শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

ব্যস্ততা বাড়ছে শাহজালালে

১০ দেশে যাত্রী চলাচল, ২৫ শতাংশ আসন শূন্য রাখার নির্দেশনা, ফ্লাইট বাড়িয়েছে বিমান বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যস্ততা বাড়ছে শাহজালালে

আকাশপথে যাত্রী চলাচলে বিধিনিষেধ শিথিল হতেই বাংলাদেশ থেকে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট। গতকাল পর্যন্ত ১০টি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ বিমান। করোনার ধাক্কা সামলে যাত্রীর পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় এয়ার অপারেটর, বিমানবন্দর এবং যাত্রীদের জন্য আপডেট নির্দেশিকা জারি করেছি। যেসব ফ্লাইট আবেদন করেছে তাদের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’

করোনা দুর্যোগের বাস্তবতা মেনেই জীবন ও জীবিকার তাগিদে স্বাভাবিক হচ্ছে দৈনন্দিন কর্মকা-। ক্রমান্বয়ে আগের চিত্রে ফিরছে দেশের বিমানবন্দরগুলো। গতকাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে ছিল ব্যস্ততার চিত্র। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহেই দেশের অভ্যন্তরের রুটগুলোয় শুরু হয়েছে ফ্লাইট চলাচল। এরপর বাড়তে থাকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও। গতকাল দুপুরে শাহজালাল বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, লাইন দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করছেন যাত্রীরা। গেটে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস সরবরাহ করছেন বিভিন্ন কোম্পানির কর্মীরা। দুবাইগামী যাত্রী গোলাম মোর্শেদ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ফ্লাইট বন্ধ থাকায় ব্যবসার কাজে যেতে পারছিলাম না। এরপর ফ্লাইট চালু হলেও নানা ভোগান্তি ছিল। এতে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফ্লাইট পরিচালনা করলে যাত্রী ও প্রতিষ্ঠান উভয়েই উপকৃত হবে।’ সিভিল এভিয়েশনসূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার (আইএটিএ) বিধি অনুসরণ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য যে কোনো ফ্লাইটে ২৫ শতাংশ আসন শূন্য রাখতে অপারেটরদের আগে দেওয়া নির্দেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফ্লাইট অপারেটররা যাত্রীদের মুখে লাগানো ফেস শিল্ড সরবরাহ করবে এ শর্তে এখন শেষ দুটি সারি বাদে সব আসনে যাত্রী বহন করতে পারছে। গতকাল পর্যন্ত ১০টি দেশের সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। দেশগুলো হলো- চীন, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, কাতার, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, ওমান ও সিঙ্গাপুর। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান ১৬টি রুটের মধ্যে লন্ডন, আবুধাবি, দুবাই, কুয়ালালামপুর, গুয়াংজু, হংকং, রিয়াদ, জেদ্দা, মাসকাট, দাম্মাম ও সিঙ্গাপুরে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করছে। এ ছাড়া বিমান বর্তমানে বিভিন্ন রুটে বিশেষ ও কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বিমান বর্তমানে আন্তর্জাতিক রুটে প্রতি সপ্তাহে দুটির বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

কাতার এয়ারওয়েজ প্রতি সপ্তাহে দোহা-ঢাকা-দোহা রুটে চারটি নির্ধারিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সৌদি অ্যারাবিয়া এয়ারলাইনস প্রতি সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এমিরেটস দুবাই-ঢাকা-দুবাই রুটে সপ্তাহে নয়টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। শিগগিরই আরও ফ্লাইট বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। এয়ার অ্যারাবিয়া ঢাকা থেকে আবুধাবি ও ঢাকা-শারজাহ রুটে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এ ছাড়া তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটেও সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ইতিহাদ এয়ারওয়েজ সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। যাত্রীর অভাব ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে বিমান সংস্থা বিমান চলাচল স্থগিত করা সত্ত্বেও তারা ফ্লাইট শুরু করেছে।

ফ্লাই দুবাই সংস্থাটি বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে প্রতি সপ্তাহে যথাক্রমে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। টার্কিশ এয়ারলাইনস ২ জুলাই থেকে ইস্তাম্বুল-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সংস্থাটি বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস, এয়ার এশিয়া, চাইন সাউদার্ন, মালিন্দো এয়ারলাইনস ঢাকা থেকে সপ্তাহে একটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। মালদিভান এয়ারলাইনস ঢাকা থেকে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস, গালফ এয়ার, ওমান এয়ার, সালাম এয়ার, জাজিরা এয়ারওয়েজ ঢাকা থেকে সপ্তাহে দুটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। তবে ওমান এয়ার ও সালাম এয়ার প্রতি সপ্তাহে চট্টগ্রাম থেকে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। থাই এয়ারওয়েজ প্রাথমিকভাবে ১ আগস্ট থেকে প্রতি সপ্তাহে পাঁচটি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। দেশীয় এয়ারলাইনস ইউএস-বাংলা বর্তমানে সপ্তাহে গুয়াংজু ও দোহায় দুটি ও ঢাকা-মাসকাট রুটে একটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এ ছাড়া ঢাকা-সিঙ্গাপুর রুটেও ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে তারা। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস ২০ অক্টোবর থেকে প্রতি সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে।

সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব যাত্রীর কভিড-১৯ সনদ থাকতে হবে না। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট যাত্রীর গন্তব্য দেশ যখন এটি চাইবে তখনই ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক হবে।’ বৈধ ভিসায় বাংলাদেশে আসা বিদেশি নাগরিকদের ভ্রমণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে একটি মেডিকেল সনদ (ইংরেজি অনুবাদসহ) নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশি নাগরিকের বৈধ সনদপত্র থাকলেও তাদের ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইন করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর