বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রথম ভার্চুয়াল অধিবেশনে বিশ্ব নেতারা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে শুরু হওয়া এ অধিবেশনের কয়েক শ বৈঠকে নিজ নিজ দেশ থেকে ভিডিওবার্তার মাধ্যমে অংশ নিচ্ছেন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং মন্ত্রীরা। এর মাধ্যমে করোনা মহামারীর কারণে বৈশ্বিক পরিবর্তনের মধ্যে নতুন এ ঘটনার সাক্ষী হতে যাচ্ছে বিশ্ব। বাংলাদেশ থেকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন বৈঠকে। বিশ্বের অন্যান্য নেতার মতো যুক্তরাষ্ট্রে থেকেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও জাতিসংঘের এবারের অধিবেশনে ভার্চুয়ালি ভাষণ দেবেন।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশের জাতিসংঘ মিশন সূত্র জানান, করোনাভাইরাস মহামারীর কথা বিবেচনায় নিয়ে গত জুনেই ভার্চুয়ালি সাধারণ অধিবেশন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংকটের কারণে বিশ্বনেতাদের সশরীরে অংশগ্রহণ সম্ভব নাও হতে পারে ধারণা করে প্রস্তুতি নেওয়ার নিদের্শ দেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। পরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি নাইজেরিয়ার তিজানি মুহাম্মাদ-বন্দে সদস্য দেশগুলোর কাছে চিঠি দিয়ে ভার্চুয়ালি আয়োজনের কথা জানান। সে চিঠিতে জানানো হয়, ‘২২ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর চলতি বছরের অধিবেশনে বিশ্বনেতাদের আগে থেকে রেকর্ডকৃত ভাষণ সম্প্রচার করা হবে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটের একটি ভাষণ অধিবেশন শুরুর কমপক্ষে পাঁচ দিন আগে অবশ্যই জাতিসংঘে পাঠাতে হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের হলমঞ্চ থেকে ভাষণ সম্প্রচার বা পাঠ করার সময় প্রতি দেশের মিশনের একজন করে কূটনীতিক সরাসরি অধিবেশনে অংশ নিতে পারবেন।’ এ নির্দেশনা অনুসরণ করেই শুরু হয়েছে এবারের অধিবেশন। মোট ৮০টির বেশি বৈঠক ও সেশনে অংশ নিচ্ছেন বিশ্বনেতারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, কভিড-১৯-সংক্রান্ত স্বাস্থ্য বিধিমালা অনুসরণ করে জাতিসংঘের ইতিহাসে এই প্রথম ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে সদস্য রাষ্ট্রসমূহ নিজ নিজ দেশ থেকে এবারের সভায় অংশগ্রহণ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকেই ১ অক্টোবর পর্যন্ত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সাতটি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এর মধ্যে গতকাল (মঙ্গলবার) ভোর ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সূচনাপর্বে বক্তব্য দিয়েছেন। আর মূল বক্তব্য দেবেন ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায়। ওই বক্তব্যেই তিনি বিস্তারিতভাবে বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরবেন। রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও জাতিসংঘ অধিবেশনের মূল বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যা তুলে ধরবেন। এ ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে কভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ, এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সাফল্য ও অগ্রগতি, নারী উন্নয়ন ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অনুসরণীয় কার্যক্রম, দারিদ্র্য বিমোচনে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ দমন ও মাদকের বিস্তার রোধ, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, গণতন্ত্র ও সুশাসনের ধারা অব্যাহত রাখা; সর্বোপরি বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের অবদানের বিষয়ে বিশ্ববাসীকে অবহিত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানা যায়, বিশ্বের বৃহত্তম কূটনৈতিক সমাবেশ হচ্ছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন। জাতিসংঘ ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ সংস্থার সাধারণ পরিষদের অধিবেশন কখনো বাতিল করা হয়নি। তবে দুবার স্থগিত করা হয়েছিল। এর প্রথমটি আর্থিক সংকটের কারণে ১৯৬৪ সালে এবং দ্বিতীয়টি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে হামলার কারণে। বিশ্বনেতাদের এ সম্মেলনের ফাঁকে তাদের মধ্যে আরও কয়েক শ সভা হয়ে থাকে। এসব সভার মধ্যে অনেক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও থাকে। তবে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে অধিবেশন হওয়ায় এবার কোনো সাইডলাইন বৈঠক হবে না।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর