। শনিবার নাগাদ একটা সুখবর পাওয়া যেতে পারে। এদিকে বেনাপোলের আমদানিকারক রফিকুল ইসলাম রয়েল জানান, পিঁয়াজ বন্ধ ঘোষণার আগে যেসব আমদানিকারক ৩০০ ডলারে এলসি দিয়েছে, শুধুমাত্র সেই এলসিগুলো ৭৫০ ডলার করা হলে ভারত পিঁয়াজ রপ্তানি করবে এমন একটি খবর তিনি শুনেছেন।

বরিশাল : প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে পিঁয়াজের দাম কেজিতে ৯ থেকে ১২ টাকা কমেছে। গত বুধবার বরিশালের পাইকারি বাজারে ৮৬ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দেশি পিঁয়াজ প্রকারভেদে গতকাল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বুধবার ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ভারতীয় পিঁয়াজের দামও গতকাল কেজি প্রতি ৯ টাকা কমেছে। গতকাল পাইকারি বাজারে ভারতীয় পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা দরে। তবে খুচরা বাজারে এখনো দেশি পিঁয়াজ ৯০ টাকা এবং ভারতীয় পিঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পিঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো বরিশাল নগরীর পিঁয়াজপট্টিতে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানকালে বিভিন্ন আড়তের পিঁয়াজ ক্রয়-বিক্রয়ের মেমো যাচাই করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে বড় ধরনের কোনো ব্যবধান না পাওয়ায় কাউকে জরিমানা করা হয়নি। এ সময় পিঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে আড়তদারদের সতর্ক করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর