শিরোনাম
শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

৯ মাসে বেড়েছে ধর্ষণ, ক্রসফায়ার ও শিশু নির্যাতন

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন

মাহমুদ আজহার

চলতি বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও তথাকথিত ‘ক্রসফায়ারে’ মোট ২১৬ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে এনকাউন্টারে নিহত হন ১৮৫ জন। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মারা গেছেন ২৭ জন। এ নয় মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৭৫ জন। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৭৬২ আর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ২০৮ জন নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার ৪৩ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী। আর ১৬১ জন নারী হয়েছেন যৌন হয়রানির শিকার। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনজন নারী ও নয়জন পুরুষ নিহত হয়েছেন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গতকাল নয় মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে তাতে এই পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। এতে দেখা যায়, সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা, বিশেষ করে ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নিপীড়ন ও পারিবারিক নির্যাতন ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বরাবরের মতো এই সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যার অনেক ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত নয় মাসে দেশের কারাগারগুলোয় অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মারা গেছেন ৫৮ জন। এর মধ্যে কয়েদি নয়জন, হাজতি ৩৪ জন। এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ বা গুমের শিকার হন চারজন। এর মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন একজন। এ নয় মাসে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন, অ্যাসিড নিক্ষেপসহ নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৩২ জন নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার ২৭৯ আর পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭৪ জন নারী। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যৌতুককে কেন্দ্র করে ১৬৮ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭৩ জন। একই কারণে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৬ জন এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৭ জন নারী। স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন আরও ১২ জন। এ নয় মাসে ১১ গৃহকর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন। বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩২ গৃহকর্মী। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন চারজন এবং আত্মহত্যা করেছেন দুজন। এ ছাড়া অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ২১ নারী। এ নয় মাসে শিশু নির্যাতন ও হত্যার পরিসংখ্যানও খুব উদ্বেগজনক। এ সময়ে ১ হাজার ৭৮ শিশু শারীরিক নির্যাতনসহ নানা সহিংসতার শিকার হয়েছে। হত্যার শিকার হয়েছে ৪৪৫ শিশু। এ ছাড়া ৬২৭ শিশু ধর্ষণ ও ২০টি বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া গণপিটুনিতে মারা গেছেন ৩০ জন। আসক জানায়, এ নয় মাসে পেশাগত কাজ করতে গিয়ে ২০৯ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামে বিজয় টিভির ধামরাই প্রতিনিধি জুলহাস উদ্দিনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪৭টি প্রতিমা ভাঙচুর এবং মন্দির ও পূজামন্ডপে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪২ জন। এ ছাড়া আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একটি বসতঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ নয় মাসে ভারত সীমান্তে নিহত হয়েছেন ৩৯ জন। এর মধ্যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ৩২ আর শারীরিক নির্যাতনে ছয়জন নিহত হন। এ ছাড়া অপহরণের শিকার হয়েছেন ২০ জন। আসক মনে করে, মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে আইনের শাসন ও জবাবদিহি অত্যাবশ্যকীয়। অন্যথায় বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়, এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। করোনার এ সংকটের সময়ে সরকারের কাছে নাগরিকদের সব ধরনের মানবাধিকারের সুরক্ষার দাবি জানিয়েছে আসক। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার দ্রুততার সঙ্গে নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছে সংস্থাটি। আসক জানায়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের এ সংখ্যাগত প্রতিবেদনটি নয়টি জাতীয় দৈনিক, বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও তাদের নিজস্ব উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩৪০ জন নারী ও শিশু। এর মধ্যে ২০ জন গণধর্ষণসহ ১২৯ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। অ্যাসিড নিক্ষেপের শিকার হয়েছে চারজন। এর মধ্যে দুজন শিশু। অগ্নিদগ্ধের শিকার পাঁচজন। এর মধ্যে মারা গেছেন দুই নারী। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৪ জন।

সর্বশেষ খবর