রবিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

মানুষের পাশে আছি থাকব : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানুষের পাশে আছি থাকব : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের সংগঠন আওয়ামী লীগ। আর আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে আছে। এটা এই দুর্যোগ করোনা মহামারীর সময়ও প্রমাণ হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের আস্থা বিশ্বাস আমাদের একমাত্র সম্বল। সেটাই আমাদের শক্তি। আমরা মানুষের পাশে আছি, মানুষের পাশে থাকব। গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে আগামী দিনে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে বেশ কিছু সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জনগণের জন্য আত্মত্যাগ করলেও অন্য কোনো দল মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে শুধু সমালোচনা করছে। তিনি বলেন, দলের সাংগঠনিক শক্তিই হচ্ছে সবচেয়ে বড়। আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের সাংগঠনিক শক্তি যে আছে, এই মহামারী মোকাবিলার সময় তারা যখন মাঠে নেমেছে, তখনই সেটা প্রমাণিত হয়েছে। আজকে যে কারণে আমার প্রায় ৫২২ জন নেতা-কর্মী মৃত্যুবরণ করেছে। এই যে এত বড় আত্মত্যাগ, আর কোনো দল বোধহয় করেনি। তারা শুধু লিপ সার্ভিস দিয়েছে। সরকারের সমালোচনাকারীদের পাল্টা সমালোচনা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো প্রাইভেট টেলিভিশন, প্রাইভেট রেডিও দিয়েছি, অনেক পত্রিকা। যে যার মতো আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে বলেই যাচ্ছে। কিন্তু তাদেরকে কিন্তু মাঠের মানুষের পাশে দেখা যায়নি। তারা কেউ আবার বিচার করে আওয়ামী লীগের কে, কতটুকু করল আর কতটুকু করল না। কিন্তু তারা নিজের আয়না দিয়ে চেহারা দেখে না।’ তিনি বলেন, এই দেশে গরিব মানুষের সেবা করার অনেক লোক, অনেক রকমের প্রতিষ্ঠান, অনেক কার্যক্রম আমরা দেখি। কিন্তু করোনাকালে তো তাদের কোনো কার্যক্রম আমরা দেখিনি। তখন সবাই ঘরে, তখন মানুষের পাশে আর কেউ নেই। মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ ছিল এবং আছে। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন, আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য সব থেকে বেশি কাজ করে। শেখ হাসিনা বলেন, এই বাংলাদেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নতির জন্যই জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সেই স্বাধীনতার সুফল যেন প্রত্যেক মানুষের ঘরে পৌঁছায়, আমরা যেন দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারি, জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এই সংকটকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, খুব বেশি যাতায়াত না করলেও সাংগঠনিক কার্যক্রমগুলো আমাদের একটু অব্যাহত রাখতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের হয়তো সম্মেলন হয়েছে, কিন্তু করোনার কারণে আমরা কমিটিও করতে পারিনি বা কারও খোঁজও নিতে পারিনি। আমার মনে হয়, এখন আস্তে আস্তে আমরা এগুলো করতে পারব।’ আওয়ামী লীগের কাজের বিপরীতে বিএনপি-জামায়াত জোটের ‘অগ্নিসন্ত্রাসের’ কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের ওই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ আমরা দেখেছি। সেগুলো আমরা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। সবাইকে আমরা সহযোগিতা করেছি। যারা ক্ষতিগ্রস্ত আমরা এখনো তাদের খোঁজ নিচ্ছি। যেখানে যতটুকু পারি, তাদের সাহায্য আমরা করে যাচ্ছি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলার কথা বৈঠকে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন সময় আমাদের এসব দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে। এর আগে আমরা দেখেছি, বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস। ব্যাপকভাবে তারা আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। মানুষের ওপর অকথ্য নির্যাতন করেছে। ২০০১ সালে নির্বাচনকালীন থেকে আমরা যদি একটু বিচার করে দেখি, কীভাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, তাদেরকে হত্যা করেছে, নারী নির্যাতন করেছে, পাশবিক অত্যাচার করেছে, ঘরবাড়ি দখল ও পুড়িয়ে দিয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছে, ভূমি অফিস পুড়িয়েছে, বাস-ট্রাক-লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহন পুড়িয়েছে। তাদের ওই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ আমরা দেখেছি। কিন্তু সেগুলো আমরা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। করোনার মধ্যে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা এই অবস্থাতেও যেখানে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি, অনেকে তো মাইনাসে চলে গেছে। তারপরও আমরা কিন্তু ৫ দশমিক ৬-এর কাছাকাছি অর্জন করতে পেরেছি। হয়তো আমরা আরও বেশি করতে পারব। তিনি বলেন, আমরা আমাদের একদিকে দুর্যোগ মোকাবিলা, অপরদিকে আমাদের দেশের অর্থনীতি সচল করা, মানুষের পাশে দাঁড়ানো। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করে তাদের উন্নত জীবন দেওয়া- এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আর এবার নদী ভাঙনে অনেক মানুষের ক্ষতি হয়ে গেছে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত, ভূমিহীন এবং যারা নিঃস্ব হয়ে গেছে তাদেরকে সাহায্য করার জন্য আমরা বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রেখেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষে আমাদের ঘোষণা, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের আমরা ঘরবাড়ি তৈরি করে দেব। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ব্যাপকভাবে চলছে। সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম আমরা এক কোটি গাছ লাগাব। কিন্তু আমাদের কৃষক লীগ, আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠন মিলে এক কোটিরও বেশি গাছ ইতিমধ্যে রোপণ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকেও আমরা একই কর্মসূচি নিয়েছি। তিনি বলেন, বৃক্ষরোপণ, সবুজ বেষ্টনী, প্রকৃতি রক্ষা করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কাজেই সার্বিকভাবে একদিকে দুর্যোগ মোকাবিলা করা, অপরদিকে দেশকে সচল রাখা- সব রকমের কাজই আমরা করে যাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর