বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ড. কামাল হোসেনের বিশ্রামে যাওয়া উচিত

মাহমুদ আজহার

ড. কামাল হোসেনের বিশ্রামে যাওয়া উচিত

মোস্তফা মহসীন মন্টু

প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনকে রাজনীতি থেকে বিশ্রামে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু। তিনি বলেন, স্যারের (ড. কামাল) এখন অনেক বয়স হয়েছে। শারীরিকভাবেও দুর্বল। তার পায়েও সমস্যা আছে। এখন তার পরিবারকে বেশি সময় দেওয়া উচিত। নাতি-নাতনিকেও সময় দেওয়া জরুরি। এটা স্যারের জন্যই ভালো। আমি স্যারকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি। এখনো আমি তার সামনে গলা উঁচু করে কথা বলি না। স্যারের ভালোর জন্যই এটা বলছি। 

গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে ফোনালাপে এসব কথা  বলেন গণফোরামের একাংশের এই অন্যতম শীর্ষ নেতা। মোস্তফা মহসীন মন্টু আগামী ২৬ ডিসেম্বর কাউন্সিল প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক।

আলাপচারিতায় মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ড. কামাল হোসেন ও ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বে গণফোরামের দুই সদস্যের কমিটিও অবৈধ। কারণ, প্রেসিডিয়ামসহ কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিলে বর্ধিত সভার মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হয়। সেখানে জেলা পর্যায়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরাই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেন। কিন্তু বর্ধিত সভা না করে শুধু প্রেস রিলিজের মাধ্যমে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা যায় না। এটা অবৈধ। গণফোরামের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ড. কামাল হোসেন ঘর থেকে বের হন না। সাংগঠনিক সফরও করেন না। সাধারণ মানুষের সঙ্গেও মেলামেশা করেন না। ড. কিবরিয়াকে কী কারণে তিনি বসালেন সেটাও বুঝলাম না। ড. কিবরিয়া বাংলা বলতেও পারেন না, মানুষের সঙ্গেও মিশতে পারেন না। রাজনীতি করতে হলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। মানুষের সুখ দুঃখে পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা ছাত্র জীবন থেকে সব ধরনের দুর্যোগে মানুষের পাশে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। এটা আমাদের নেশার মতো ছিল। করোনার মহাদুর্যোগেও আমি সংগঠনের ছেলেদের নিয়ে কাজ করেছি। সাবেক এমপি মন্টু বলেন, এত বড় জাতীয় ক্রাইসিসে ড. কামাল এ সময়ে কোনো মিটিং করেননি। মানুষের পাশেও দাঁড়াননি। গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী, ৯০ দিন পরপর কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং ডাকার কথা। কিন্তু সর্বশেষ মিটিং হয় ২০১৮ সালে, আমি যখন সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। সম্মেলনের পর আর কোনো মিটিং হয়নি। অনেকবার বলা হয়েছে ড. কামালকে। এ কারণে কয়েকজনকে বহিষ্কারও করেন ড. কামাল। তার কাছে জানতে চাইলে বলেন, বহিষ্কারের বিষয় আমি তো জানি না। পরে তিনি ‘সরি’ও বলেন। কিন্তু তাদের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়নি। এরপর যে সম্মেলন করা হলো তা এক বছরের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সম্মেলন। পার্টির শূন্য পদগুলো পূরণ করার কথা ছিল। তিনি সম্মেলনেও তাই বলেছিলেন। কিন্তু দুই বছর হয়ে গেলেও তিনি নড়েন-চড়েন না। একটি মিটিংও ডাকেন না।

মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়া হলো। ওই কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। এটা তারা ভালোভাবে নেননি। তাই কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর ড. কামাল ও ড. কিবরিয়ার নেতৃত্বে এডহক কমিটি করা হলো। কিন্তু ওই এডহক কমিটিই তো অবৈধ। গঠনতন্ত্র মোতাবেক সম্মেলন ছাড়া যদি কোনো কমিটি পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন বা সংযোজন করা হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন নিতে হয়। যেহেতু কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তাই একমাত্র বৈধতা থাকে বর্ধিত সভার। জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের বৈধতা থাকে। তাদের মত নিয়ে কমিটি করা যেতে পারে। কিন্তু ড. কামালরা সেটা করেননি। এ কারণে এই কমিটিও গঠনতান্ত্রিকভাবে অবৈধ। তারা এসব না করে শুধু পত্রিকায় একটা বিবৃতি পাঠান। এটাই তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম। আওয়ামী যুব লীগের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, গত নির্বাচনে বড় ভূমিকা পালন করে গণফোরাম। ড. কামালকে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাও বানানো হলো। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছিলেন সদস্য সচিব। এরপরই ছিলাম আমি। বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার সামনে তিনি দাঁড়ালেন। জনসভা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই তাকে নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয়। মোটামুটি ভালোই চলছিল। এরপর নির্বাচনে আমাদের দুজন পাস করলেন। তাদের সংসদে পাঠানোর জন্য তিনিই উদ্যোগী হলেন। আমরা তখন না করি। এক পর্যায়ে সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে আমি পার্টি থেকে বহিষ্কারও করি। তারপর মোকাব্বিরকে বললাম, তুমি যাবে। কিন্তু বিএনপি যাক, তারপরে তুমি যাবে। নইলে আমাদের ওপর দোষ পড়বে। কিন্তু তিনি ধৈর্য ধরলেন না। সংসদে চলে গেলেন। এ নিয়েও অনেক কথা হয়। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ড. কামাল হোসেন আমাকে একাধিকবার বলেন, কমিটি নিয়ে বসবেন। কিন্তু আজও বসেননি। এর আগেও একাধিকবার বলেছিলাম, কিন্তু তিনি বসেন না। আমরা বর্ধিত সভায় তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তিনি আসেননি। তবে বর্ধিত সভায় বিভিন্ন জেলা থেকে ২৮৩ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ৫১ জেলার শীর্ষ নেতারা এসেছেন। বাকিগুলোতে নানা কারণে না আসতে পারলেও প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন। কেউ কেউ অসুস্থ ছিলেন। করোনার কারণে আসতে পারেননি। আমাকে আহ্বায়ক করে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি করা হয়েছে। তিন মাস পর সম্মেলনের ভিতর দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি হবে। এই সম্মেলনে গণফোরামের সবাই আমন্ত্রিত। আমরা ড. কামাল হোসেনকেও বলব, আপনি আসেন। কর্মীরা যদি চায় ড. রেজা কিবরিয়াও আসতে পারবে।

আগামীতে গণফোরামে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসা হবে জানিয়ে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসা হবে। সেখানে আমি বা ড. কামাল হোসেন থাকতে হবে, এটা মনে করি না। আমরা নিউ জেনারেশনের নেতৃত্ব চাই। আমরা পেছন দিক থেকে তাদের সহযোগিতা করব। জাতীয় পর্যায়ে এমন নেতৃত্ব আনা হবে, যারা তৃণমূলে গ্রহণযোগ্য, ক্লিন ইমেজের। তাদের সমন্বয়ে কমিটি হবে। আমাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কোনো আকাক্সক্ষা নেই।

ড. কামাল সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ নেতা দাবি করে তিনি আরও বলেন, আমার কাছে ড. কামাল স্যার আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তার বুদ্ধি-পরামর্শ আমরা নিতে চাই। তিনি যদি সংগঠন করতে চান, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তার সঙ্গে আমরা সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাই না। একটি সংগঠন জাতির নেতৃত্ব দেয়। সেজন্য নতুন ব্লাডের নেতৃত্ব চাই। ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আপনাদের বর্ধিত সভা করাটাই অবৈধ। এমন প্রশ্নে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, এটা স্যারের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু আমরা যদি গঠনতন্ত্রকে ধারণ করি, তাহলে ড. কামাল ও ড. রেজা কিবরিয়ার কমিটির কোনো অস্তিত্বই থাকে না। আমি তাকে সরাসরি অবৈধ বলব না, তিনি নিজেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে পারেন। তার কমিটি কে করে দিল? এটা তো এমনিতেই হতে পারে না।  আমাদের শনিবার জরুরি মিটিং আছে। আমাদের সামনে সম্মেলনের উপ-কমিটি হবে। মতিঝিল পার্টি অফিসে এই মিটিং হবে। এটা আমাদের অফিস। তারা (ড. কামাল হোসেন) এই অফিস ছেড়ে দিয়েছেন। আমরা এখন ভাড়াও নিচ্ছি। গণফোরাম বলতে যা বোঝায়, সেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণেই। এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই।

সর্বশেষ খবর