বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সৌদি আরব প্রবাসীদের আকামার মেয়াদ বাড়ল

বিমান পরিচালনার অনুমতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রবাসীদের কাজের অনুমতিপত্র বা আকামার  মেয়াদ আরও ২৪ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া রবিবার থেকে শুরু হবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম নিজের ফেসবুকেও এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরব এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, আকামার মেয়াদ আরবি সফর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত (মানে গতকাল থেকে আরও ২৪ দিন) বর্ধিত করা হয়েছে। প্রবাসীরা যেন নির্ধারিত সময়ে সৌদি আরবে ফিরতে পারেন সেজন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে রিয়াদ এবং জেদ্দায় সপ্তাহে ৪টি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়ার কথাও জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি জানান, ঢাকার সৌদি আরব দূতাবাসের ভিসা অফিস রবিবার থেকে খোলা থাকবে। সেখানে কভিড-১৯ সংক্রান্ত নতুন নিয়মাবলি মেনে কনস্যুলার সেবা দেওয়া হবে। সৌদি আরবে ফেরার জন্য গত কয়েক দিন ধরেই বিক্ষোভ করছিলেন প্রবাসীরা। গতকাল বেলা ১১টার দিকে কয়েক হাজার সৌদি প্রবাসী রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ঘেরাও করেন। তারা মন্ত্রণালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। পরে সৌদি প্রবাসীদের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে যান। আধা ঘণ্টা ধরে বৈঠকের পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, তিনি প্রবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে সোমবার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। সোমবারের পর তিনি এ বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে জানাবেন, যোগ করেন তিনি। ক্ষুব্ধ ও হতাশ সৌদি প্রবাসীরা গতকাল টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন। গতকাল বিক্ষোভের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেন তারা। পরে প্রবাসীদের আকামা-ভিসার মেয়াদ তিন মাস বাড়াতে সৌদি আরব সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয় সৌদি সরকার। এরপর সৌদি এয়ারলাইনসকে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট চালানোর অনুমতি দেয় বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ বিমানকে ফ্লাইট চালানোর অনুমতির বিষয়টি আটকে ছিল। প্রবাসীরা বলছেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে না যেতে পারলে তাদের চাকরি থাকবে না, ভিসায়ও জটিলতা হবে। এ কারণে গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সোনারগাঁও হোটেল সংলগ্ন সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইনসের টিকিট বুকিং অফিসের সামনে প্রবাসীরা বিক্ষোভ করেন। বৈশ্বিক মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে লকডাউনের কারণে বিভিন্ন দেশের প্রায় লাখখানেক বাংলাদেশি দেশে এসে আটকা পড়েছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ৭৫ শতাংশই আছেন মধ্যপ্রাচ্যে। এককভাবে শুধু সৌদি আরবেই আছেন ২০ লাখ বাংলাদেশি। বাংলাদেশের প্রবাসী আয় আহরণের শীর্ষ দেশও সৌদি আরব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চে ফ্লাইট চলাচল বন্ধের আগ পর্যন্ত সাড়ে চার লাখ লোক বিদেশ থেকে এসেছেন। এর মধ্যে অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ প্রবাসী কর্মী। সৌদি আরব থেকে ৪১ হাজার ৬৬১, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩৭ হাজার ৩২১, মালয়েশিয়া থেকে ১৮ হাজার ৯৪২, কাতার থেকে ১৩ হাজার ৮৬৫, সিঙ্গাপুর থেকে ১২ হাজার ৩৪২, ওমান থেকে ১১ হাজার ৭৮৪, কুয়েত থেকে ৬ হাজার ১২০, বাহরাইন থেকে ৩ হাজার ৫৫৪, ইতালি থেকে ২ হাজার ৭০৩ এবং মালদ্বীপ থেকে ১৫০৯ জন দেশে এসেছিলেন। এদের বড় অংশই প্রবাসী কর্মী যারা আবার কাজে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। অন্যদিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এপ্রিল থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পযন্ত ১ লাখ ৪১ হাজার প্রবাসী দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৬৫৪ জনই ফিরেছেন সৌদি আরব থেকে। বিমানের বিশেষ ফ্লাইট : মহামারীকালে যারা সৌদি আরবে কর্মস্থলে ফিরতে পারছিলেন না, তাদের জন্য দুটি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর একটি ফ্লাইট জেদ্দার উদ্দেশে এবং ২৭ সেপ্টেম্বর আরেকটি ফ্লাইট রিয়াদের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে বলে বিমানের একটি সূত্র বলেছে। এ দুটি ফ্লাইটে কেবল তারাই যেতে পারবেন, যাদের রিটার্ন টিকিট কেটে রাখা ছিল। ১৬ ও ১৭ মার্চ জেদ্দা ও রিয়াদের বিমানের রিটার্ন টিকিটধারীদের জন্য বিশেষ ফ্লাইট দুটি চালানো হবে।

সর্বশেষ খবর