বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

স্বাধীন কমিশন গঠনসহ ১০ সুপারিশ টিআইবির

পরিবারতন্ত্রের কাছে জিম্মি পুরো ব্যাংকিং খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে দুর্বলতার কারণে ঋণখেলাপি আর পরিবারতন্ত্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত। এতে সৃষ্টি হয়েছে জনগণের অর্থ লুটপাটের। জনগণের অর্থ লুটপাটকারী ও তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়া বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের চাপের মুখে প্রায় অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ব্যাংকিং খাতের এই পরিস্থিতি উত্তরণে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সুস্থ ও নিরাপদ ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিচালনায় ১০ দফা সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠন করার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে। গতকাল টিআইবির ব্যাংকিং খাত তদারকি ও খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশ ব্যাংকের সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়। টিআইবির এই গবেষণায় গত কয়েক বছরে খেলাপি তদারকিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি কাঠামো এবং নেতৃত্বের দুর্বলতার নানা দিক তুলে ধরা হয়।

ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।  তিনি বলেন, ব্যবসায়িক চাপে সরকারের জিম্মি অবস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে দুর্বলতার কারণে ঋণখেলাপিরা জনগণের অর্থ লুটপাটের সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জনগণের আমানত তদারকিসহ সুরক্ষার দায়িত্ব। তারা এখন জনগণের অর্থ লুটপাটকারীদের চাপের ফলে প্রায় অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে  পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের কার্যক্রম যেমন ফিন্যান্সিয়াল  রেগুলেশন প্রণয়ন, অফসাইট তদারকি, খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনার অনসাইট তদারকি, সমন্বিত তদারকি নামমাত্র রয়েছে কাগজে-কলমে। তদারকি কার্যক্রমে বাহ্যিক প্রভাব ও সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা প্রকট। একদিক থেকে ঋণখেলাপি, অন্যদিক থেকে ঋণখেলাপি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টিকারী রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মহলের নিয়ন্ত্রণ এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিকতা লাভ করেছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে কিছু পরিবারের হাতে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আইন লঙ্ঘন করে বিভিন্ন ব্যাংকে একাধিক ঋণখেলাপি পরিচালক বিদ্যমান থাকার নজিরও লক্ষ্য করা যায়। ব্যাংকের পরিচালক ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তির পারস্পরিক  যোগসাজশের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করেছে। এসব ঋণের বিপুল পরিমাণ অংশ পরবর্তীতে খেলাপি হয়ে যায়। প্রতিবেদনে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলো হলো ১. ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ ও ব্যাপক অনিয়মে জর্জরিত ব্যাংকিং খাত সংস্কারের জন্য এ খাত-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন করতে হবে ২. ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১’ এর ৪৬ ও ৪৭ ধারা সংশোধন করে বাংলাদেশ ব্যাংককে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির পূর্ণ ক্ষমতা দিতে হবে ৩. বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সদস্য, গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ ও অপসারণ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট লিখিত নীতিমালা করতে হবে; যেখানে নিয়োগ অনুসন্ধান কমিটির গঠন, দায়িত্ব-কর্তব্য এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকবে ৪. বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে তিনজন সরকারি কর্মকর্তার স্থলে বেসরকারি প্রতিনিধির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে ৫. ব্যাংকিং খাতে পরিবারতন্ত্র কায়েমে সহায়ক সব ধারা সংশোধন বা বাতিল করতে হবে ৬. রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগে অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে একটি প্যানেল তৈরি এবং সেখান থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগের বিধান করতে হবে ৭. আদালত কর্তৃক স্থগিতাদেশপ্রাপ্ত খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশনিং রাখার বিধান প্রণয়ন করতে হবে ৮. বারবার পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করে খেলাপি হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে ৯. ব্যাংক পরিদর্শনের সংখ্যা ও সময়কাল বৃদ্ধি করতে হবে এবং ১০. সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর