বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
রিফাত হত্যা মামলা

১০ আসামির রায় আজ

মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু, বরগুনা

১০ আসামির রায় আজ

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায় আজ।

বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করবেন। রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ প্রাপ্ত বয়স্ক ১০ আসামির ভাগ্যে কী ঘটছে তা আজ জানা যাবে। ২০১৯ সালের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনী কুপিয়ে হত্যা করেছিল রিফাত শরীফকে। প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯), মো. মুসা (২২), আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল ইসলাম সায়মুন (২১)। ২০১৯ সালের ২৬ জুন সকাল সোয়া ১০টার দিকে কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনী প্রকাশ্যে শাহনেওয়াজ রিফাত ওরফে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন বিকালেই বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ঘটনার পরদিন ২৭ জুন রিফাতের বাবা মো. আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ গ্রেফতার করে এজাহারভুক্ত আসামিদের। রিফাতের ওপর হামলার ছয় দিন পর ২ জুলাই ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় এ মামলার আলোচিত প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড।

রিফাত হত্যাকান্ডের দুই মাস ছয় দিন পর গত বছর ১ সেপ্টেম্বর বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এদের মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক আসামি এবং ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর জন্য ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত চার্জ (অভিযোগ) গঠন করেন। মামলার অন্যতম আসামি মুসা বন্ড এখনো পলাতক। চলতি বছর ৮ জানুয়ারি প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি এ মামলার ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ স¤পন্ন হয়। এর মধ্য দিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ স¤পন্ন করে আদালত। ১৬ সেপ্টেম্বর উভয় পক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণার জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করে আদালত।

নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, ‘বিচার বিভাগের প্রতি আমার আস্থা আছে। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড কামনা করছি।’ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) ভুবন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, রিফাত শরীফ হত্যা মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষ সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পরিচালনা করেছে। এ মামলায় ৭৬ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। এ মামলার জব্দকৃত আলামত, মোবাইল সিডিআর, ভিডিও ফুটেজ, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির মাধ্যমে আসামিরা যে অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তা প্রমাণিত হয়েছে। আসামি পক্ষের আইনজীবী সাইমুল ইসলাম রাব্বি বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপিত যুক্তি-তর্ক আমরা খ-ন করে আদালতে আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। আমরা আদালতে যে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছি, তাতে এ মামলায় আসামিরা ন্যায়বিচার পাবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।’

কী ঘটবে মিন্নির ভাগ্যে : নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্য দিয়ে এ মামলায় সাক্ষী থেকে আসামি করা হয় নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে। এরপর হাই কোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত হন তিনি। রায় প্রকাশের পর কী ঘটবে মিন্নির ভাগ্যে এমন গুঞ্জন এখন সর্বত্র। ২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করা হয় রিফাত শরীফকে। এ সময় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেন, লড়ে যান হত্যাকারীদের সঙ্গে। কিন্তু হত্যাকারীদের ধারালো কোপের আঘাতে গুরুতর জখম হয়ে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই দিনই মৃত্যুবরণ করেন রিফাত শরীফ। হত্যার সময় রিফাতকে বাঁচানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে মিন্নির প্রশংসা করেন অনেকেই। এরপর এ ঘটনায় ২৭ জুন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেখানেও সাক্ষী করা হয় মিন্নিকে।

তদন্তের একপর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির স¤পর্কের প্রমাণ পায়। মিন্নির আগের বিয়ের তথ্য গোপন, মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের সঙ্গে স¤পর্ক বজায় রাখা এবং হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রিফাত হত্যার ২০ দিন পর ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রধান সাক্ষী থেকে মিন্নি আসামি হয়ে যাওয়ায় মামলাটি মোড় নেয় অন্যদিকে। এরপর নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে হাই কোর্ট থেকে বিচারিক কার্যক্রম চলমান থাকা পর্যন্ত জামিনে মুক্ত হন মিন্নি। মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘আদালতের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আমরা শুরু থেকেই বলেছি মিন্নি নির্দোষ। মিন্নির স্বামী রিফাত শরীফ তার বাবার কাছে মৃত্যুর আগে যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতে এমন কিছু কথা বলে গেছেন, যেখানে মিন্নি এ মামলায় একমাত্র সাক্ষী। রিফাত শরীফ মৃত্যুর আগেও বলেছেন, মিন্নি তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন এবং তিনি সাক্ষী। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাকে আসামি করেছেন। আমরা মিন্নিকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছি। আশা করি মিন্নি এ মামলা থেকে অব্যাহতি পাবেন। তারপর বিজ্ঞ আদালত যে সিদ্বান্ত দেবেন তা আমরা মেনে নেব।’ তিনি বলেন, ‘মিন্নিকে অভিযুক্ত করে আদালত রায় দিলে অন্য আসামিদের সঙ্গে মিন্নিকেও কারাগারে যেতে হবে। তবে তেমন কিছু হলে উচ্চ আদালতে মিন্নির পক্ষে আমরা আপিল করব।’ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এম মজিবুল হক কিসলু বলেন, ‘এ মামলায় আটজন আসামি ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। রিফাত শরীফ হত্যায় জড়িত থাকার কথা বলে জবানবন্দি দিয়েছেন মিন্নি নিজেও। এ ছাড়া মোবাইল রেকর্ড এবং মিন্নির সঙ্গে নয়ন বন্ডের বিবাহ ও গোপন সম্পর্কের বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়েছে। এ ঘটনার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী মিন্নি। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ আশাবাদী বিজ্ঞ আদালত এ মামলায় মিন্নিকে অভিযুক্ত করে রায় প্রদান করবেন।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর