বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ভিসা বন্ধে জটিলতায় বিনিয়োগ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণ দেখিয়ে ‘বিজনেস’ ও ‘ইনভেস্টর’ ক্যাটাগরি ছাড়া সব ধরনের ভিসা ইস্যু করা বন্ধ রয়েছে। ‘বিজনেস’ ও ‘ইনভেস্টর’ ক্যাটাগরিতেও বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো ভিসা ইস্যু করছে না। ওই দুই ক্যাটাগরিতে ভিসা প্রত্যাশীদের ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে ‘ভিসা অন-অ্যারাইভাল’ নিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু এয়ারলাইনসগুলো ঢাকায় নেমে অন-অ্যারাইভাল ভিসা নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কাছে টিকিট বিক্রি করছে না। এতে করে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের শিল্প বাণিজ্য। বিশেষ করে বড় শিল্পগুলোর বিনিয়োগ হুমকিতে পড়েছে। অন্যদিকে সরকারি মেগা প্রকল্পগুলোতেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিদেশি দক্ষ কর্মীরা যোগ দিতে পারছে না বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে। পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও দেশের অর্থনীতির স্বার্থে অনতিবিলম্বে এই অচলাবস্থার নিরসন হওয়া উচিত। বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় করে যে কোনো মূল্যে দ্রুত ভিসা চালু স্বাভাবিক করা প্রয়োজন। এ জন্য প্রয়োজনে ফ্লাইটে যাত্রা শুরুর আগে ও পরে কভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিশ্চিত করা যেতে পারে।

জানা যায়, ‘বিজনেস’ ও ‘ইনভেস্টর’ ক্যাটাগরিতে ভিসা উন্মুক্ত হওয়ার সুফল না পাওয়ার পাশাপাশি ‘ইনস্টলেশন, মেইনটেন্যান্স বা সুপারভাইজারি’ কাজের জন্য বাংলাদেশের স্বল্প মেয়াদে যে ‘ই-১’ ভিসা ব্যবস্থা আছে তাও কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বন্ধ। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান যন্ত্রপাতি আমদানির পর গত কয়েক মাস ধরে বিদেশি টেকনিক্যাল জনবল আসার অপেক্ষায় আছেন। নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের টেকনিক্যাল জনবল দিয়ে যন্ত্রপাতি বসিয়ে উৎপাদন শুরু করে বুঝিয়ে দিয়ে যায়। এখন বিদেশি টেকনিক্যাল জনবল বাংলাদেশে তাদের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে সেবা দিতে এ দেশে আসতে চান। কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় তারা আসতে পারছেন না। এর ফলে অনিশ্চয়তায় পড়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ।

একটি শিল্প গ্রুপের একজন কর্মকর্তা জানান, ভিসা জটিলতার কারণে আমাদের পাঁচটি প্রজেক্টের ‘ইরেকশন কমিশনিংয়ের’ কাজ গত মার্চ মাস থেকে বন্ধ হয়ে আছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্লান্ট হলো এডিবল অয়েল ফিলিং প্লান্ট। জার্মানি থেকে আনা যন্ত্রপাতি দিয়ে ওই প্লান্টে গত মার্চ মাসেই উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের জন্য জার্মানি, ইতালি থেকে টেকনিক্যাল জনবল আসতে পারছে না। ফলে এখনো যন্ত্রসামগ্রী বসানোই সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, এই প্রকল্পগুলো সঠিক সময়ে সম্পন্ন করতে না পারার কারণে আমাদের বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। বিশেষ করে, অচিরেই আমাদের ব্যাংক ঋণের কিস্তি শুরু হয়ে যাবে এবং তা পরিশোধ করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।

জানা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ‘বিজনেস ভিসা’ ও ‘ইনভেস্টর ভিসা’ চালু আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো জার্মানি বা অন্যান্য দেশ থেকে লোক আসতে পারছে না। তারা যখন জার্মানিতে বাংলাদেশের ভিসার জন্য দূতাবাসে আবেদন করছে, তখন দূতাবাস সেখান থেকে ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে না। দূতাবাস থেকে জানানো হচ্ছে তাদের ভিসা ইস্যুর এখতিয়ার নেই। বাংলাদেশে বিমানবন্দরে এসে অন-অ্যারাইভাল ভিসা নিতে হবে। পরে সেই ভিসাকে ‘বিজনেস ভিসা’ বা ‘ইনভেস্টর ভিসায়’ রূপান্তর করে নিতে হবে। কিন্তু জার্মানি ও ইতালি থেকে এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশে ভিসা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা সম্পর্কিত কাগজপত্র ছাড়া টিকিট ইস্যু করছে না। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, অন-অ্যারাইভাল ভিসার নিশ্চয়তার কোনো চিঠি ইস্যু করার পদ্ধতি নেই।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যত মেগাপ্রকল্প চলছে এর কোনোটিই বিদেশি টেকনিক্যাল জনবল ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই যে কোনো মূল্যে অনতিবিলম্বে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে ভিসা ইস্যু শুরু করা প্রয়োজন। এ জন্য করোনা মহামারীর পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুনভাবে ভাবতে হবে। দূতাবাসগুলোতে সরকারি পর্যায় থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতি ও নতুন বাস্তবতা বিবেচনায় সাময়িকভাবে ‘অন-অ্যারাইভাল ভিসা’ প্রাপ্তির নিশ্চয়তাসূচক চিঠিও ইস্যু করা যেতে পারে, এতে দেশের শিল্পকারখানাগুলো সচল হবে। সার্বিকভাবে তা এ দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং জীবন-জীবিকায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন- এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশসহ অন্যান্য অনেক দেশ করোনার মাঝে অসুবিধায় রয়েছে। আমাদের সরকার করোনা পাশে রেখে অর্থনীতি সচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের অনেক শিল্পে বিদেশি কারিগরি জনবলের সাহায্য দরকার হয়। তারা বাংলাদেশে আসতে না পারায় অনেক ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন। আমরা চাই- এ বিষয়ে সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। দ্রুত বিদেশিরা আসতে পারলে শিল্প মালিকরা করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মুনতাকিম আশরাফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যবসা ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়ে ভিসা চালু করা উচিত। বিদেশিদের আসা দরকার। না হলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিনিয়োগের জন্য সরকার চেষ্টা করলেও, আমরা সফল হতে পারব না। এক্ষেত্রে দ্রুত দূতাবাসগুলোর সক্রিয় ভূমিকা দেখতে চাই।

সর্বশেষ খবর