শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাতেও থেমে নেই মাদক

সচল সব রুট, কৌশল বদলাচ্ছে কারবারিরা, নৌপথ ট্রেনে বাসে ঢাকায় আসছে জড়িত প্রভাবশালীরা

সাখাওয়াত কাওসার ও মাহমুদ আজহার

প্রাণঘাতী করোনাতেও সচল মাদকের সব রুট। এখনো নানা কৌশলে ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদক দেশে ঢুকে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করে অভিযান পরিচালনা করলেও থামানো যাচ্ছে না মাদকের ব্যবসায়ীদের। দ্রুতই তারা বদলাচ্ছে রুট। তবে সম্প্রতি সীমান্তবর্তী পার্বত্য জেলা এবং নৌপথকেই অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মনে করছে তারা। মাঝেমধ্যে ছোট-বড় কিছু চালান ধরা পড়লেও আড়ালেই থেকে যাচ্ছে নেপথ্য মদদদাতারা। উদ্বেগের বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানকারীদের চোখ পড়েছে বাংলাদেশের দিকে। ৯ সেপ্টেম্বর শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১২ কেজি ‘এমফিটামিন’ ধরা পড়ার পর বিষয়টি নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে সরকারের উচ্চমহলকে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাহিদা থাকলে সরবরাহ হবেই। আর সীমান্তে মাদক প্রবেশ বন্ধ করা না গেলে তা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সীমান্ত দিয়ে একটি চালান দেশে প্রবেশের পর তা ভাগ হয়ে বিভিন্ন রুটে চলে যায়। তাই চাহিদা কমানোর দিকে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আবার বাংলাদেশ যাতে কোনোভাবেই মাদকের আন্তর্জাতিক চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার না হতে পারে সেজন্য কর্তৃপক্ষকে সতর্ক হতে হবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সড়ক, রেলপথে মাদক এলেও এখন নৌ এবং আকাশপথ ব্যবহার হচ্ছে মাদক পরিবহনে। মাঝেমধ্যেই আকাশপথে আসা বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও মাদকসহ হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহ আমানত (রহ.) বিমানবন্দরে ধরাও পড়ছে। তবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে ফাঁকি দিতে ঘন ঘনই রুট বদলাচ্ছে তারা। অপেক্ষাকৃত নিরাপদ রুট হিসেবে পার্বত্য জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়িকে বেছে নিয়েছে তারা। নাইক্ষ্যংছড়ির বিষয়ে এরই মধ্যে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। দুর্গম এলাকা হওয়ায় সেখানে খুব একটা অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ওই এলাকা দিয়ে মিয়ানমানের ইয়াবা ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসে। র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চাহিদা থাকার কারণেই দেশে মাদক ঢুকছে নানাভাবে। অনেক সময় ডিমান্ড চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে আমরা জানতে পারছি। তবে এটা সত্য যে, মাদক দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের আগেই তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। নইলে দেশে ঢুকে যাওয়ার পর তা অনেক ভাগ হয়ে নানা পথে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মাদকের বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ পরিকল্পনার প্রয়োজন। যতসব চালান ঢুকে তার অল্প সংখ্যকই আমরা ধরতে পারি। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানের কারণে দ্রুতই মাদক ব্যবসায়ীরা রুট পরিবর্তন করে। বিদেশে মাদক পাচারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিগুলোকে আরও সচেতন হতে হবে। র‌্যাব সব সময়ই মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতিতে অবিচল। সূত্র বলছে, বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসনাবাদ, তাকি, বশিরহাট, স্বরূপনগর, বাদুরিয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, বনগাঁও, পেট্টাপোল, হেলেঞ্চা, ভবানীপুর, রানাঘাট, অমৃতবাজার, বিরামপুর, করিমপুর, নদীয়া, মালদাহ, বালুরঘাট, আওরঙ্গবাদ, নিমতিতাসহ সীমান্ত সংলগ্ন প্রায় সব এলাকা দিয়ে ১৫টি পয়েন্টে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট এবং দিনাজপুরে মাদক ঢুকছে। ভারতের আসাম এবং  মেঘালয়ের বাংলাদেশ ঘেঁষা এলাকাগুলোর ৪টি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোনায়। বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্ত দিয়ে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা এবং মিজোরামের চারটি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এবং ফেনীতে। এ ছাড়াও ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর হয়ে নওগাঁয় ফেনসিডিল পাচারের নতুন রুটের সন্ধান পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া কক্সবাজার, কক্সবাজার উপকূলবর্তী সমুদ্রপথ এবং টেকনাফসহ সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে। ইয়াবা এখন গভীর সমুদ্র দিয়ে ভারতেও যাচ্ছে। ভারত থেকে বিভিন্নপথে এসব ইয়াবা বাংলাদেশে আসছে। বেশির ভাগ ইয়াবা তৈরি হয় মিয়ানমার-চীন সীমান্তের শান এবং কাচিন প্রদেশে। মিয়ানমারের সাবাইগন, তমব্রু, মংডুর মতো ১৫টি পয়েন্ট দিয়ে টেকনাফের সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, ধুমধুমিয়া, কক্সবাজার হাইওয়ে, উখিয়া, কাটাপাহাড়, বালুখালী, বান্দরবানের ঘুমধুম, নাইক্ষ্যংছড়ি, জেলেপাড়ার মতো অর্ধশত স্পট দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে।

২০ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন অভিযান চালিয়ে বড়ঢিল থেকে প্রায় ২৫/৩০ নটিক্যাল মাইল উত্তর-পশ্চিমে গভীর সমুদ্রে একটি বিশেষ অভিযান চালিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকা থেকে পাঁচ লাখ পিস ইয়াবাসহ সাতজন পাচারকারীকে গ্রেফতার করে। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর ৫৬ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফে নৌকা উদ্ধার করা হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর আলুর বস্তার ভিতরে ২০ হাজার ইয়াবাসহ ৩ জনকে আটক করা হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর ১৪ হাজার ইয়াবাসহ ২ জন আটক। ১৯ সেপ্টেম্বর হিমছড়িতে ১ লাখ ৪০ হাজার ইয়াবা আটক করা হয়।  

বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের গোয়েন্দা প্রধান লে. কমান্ডার হায়াত ইবনে সিদ্দিক বলেন, আমাদের আওতাধীন এলাকাগুলোর চেকপয়েন্টে সম্প্রতি টহলের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। বড় বড় সাফল্যের বাইরেও মাদকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঘাটে বেশ কিছু ছোট ছোট সফলতাও এসেছে।

সম্প্রতি নৌ-পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম বলেন, নৌপথে মাদকের বিষয়ে আমাদের ইন্টেলিজেন্স অব্যাহত আছে। তবে এখন পর্যন্ত নৌপথকে নতুন রুট হিসেবে যেভাবে বলা হচ্ছে ঠিক সেরকম মনে হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মাদকের রুটে বাংলাদেশ! : উদ্বেগের বিষয় হলো, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইয়াবা পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে টার্গেট করেছে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানিরা। এরই মধ্যে একাধিক ইয়াবার চালান বিদেশে পাঠানো হয়েছে বলে ধারণা করেছেন গোয়েন্দারা। ৯ সেপ্টেম্বর স্যাম্পল হিসেবে জিন্সের প্যান্টের কার্টনের অভ্যন্তরে বিশেষভাবে তৈরি করা চেম্বারে ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা মূল্যের ১২ কেজি অ্যামফিটামিন আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস ‘ফেডএক্স’-এর মাধ্যমে পাচার হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ায়। তবে এর আগেই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তা জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। সংশ্লিষ্টরা এরই মধ্যে জানতে পেরেছেন, ডিএইচএলকে দেশীয় ইউনাইটেড এক্সপ্রেস নামের একটি প্রতিষ্ঠান কুরিয়ার দিয়েছিল। ইউনাইটেডকে দিয়েছিল নেপচুন এন্টারপ্রাইজ নামের স্থানীয় একটি কুরিয়ার কোম্পানি। নেপচুনকে কে এই কার্টন দিয়ছিল তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছেন তারা। ডিএনসির পাশাপাশি আরও কয়েকটি সংস্থা এ বিষয়ে তদন্ত করছে। 

ডিএনসির পরিচালক (অপারেশন) ডিআইজি মাসুম রব্বানী বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব চ্যানেলে জানতে পেরেছি অস্ট্রেলিয়ায় এর আগেও একটি মাদকের চালান গেছে। সেখানে ধরাও পড়েছে। অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে অবহিত করেনি। এবারের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা শিগগিরই দেশি-বিদেশি কুরিয়ার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বসব। যে কোনো মূল্যে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে তাদের বলা হবে। আমরা চাই তারা আরও স্বচ্ছতা নিয়ে আসুক। কারণ এর সঙ্গে দেশের ইমেজ জড়িত। আমরা এই দেশকে মাদক পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করতে দিতে পারি না।

ডিএনসির (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, দুই বছর আগেও সৌদিতে ইয়াবা পাচার করার চেষ্টাকালে একজন ধরা পড়েছিল বিমানবন্দরে। প্রায় কাছাকাছি সময়ে একজন মহিলা মধ্যপ্রাচ্যে ইয়াবা পাচারের সময় ধরা পড়েছিল।

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, এনজিওর গাড়ি, পিকনিকের গাড়ি, রোহিঙ্গা, বন্দরের বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক, প্রাইভেট কারসহ আকাশপথে যাত্রীবাহী বিমান এবং কার্গো বিমানে বা কারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্টিকার লাগিয়ে, নারীদের বোরকা বা অন্তর্বাসের মাধ্যমে, সাগরপথে মাছ ধরার ট্রলারসহ নানা কায়দায় ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক পাচার করে আসছে মাদক ব্যবসায়ীরা।

জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এই মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে জয়পুরহাট ও হিলি সীমান্তের প্রায় পাঁচ শতাধিক মাদক কারবারি। প্রতিদিনই ভারত থেকে জয়পুরহাটের সদর এবং পাঁচবিবি দিনাজপুরের হিলি, বিরামপুর এবং নওগাঁর ধামুইরহাট পত্নীতলা এবং সাপাহার সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, ট্রেপান্ডল, পেন্ট্রডল প্যাথেডিন ইনজেকশনসহ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য দেশে আসছে। এ ছাড়া সীমান্তের আটাপাড়া, কয়া, হাটখোলা, চেঁচড়া, কড়িয়া পাগলা দেওয়ান দিয়ে প্রতিদিনই ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজাসহ নেশাজাতীয় ট্যাবলেট ঢুকছে। হিলি বিওপির অধীনে- জলাপিপট্টি, ফুটবল মাঠ, কালিমন্দির, হিলি সিপি বিওপির অধীনে চেকপোস্ট এলাকা, ডাববাগান, বদরপট্টি, ধরন্দা, বাসুদেবপুর বিওপির অধীনে হিন্দুমিশন, নওপাড়া, হাড়ীপুকুর, মোংলা বিওপির অধীনে মোংলা, নন্দিপুর, ঘাসুড়িয়া, চৌঘরিয়া, বিরামপুর সীমান্তের ঘাসুড়িয়া বিওপির অধীনে চৌঘরিয়া, নামা গোবিন্দপুর, বাসুপাড়া, দাউদপুর বিওপির অধীনে দাউদপুর, চন্ডিপুর, দক্ষিণ দাউদপুর, ভাইগড় বিওপির অধীনে খিয়ার মাহমুদপুর, ডাঙ্গা, ভাইগড়, নিশিবাপুর, শিবপুর  সীমান্তে এখন নতুন করে শুরু হয়েছে মাদক চোরাকারবারি। সহজলভ্য ও লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় বিজিবি ও পুলিশের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যকে নিয়মিত চাঁদা দিয়ে অনায়াসে পাচার করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, জয়পুরহাট সীমান্ত এলাকায় মাদকের নিয়ন্ত্রণ করছে পাঁচবিবি উপজেলার রামচন্দ্রপুরের আতাউর, বাগজানার নয়ন, পশ্চিমখোদ্দ গ্রামের আপেল, ধরঞ্জীর আবুল বাশার, নন্দাইলে কামরুজ্জামান, সীমান্তপুরে সাখাওয়াত এবং নন্দাইলের হাবিবুর রহমান। এদের বিরুদ্ধে মাদকের একাধিক মামলা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের সঙ্গে গোপন আঁতাতে এখনো মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। নওগাঁ জেলার ধামুইরহাট এবং পত্নীতলা সীমান্ত দিয়ে বেশি ঢুকছে ফেনসিডিল এবং গাঁজা। ধামুইরহাট উপজেলার বস্তাবর, খরমপুর, শিমুলতলী, চ-ীহারা এবং পত্নীতলা উপজেলার শিহারা, তালান্দর এবং সাপাহার উপজেলার খনজনপুর বর্ডার দিয়ে প্রতিদিনই শত শত বোতল ফেনসিডিল এবং গাঁজা আসছে।

যশোর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, নিত্য-নতুন কৌশলে ওপার থেকে আসা ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকের সঙ্গে আসছে অস্ত্রও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায়ই ধরা পড়ছে চোরাকারবারিরা। মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারও হচ্ছে তাদের কাছ থেকে।

চৌগাছার মাসিলা সীমান্তের একজন চোরাকারবারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি কয়েক দিন পরপর এক-দেড় হাজার বোতল ফেনসিডিল আনতে বেনাপোল যাই। সেখান থেকে কাভার্ড ভ্যান বা ট্রাকে করে সেগুলো ঢাকায় পাঠানো হয়। সীমান্ত থেকে ফেনসিডিল নিয়ে তিনি এক একদিন এক এক পথ ব্যবহার করে সেগুলো বেনাপোল পৌঁছে দেন। তবে কখনই প্রধান সড়ক ব্যবহার করেন না।’

শার্শা সীমান্তের এক চোরাকারবারি বলেন, ভারত থেকে ফেনসিডিল সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেয় ওপারের চোরাকারবারিরা। সেখানে থেকে মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাঙ্কিতে বিশেষ পদ্ধতিতে সেগুলো পরিবহন করে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেন তিনি। একবার এ কাজ করে তিনি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা আয় করেন। সম্প্রতি বিজিবি এই কৌশল ধরে ফেলায় তারা এখন নতুন কৌশলের সন্ধানে আছেন।

সূত্র জানায়, করোনার সময় চোরাকারবারিরা সকালে কৃষকদের সঙ্গে মিশে সীমান্ত এলাকার মাঠগুলোতে যায়। পরে সন্ধ্যায় বা শেষ রাতের দিকে এক একজন কাপড়ের মধ্যে করে ৩০০-৪০০ বোতল ফেনসিডিল নিয়ে কৃষকের মতো হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে। এরপর এসব ফেনসিডিল নিত্য-নতুন কৌশলে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলায় গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ ব্যবসায়ীসহ কতিপয় জনপ্রতিনিধি দেশে মাদক ও অস্ত্রের প্রবেশে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে পাচারের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ওপারে ভারতের সীমান্তবর্তী মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় একাধিক ফেনসিডিল কারখানা এবং বিহারের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র তৈরির জন্য অনেক লেদ কারখানা গড়ে উঠেছে। এ নিয়ে পতাকা বৈঠকে একাধিকবার বিএসএফকে জানানো হয়েছে। 

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, করোনাকালের আগে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের শক্ত অবস্থানের কারণে মাদকের প্রভাব ও বিস্তার প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছিল। তবে মার্চ থেকে করোনা ইস্যু কাজে লাগায় মাদক ব্যবসায়ীরা। পঞ্চগড় সদর উপজেলার সীমান্ত গ্রাম ধাঙ্গী, বাঙ্গালপাড়া, রতিœবাড়ী, ভিতরগড়, মিড়গড়, ময়নাগুড়ি, চাকলা, আটোয়ারী উপজেলার তড়েয়া, বারোঘাটি, ফকিরগঞ্জ, বোদা উপজেলার রানীগঞ্জ, কালিগঞ্জ, ময়দানদিঘী, ভাওলাগঞ্জ, বড়শশি এবং দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহটি, সোনাহার, কালিয়াগঞ্জ বর্তমানে মাদকের মূল আস্তানা। তেঁতুলিয়া উপজেলার সীমান্ত গ্রাম সিপাহীপাড়ায় পাওয়া যাচ্ছে সব ধরনের মাদক। এ ছাড়া ভজনপুর, বুড়াবুড়ি, মাঝিপাড়া, শালবাহান এলাকায় চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। সীমান্তবর্তী কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে নিয়মিত আসছে এসব মাদক।

মাদকবিরোধী সংগঠন ড্রাগ ফ্রি বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আতিকুজ্জামান শাকিল জানান, মাদকে ইয়াবা, ফেনসিডিল এবং নেশা জাতীয় ইনজেকশনে সয়লাব তেঁতুলিয়া উপজেলা। এই এলাকায় কিশোর এবং তরুণ শিক্ষার্থীরা মাদকে জড়িয়ে পড়ছে।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, জেলার ১৩৮ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে সদর উপজেলার পদ্মশাখরা, হাঁড়তদাহ, ভোমরা, লক্ষ্মীদাঁড়ি, কুশখালী, বৈকারি, ঘোনা, কেড়াগাছি, তৈলুইগাছা ও কলারোয়া উপজেলার কাকডাঙ্গা, চান্দুড়িয়া, গাড়াখালী, হিজলদি, ভাদিয়ালী সীমান্ত দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক চোরাচালান হচ্ছে। এ ছাড়াও দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর নিমতলার ঘাট, ভাতশালা, চকশ্রীপুর, টাউনশ্রীপুর বসন্তপুর, দেবহাটা সদর, সুতিপুর ও কালিগঞ্জের খানজিয়া সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে চোরাচালানি পণ্যের পাশাপাশি ভারত থেকে আসছে নানা ধরনের মাদক।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর