বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
উত্তরখানে সোহাগ হত্যা

টিভি সিরিয়াল দেখে অপরাধের কৌশল রপ্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরখানে কলেজশিক্ষার্থী সোহাগ (২০) হত্যায় ‘দ্য বস’ গ্যাংয়ের টিম লিডার হৃদয়সহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতার অন্যজন হলো মাহবুবুল ইসলাম রাসেল ওরফে কাটার রাসেল (২০)। সোহাগ হত্যায় এই দুজন প্রধান আসামি। র‌্যাব বলছে, গ্রেফতার দুজন উত্তরখান এলাকার ‘রগকাটা’ গ্রুপেরও সদস্য। ২৭ আগস্ট এক রিকশাচালককে মারধরের প্রতিবাদ করায় এরা সোহাগকে খুন করে। শিগগিরই দেশত্যাগের বন্দোবস্ত করেছিল ওরা।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন র‌্যাব-১ অধিনায়ক  শাফী উল্লাহ বুলবুল এ তথ্য জানান। এর আগে গতকাল ভোরে দক্ষিণখানের মোল্লার টেক নামক স্থানে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও আট রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব-১ অধিনায়ক শাফী উল্লাহ বুলবুল জানান, টেলিভিশনের বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সিরিয়াল দেখে এরা অপরাধ ও আত্মগোপনের বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করে। এ কারণে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাদের ধরতে। অবশেষে ম্যানুয়ালি তাদের গ্রেফতার করা হয়। তবে তারা শুরু থেকেই দেশ ত্যাগ করার চেষ্টা করছিল। তবে কভিড-১৯-এর কারণে সীমান্তে অনেক কড়াকড়ি থাকায় পেরে ওঠেনি তারা। তবে শিগগিরই দেশ ত্যাগ করার বন্দোবস্ত করেছিল তারা। কাটার রাসেল জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। হৃদয়ের নেতৃত্বাধীন কিশোর গ্যাং গ্রুপ দ্য বস বা হৃদয় গ্যাং নামেও পরিচিত। এই গ্যাংয়ের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তাদের সঙ্গে চলাফেরা করতে কোনো ঝামেলা হলেই সে পায়ের রগ কাটার ভয় দেখাত। সোহাগকে হত্যার পর গ্রেফতারের ভয়ে সে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে ছিল। কোনো স্থানে দু-এক দিনের বেশি অবস্থান করত না। একপর্যায়ে সে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয় জানায়, সে ষষ্ঠ শ্রেণির পড়াশোনা বাদ দিয়ে উত্তরায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করে। তার সঙ্গে রাসেল, নাদিম, সানি, মেহেদী, সাদ, সাব্বিরসহ এলাকার উঠতি বয়সের কিশোরদের সুসম্পর্ক থাকায় সবাইকে নিয়ে কিশোর গ্যাং ‘দ্য বস’ প্রতিষ্ঠা করে এবং এর নেতৃত্ব দেয়। এই গ্যাংয়ের লিডার হিসেবে তার নামে এটি হৃদয় গ্যাং নামেও বহুল পরিচিত। এই গ্রুপের সদস্য ১০-১২ জন। ঘটনার পর থেকে সবাইকে আত্মগোপনে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে সেও আত্মগোপন করে। প্রসঙ্গত, ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টায় উত্তরখানের বাজাবাড়ী খ্রিস্টানপাড়া রোডে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হয় উত্তরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগ। সেদিন রিকশার চাকা থেকে কাদা ছিটকে হৃদয়ের গায়ে লাগলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে রিকশাচালককে মারধর করতে থাকে। রিকশাচালককে এভাবে মারতে দেখে এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করে সোহাগ। এতে হৃদয় ও রাসেল কল করে তাদের রগকাটা গ্যাংয়ের অন্যান্য সদস্য নাদিম সানি, মেহেদী, সাদ, সাব্বিরসহ বেশ কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে আসে এবং সবাই মিলে ভিকটিম সোহাগের ওপর চড়াও হয়। এ সময় নাদিমের কাছে থাকা ধারালো ছোরা দিয়ে রাসেল আঘাত করে সোহাগকে। এতে সোহাগ গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর নিহতের বড় ভাই উত্তরখান থানায় মামলা করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর