রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা ৮১ শতাংশ

ছয়টি হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ, কমছে টেস্ট, কমেনি মৃত্যু

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রোগীশূন্য হয়ে পড়ছে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলো। গতকাল সারা দেশে করোনা হাসপাতালের সাধারণ শয্যার ৮১ শতাংশ এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের শয্যা (আইসিইউ) ৪৬ দশমিক ৪৯ শতাংশই ফাঁকা ছিল। রোগী না থাকায় ছয়টি হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

দেশে প্রতিদিনই কমছে করোনা শনাক্তে নমুনা টেস্টের সংখ্যা। গতকাল টেস্ট হয়েছে ১০ হাজার ৭৬৫টি। করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ১০৬ জনের। সংক্রমণের হার ছিল ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। ধীরে ধীরে কমছে সংক্রমণের হার। তবে মৃত্যুহার এখনো আশঙ্কাজনক। গতকাল মারা গেছেন ৩৬ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোগী কমে যাওয়ায় আমরা ১২টি কভিড হাসপাতালকে নন-কভিড হাসপাতালে রূপান্তর করার প্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। এর মধ্যে ছয়টি হাসপাতালে করোনা সেবা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রোগী না থাকায় এই হাসপাতালে অনেক শয্যা ফাঁকা থাকত। এ জন্য করোনা চিকিৎসা বন্ধ করে সাধারণ চিকিৎসা দেওয়া হবে। করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত অন্য হাসপাতালে আক্রান্তরা চিকিৎসা নিতে পারবেন।’ স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৮৩ হাজার ৯৬৭ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ৬৬৯ জন, যা বর্তমানে চিকিৎসাধীন রোগীর ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ। বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৮১ হাজার ২৯৮ জন। অর্থাৎ ৯৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বাড়িতে। হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা থাকলেও যাচ্ছেন না রোগীরা। গত মাস থেকে করোনা টেস্টেও দেখা দিয়েছে ধীরগতি। ২২ আগস্ট নমুনা টেস্ট হয়েছে ১১ হাজার ৩৫৬টি; শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ২৬৫ জন; শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ; মারা গেছেন ৪৬ জন; মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২৩ আগস্ট নমুনা টেস্ট হয়েছে ১০ হাজার ৮০১টি; শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৭৩ জন; শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ২৭ শতাংশ; মারা গেছেন ৩৪ জন; মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২৪ আগস্ট করোনা টেস্ট হয়েছে ১৩ হাজার ৩৮২টি; শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৮৫ জন; সংক্রমণ হার ১৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ; মারা গেছেন ৪২ জন; মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২৫ আগস্ট করোনা টেস্ট হয়েছে ১৪ হাজার ১৫৩টি; শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫৪৫ জন; শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ; মারা গেছেন ৪৫ জন; মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২২ সেপ্টেম্বর নমুনা টেস্ট হয়েছে ১৪ হাজার ১৬৪টি; করোনা পজেটিভ হয়েছেন ১ হাজার ৫৫৭ জন; সংক্রমণ হার ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ; মারা গেছেন ২৮ জন; মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। ২৩ সেপ্টেম্বর নমুনা টেস্ট হয়েছে ১৪ হাজার ১৫০টি; শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৬৬ জন; সংক্রমণ হার ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ; মারা গেছেন ৩৭ জন; মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২৪ সেপ্টেম্বর নমুনা টেস্ট হয়েছে ১২ হাজার ৯০০টি; শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৪০ জন; সংক্রমণ হার ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ; মারা গেছেন ২৮ জন; মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২৫ সেপ্টেম্বর নমুনা টেস্ট হয়েছে ১২ হাজার ৪৭৩টি; শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৮৩ জন; সংক্রমণ হার ১১ দশমিক ০৯ শতাংশ; মারা গেছেন ২১ জন; মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গতকাল করোনা টেস্ট হয়েছে ১০ হাজার ৭৬৫টি; শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ১০৬ জন; শনাক্তের হার ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ; মারা গেছেন ৩৬ জন; মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। দুই মাসের করোনা টেস্ট ও সংক্রমণ বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, ১০ হাজার থেকে ১৪ হাজারের মধ্যে ওঠানামা করেছে করোনা নমুনা টেস্ট। তবে কমেছে সংক্রমণ হার। ২২ আগস্ট সংক্রমণ হার ছিল ১৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ২২ সেপ্টেম্বর সংক্রমণ হার নেমে এসেছে ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশে। ২৩ আগস্ট শনাক্তের হার ছিল ১৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২৩ সেপ্টেম্বর সংক্রমণ হার কমে এসেছে ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশে। তবে কমেনি মৃত্যুহার। ২২ আগস্ট মারা গেছেন ৪৬ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২৩ আগস্ট মারা গেছেন ৩৪ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২২ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন ২৮ জন; মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। ২৩ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন ৩৭ জন; মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, তথ্য অনুযায়ী শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার বেড়েছে।

জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে টেস্ট বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। টেস্ট করে আক্রান্তদের আলাদা করতে হবে। তাহলে একজন থেকে একাধিক ব্যক্তি করোনা সংক্রমিত হতে পারবে না। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, ধীরে ধীরে কমছে টেস্টের সংখ্যা। টেস্ট কম হলে আক্রান্ত, পিক টাইম কিংবা সেকেন্ড ওয়েভ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়।’

শয্যা ফাঁকা : ২২ সেপ্টেম্বর দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যা ছিল ১৩ হাজার ৬১৮টি। হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলেন ২ হাজার ৮১৯ জন। ফাঁকা ছিল ১০ হাজার ৭৭৯টি শয্যা। করোনা রোগীদের নির্ধারিত আইসিইউ ছিল ৫৩২টি, ফাঁকা ছিল ২৩৪টি। ২৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলেন ২ হাজার ৮৪৪ জন, শয্যা ফাঁকা ছিল ১০ হাজার ৭৭৪টি। ২৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলেন ২ হাজার ৬৬৮ জন, শয্যা ফাঁকা ছিল ১০ হাজার ৯৫০টি। আইসিইউতে রোগী ভর্তি ছিলেন ২৮৪ জন, ফাঁকা ছিল ২৪৮টি আইসিইউ শয্যা। ২৫ সেপ্টেম্বর রোগী ভর্তি ছিলেন ২ হাজার ৭৬২ জন, শয্যা ফাঁকা ছিল ১০ হাজার ৮৫৬টি। আইসিইতে রোগী ভর্তি ছিলেন ২৬০ জন, শয্যা ফাঁকা ছিল ২৭২টি। আক্রান্ত রোগীদের ৯৭ শতাংশই চিকিৎসা নিচ্ছেন বাসায়। ফলে রোগী না থাকায় ছয়টি করোনা নির্ধারিত হাসপাতাল বন্ধ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

করোনা আক্রান্ত হুইপ আতিক : জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি জ্বরে ভুগছেন। বর্তমানে ঢাকায় ন্যাম ভবনের সরকারি ফ্ল্যাটে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন।

শুক্রবার রাতে আতিকের করোনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসে। তিনি শেরপুর-১ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য, শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা।

গতকাল হুইপ আতিক সাংবাদিকদের জানান, সংসদ সদস্যদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে তার নমুনা নেওয়া হয়। শুক্রবার রাতে তার করোনা পরীক্ষার ফলাফলে পজিটিভ আসে। সামান্য কাশি ছিল, সেটাও ৮০ ভাগ ভালো হয়ে গেছে। এখন সামান্য জ্বর ছাড়া আর কোনো উপসর্গ নেই। তিনি শেরপুরবাসীসহ দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর