শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

সিলেটে কেন বারবার সন্ত্রাস

বেরিয়ে আসছে আড়ালের নামগুলো

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে কেন বারবার সন্ত্রাস

সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারনামীয় সব আসামি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গণধর্ষণের এ ঘটনায় সারা দেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। গণধর্ষণকারী ছাত্রলীগ ক্যাডাররা নগরীর টিলাগড়কেন্দ্রিক একটি গ্রুপের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা হিসেবে আলোচিত হয় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য নাজমুল ইসলামের নাম। তাদের সরাসরি নেতৃত্ব দেন জেলা যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম। শীর্ষ নেতা হিসেবে এ গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকার। ২০১২ সালে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস থেকে শিবির তাড়াতে গিয়ে আগুন দিয়েছিল ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় একাধিক মামলা হলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সব মামলা থেকে খালাস পেয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। তবে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি যে ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে তার মধ্যে ১০ জন ছাত্রলীগ ও ১৯ জন শিবিরের ছিল। ছাত্রলীগের অভিযুক্তদের প্রায় সবাই ছিলেন রণজিৎ সরকারের অনুসারী।

চলতি বছরের ১১ মে সরকারি খামার থেকে ফ্রিতে ‘পাঁঠা’ (ছাগল) আনতে যান ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী।

‘পাঠা’ না পেয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কাজী আশরাফের ওপর হামলা চালান তারা। এ ঘটনায় অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকারকে প্রধান আসামি করে থানায় মামলা হয়। তবে ছাত্রলীগের এসব অপকর্মের সঙ্গে নিজের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করে আসছেন রণজিৎ সরকার। নিজের বাসা টিলাগড় হওয়ায় ওই এলাকায় কোনো অঘটন ঘটলেই দায় তার ওপর চাপানোর চেষ্টা হয় বলে দাবি করছেন তিনি।

ছাত্রলীগের নানা অপকর্মের কারণে ‘শিক্ষা এলাকা’ হিসেবে পরিচিত টিলাগড় বছরজুড়ে বারবার আলোচনায় আসে। প্রায় তিন বছর আগে টিলাগড়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জের ধরে খুন হন ছাত্রলীগকর্মী তানিম আহমদ। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার সব আসামি ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের অনুসারী। তবে আজাদের দাবি, তার কোনো গ্রুপ নেই। ২৬ বছর আগে ছাত্রলীগের রাজনীতি বাদ দিয়েছেন তিনি। এরপর থেকে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি দেখভালও করেন না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে বিভিন্ন ঘটনায় তার নাম জড়ানো চেষ্টা করা হয় বলে দাবি তার।

টিলাগড়ের পাশর্^বর্তী বালুচর এলাকায় চাঁদাবাজি, জায়গা ও বাসা দখলসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে সরকারদল সমর্থিত একটি গ্রুপ। এ গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপু। টিলাগড় ছাড়াও নগরীর জল্লারপাড়, পীরমহল্লা ও কালিবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকা ঘিরে গড়ে উঠেছে আরেকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কারণে জিম্মি হয়ে পড়েছেন স্থানীয় লোকজন।

নগরীর বৃহত্তর জল্লারপাড় এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ। এ গ্রুপের নিয়ন্ত্রণকর্তা ছিলেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি পীযুষ কান্তি দে। বর্তমানে তিনি কারান্তরীণ। গত বছর জল্লারপাড়ে তার গ্রুপের ক্যাডারদের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন দুই প্রবাসী যুবক।

এ ছাড়া নগরীর পীরমহল্লা এলাকায় চাঁদাবাজি, দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত একটি রয়েছে একটি গ্রুপ। এ গ্রুপটির নিয়ন্ত্রণকর্তা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি, সিটি কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খান। প্রবাসীদের বাসাবাড়ি দখল, বাসা নির্মাণ করতে গেলে চাঁদা দাবিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে গ্রুপটির বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে নগরীর কালীবাড়ি এলাকার সাধারণ মানুষ সবসময় তটস্ত থাকতে হয়। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সরকারদল সমর্থিত দুটি গ্রুপের মধ্যে ওই এলাকায় প্রায়ই সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ গ্রুপ দুটির একটি নিয়ন্ত্রণ করেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সুজেল তালুকদার ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইমরান আহমদ। এ গ্রুপ দুটির কর্মীদের বিরুদ্ধে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে টিলাকাটা ও জায়গা দখলের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নগরীর উপশহর এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ কর্মকা- ও আধিপত্য বিস্তারের সঙ্গে শ্রমিক লীগ নেতা শামীম ইকবাল ও যুবলীগ নেতা জাকিরের নাম বিভিন্ন সময় আলোচিত হয়েছে।

প্রাপ্ত অভিযোগ অনুযায়ী, সিলেটে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া অপকর্মে আতঙ্কিত নগরবাসী। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তবে মাথার ওপর একাধিক ‘গডফাদার’ থাকায় অপকর্মের পর দলীয় প্রভাবে পার পেয়ে যায় তারা। ফলে দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর