শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনার ভ্যাকসিন

পে-উইদাউট পে উভয় পন্থায় এগোচ্ছে বাংলাদেশ

মানিক মুনতাসির

করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) ভ্যাকসিন পেতে পে-উইদাউট পে উভয় পন্থায় এগোচ্ছে বাংলাদেশ। যদিও কোনো প্রতিষ্ঠান বা দেশই এখনো নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন উৎপাদনের শতভাগ নিশ্চয়তায় পৌঁছতে পারেনি। এ জন্য ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সম্ভাব্য দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ইতিমধ্যে অনেক দেশই ভ্যাকসিন কেনার চুক্তিও করে ফেলেছে। বাংলাদেশও এসব দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কভিডের ভ্যাকসিন কিনতে ইতিমধ্যে আট হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে অর্থ বিভাগ।

সেই সঙ্গে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী অক্সফোর্ড, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগও করছে বাংলাদেশ। আবার তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো (নিম্নমধ্যম আয়ের) হিসেবে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাবে, যার তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে। জাতিসংঘের আর্টিকেল অনুযায়ী, যেসব দেশের মাথাপিছু আয় চার হাজার ডলারের নিচে সেসব দেশ এ ধরনের মহামারীর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন পাবে। তবে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী কোনো প্রতিষ্ঠান বা দেশই বিনা পয়সায় কাউকে ভ্যাকসিন দেয় না। দেবেও না। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএসএইড, যুক্তরাজ্যের সহায়তা সংস্থা ইউকেএইড, বিশ্বব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ডিএফআইডিসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী বা অর্থায়নকারী কোনো প্রতিষ্ঠান বা দেশ এসব দেশকে অনুদান কিংবা সহায়তা হিসেবে ভ্যাকসিনের মূল্য পরিশোধ করে থাকে। সে ক্ষেত্রে সহায়তাদানকারী প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা দেশ উৎপাদনকারী বা বিপণন প্রতিষ্ঠানকে মূল্য পরিশোধ করবে। কভিডের ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এমন নিয়মই কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জানা গেছে, অনেক দেশ তাদের পাবলিক বাজেট থেকে ভ্যাকসিনের জন্য অর্থের জোগান দিয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশসহ ৯০টি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের জন্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমুনাইজেশনস (জিএবিআই) কোভাক্স অ্যাডভান্স মার্কেট কমিটমেন্টের (এএমসি) স্বেচ্ছাসেবী অনুদানের মাধ্যমে সহায়তা করবে। এর আওতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রাথমিকভাবে এসব দেশের ২০ শতাংশ লোককে ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। বর্তমানে সরকার বিভিন্ন জটিল রোগের জন্য ভ্যাকসিনের দামের ১০ শতাংশ প্রদান করে এবং বাকি খরচ জিএভিআই বহন করে থাকে। এদিকে কভিডের ভ্যাকসিনের জোগান পেতে ১৫ সদস্যের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে সরকার। উচ্চপর্যায়ের এ কমিটি ভ্যাকসিন ক্রয়, অর্থের সংস্থান ও বিনা পয়সায় পাওয়ার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে সরকারের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দেবে। এই গ্রুপের নেতৃত্ব দেবে স্বাস্থ্য পরিষেবা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব। এই ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য রাখা হয়েছে অর্থ বিভাগ, পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ইআরডি, এলজিডি, স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিশ্বব্যাংক, ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউএসএইড, ডিএফআইডি ও আইসিডিডিআরবি। ওয়ার্কিং গ্রুপের কয়েক দফা কর্মপরিধিও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভ্যাকসিন এবং যে কোনো নতুন পরিকল্পনা অনুমোদন, প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান সম্ভাব্য উৎস সম্পর্কে ধারণা দেওয়া; কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে তা নির্ধারণ করা এবং নতুন ভ্যাকসিন প্রবর্তনের জন্য জাতীয় নীতিকাঠামো তৈরি করা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রত্যেক দেশই নিজেদের অবস্থান থেকে চেষ্টা করছে ভ্যাকসিন তৈরি ও ভ্যাকসিন পাওয়ার। যে কোনো ভ্যাকসিনের মানব দেহে প্রয়োগের আগে সেটা নিরাপদ কিনা এবং কার্র্যকর কিনা সেটা ঠিক করা হয়। এখানেও তাই হচ্ছে। এজন্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এর লাইসেন্স দেবে। আবার বিপণনের জন্যও অনুমোদন লাগবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও এর অনুমোদন দিতে হবে। সর্বশেষ যে দেশ তার জনসাধারণের জন্য এটা ব্যবহার করবে সে দেশকেও এর অনুমোদন দিতে হবে। তিনি বলেন, এরপর আসে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির বিষয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি দেশের ২০ শতাংশ মানুষ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন পাবেন। এ ক্ষেত্রে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে থাকেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এখানে বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে জিএভিআইর অর্থায়নের মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলোর ভ্যাকসিন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে, যা থেকে বাংলাদেশও এ সুবিধা পাবে বলে জানান তিনি। এদিকে কভিডের ভ্যাকসিন উৎপাদনে এগিয়ে গেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, চীনের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, রাশিয়া, আমেরিকায় ফাইজার ও মডার্না অ্যাডভান্স স্টেজে আছে। জুলাই মাসেই এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বাংলাদেশ। তারা আশ্বস্ত করেছে, তারা ভ্যাকসিন পেলে নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দিতে পারবে। অন্যান্য দেশের যেসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন উৎপাদনে এগিয়ে আছে তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ চলছে। এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করা হয়েছে। সরকার এখন পর্যন্ত চার দেশের কাছে ভ্যাকসিন বিষয়ে তথ্য জানতে চিঠি দিয়েছে। দেশ চারটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন এবং রাশিয়া। তবে কারও কাছ থেকেই ফিরতি জবাব এখনো পাওয়া যায়নি। কেবল চীন বাংলাদেশে তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল দিতে চাইলেও অজানা কারণে তা এখনো সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য করোনার টিকা নিশ্চিত করতে ১৩ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিশ্বের কোন দেশ থেকে কোন প্রক্রিয়ায় ভ্যাকসিন আনা হবে তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সময়মতো অর্থ সরবরাহের কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কোন দেশের টিকা অধিক কার্যকর ও সহজলভ্য হবে সেটি জানতে কাজ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ভ্যাকসিন দেশের নাগরিকদের বিনামূল্যে দেওয়া হবে, নাকি আর্থিক মূল্য ধার্য করা হবে এবং কারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন পাবেন সে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ভ্যাকসিন আসার আগেই এ বিষয়ে গাইডলাইন দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, যা এই ওয়ার্কিং গ্রুপই নির্ধারণ করবে।

সর্বশেষ খবর