বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

আদর্শ-লক্ষ্য না থাকায় অপরাধে তরুণরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আদর্শ-লক্ষ্য না থাকায় অপরাধে তরুণরা

ইমেরিটাস অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক ও লেখক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, বরগুনায় এক ভয়ঙ্কর অপরাধে কয়েকজনের মৃত্যুদন্ড হয়েছে। এই অপরাধ শুধু বরগুনায় নয়, পুরো সমাজেই ছড়িয়ে পড়েছে। তরুণ-কিশোরদের সামনে কোনো আদর্শ-লক্ষ্য না থাকায় তারা এ ধরনের ভয়ঙ্কর অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত হচ্ছে। বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয় আসামির ফাঁসির রায়ের পর গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে ফোনালাপে প্রবীণ এই শিক্ষক এ মন্তব্য করেন।

আলাপচারিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, তরুণদের সামনে নেই সুস্থধারার বিনোদন। খেলাধুলা, সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও নেই তারা। তাদেরকে ঘরবন্দী করে ফেলা হয়েছে। গোটা সমাজ ব্যবস্থাই এখন তাদের শত্রু। এ জন্য তাদের সংঘবদ্ধ করে এই সমাজটাকে বদলাতে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থানে তরুণ-কিশোররা সংঘবদ্ধভাবে অপরাধ প্রবণতায় ঝুঁকছে এর কারণ কী? আমি মনে করি, পুঁজিবাদী ও ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থা এর জন্য দায়ী।

এই দুই ব্যবস্থা উন্নতি হওয়ার কারণে সবাই মুনাফা বা স্বার্থের জন্য দৌড়াচ্ছে, যেখানে আদর্শ অনুপস্থিত। তারা দুর্নীতিতে জড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতে এখন ভয়ঙ্কর কেলেঙ্কারি ধরা পড়ছে। মুনাফা ও ভোগবাদী অবস্থা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

প্রাবন্ধিক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই তরুণ কিশোররা এক সময় আন্দোলন করত, সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকত। নানা সংগঠন ছিল। খেলাধুলা, গান, নাটকসহ নানা কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকত। এখন কোনো কিছুই নাই। তারা এখন কোনো বিনোদন পায় না। কোনো সামাজিক কর্মকান্ডেও নেই। তারা সব সময় ঘরের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে। মোবাইল ফোন ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তারা পিতা-মাতার কাছেও কোনো আদর্শ শিক্ষা পায় না। তিনি বলেন, এখন হত্যাকান্ড, ধর্ষণের সঙ্গে মাদকাসক্তও জড়িত থাকে। তরুণ-কিশোরদের একটি অংশই মাদকের সঙ্গে যুক্ত। এক সময় তারা সামাজিক-সাংস্কৃৃতিক আন্দোলনে জড়িত থাকত। এখন তারা কিশোর গ্যাং তৈরি করে ভয়ঙ্কর অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। তারা সংঘবদ্ধভাবে মেয়েদের ধর্ষণ করে, মাদকে লিপ্ত হয়, সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি কর্মকান্ডে জড়িত হয়। তারা ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখে।

এক সময়ে কিশোর-তরুণরা অনেক ভালো কাজ করেছে দাবি করে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই তরুণ কিশোররাই ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। কিছুদিন আগেও সড়ক আন্দোলন করেছে। তাদেরকে ভালো কাজে উৎসাহিত করা হয় না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো ছাত্র সংসদ নেই। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড নেই। খেলাধুলা নেই। তখন এই তরুণরা কী করবে। তাদের কোনো কাজ নেই, কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। তখন তারা অপরাধকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, কিশোরদের আবারও কিশোর আন্দোলন করতে হবে। তাদের সংগঠিত করতে হবে। তাদের সুস্থ বিনোদন দিতে হবে। মাদকাসক্ত থেকে বিরত রাখতে হবে। আলোচনা, বিতর্ক, নাটক গানসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত রাখতে হবে। তাদেরকে জ্ঞানের অনুশীলনে আনতে হবে। এটা এখন সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ে আছে। কিশোরদের আন্দোলনে আনতে হবে সমাজ পরিবর্তনের জন্য। পুঁজিবাদী ও ভোগবাদী সমাজে অবক্ষয় ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, এই সমাজ ব্যবস্থা বদল করতে হবে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাই তরুণ-কিশোরদের শত্রু। এই সমাজ ব্যবস্থায় তাদের অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। বর্তমান সমাজের চেহারাই পরিবর্তন করতে হবে। কয়েকজনকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে, যাবজ্জীবন দিয়ে কিংবা কোনো শাস্তি দিয়ে তরুণ-কিশোর অপরাধ থেকে বিরত রাখা যাবে না। পুরো সমাজ ব্যবস্থাটাকেই বদল করতে হবে।

সর্বশেষ খবর