সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

নিঃস্ব হয়ে ফিরছে প্রবাসীরা

৬ মাসে চাকরি হারিয়ে এসেছে ১ লাখ ৬৮ হাজার, অর্ধেকই সৌদি ও আমিরাত থেকে

জুলকার নাইন

সৌদি আরব থেকে জুলাই মাসে ফেরত এসেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাজল। ভাগ্য বদলের আশায় সৌদি আরব গেলেও সেখানে গিয়ে তাকে কারাভোগ করতে হয়েছে। শেষে তাকে আউটপাস দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। কাজল জানান, বিমানবন্দর থেকে বাড়ি যাওয়ার টাকা আমার কাছে ছিল না। বিভিন্ন সংস্থা থেকে ব্যবস্থা না করলে আমি ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াও পৌঁছতে পারতাম না। এখন কীভাবে সংসার চালাবেন সে চিন্তায় অস্থির কাজল। একই পরিস্থিতি দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ থেকে ফিরতে বাধ্য হওয়া লালমনিরহাটের দুলালের। দালালের মাধ্যমে তিন লাখ টাকা খরচ করে মালদ্বীপ গিয়েছিলেন দুলাল। থাকতে পেরেছেন মাত্র ছয় মাস। দুলাল জানান, মালদ্বীপ গিয়ে কাজ না পেয়ে ঘুরতে হয়েছে প্রায় এক মাস। পরে কনস্ট্রাকশনে কাজ পেলেও যা বেতন পেতাম তা থাকা খাওয়াতেই শেষ হয়ে যেত। এর মধ্যে করোনা মহামারী শুরু হলে কাজ বন্ধ। গত মে মাসে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেশে। এখন ধারের তিন লাখ টাকা শোধ করাই বড় দায় দুলালের। শুধু কাজল বা দুলালের নয়, করোনা মহামারীর মধ্যে সারা বিশ্বের সাধারণ বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকার পরও দেশে ফেরা এক লাখ ৬৮ হাজার বাংলাদেশির প্রায় সবারই এমন নিঃস্ব অবস্থা। এদেশের বেশিরভাগই  সহায় সম্বল হারিয়ে দেশে ফিরেছেন।  কেই মহামারীর কারণে কর্মহীন কিংবা চাকরির চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় দেশে ফিরে এসেছেন। এ ছাড়া কেউ কেউ বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে বা সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফেরত এসেছেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর দলে দলে দেশে ফিরতে বাধ্য হন বাংলাদেশিরা। শুধু  সেপ্টেম্বর মাসেই ফিরে আসেন ৬৩ হাজার ৪৩২ জন। আর মহামারীর শুরু এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর- এই ছয় মাসে ২৮ দেশ থেকে ফিরেছেন এক লাখ ৬৫ হাজার ৬৫৮ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে শুধু সৌদি আরব ও আরব আমিরাত থেকে ফিরেছেন ৮৩ হাজার ৮০৪ জন। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে, কেউ চাকরি হারিয়ে, কিংবা ছুটি নিয়ে দেশে ৩৯ হাজার ১৮৮ জন ফেরত আসেন। প্রয়োজনে আবার ডাকা হবে এমন আশ্বাস দিয়ে  আরব আমিরাত থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে ৪৪ হাজার ৬১৬ জন। কুয়েত থেকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় ফেরত আসেন ৯ হাজার ৯৯৭ জন। ওমান থেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউট পাশের মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে ১০ হাজার ৭১৩ জনকে। বাহরাইন থেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউট পাশের মাধ্যমে এবং অসুস্থ ও চাকরি হারানো ফিরেছেন ৯২১ জন। কাতার থেকে কাজ হারিয়ে ফেরত এসেছেন ১৪ হাজার ৯১১ জন। জর্ডান থেকে গার্মেন্ট শ্রমিকের চুক্তি মেয়াদ শেষ হওয়ায় ফেরত এসেছেন দুই হাজার ১৯৭ জন। লেবানন থেকে অবৈধ অবস্থান করা এবং কাজ হারিয়ে ফেরত এসেছেন পাঁচ হাজার ৮০১ জন। লিবিয়া থেকে প্রতারিত হয়ে ও কাজ হারিয়ে ফেরত আসেন ৩১৫ জন। ইরাক থেকে কাজ হারিয়ে ফিরেছেন আট হাজার ৩২ জন। 

মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে মালয়েশিয়া থেকে কাজ হারিয়ে ফেরত এসেছেন সাত হাজার ৫৬৮ জন। থাইল্যান্ড থেকে কাজ হারিয়ে ফিরেছেন ৩২ জন। মিয়ানমার থেকে কাজ হারিয়ে ফিরে এসেছেন ৩৯ জন। কম্বোডিয়া থেকে কাজ হারিয়ে ফেরত এসেছেন ১০৬ জন। তুরস্ক থেকে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন ছয় হাজার ১৪২ জন। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কাজ হারিয়ে ফিরেছেন ৭১ জন। ভিয়েতনাম থেকে প্রতারিত হয়ে ফেরত এসেছেন ১২১ জন। সিঙ্গাপুর থেকে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ফিরেছেন দুই হাজার ৭৯৪ জন। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ফিরেছেন ১০০ জন। মরিশাস থেকে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ফিরেছেন ৪৫২ জন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালদ্বীপ থেকে চাকরি হারিয়ে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন ১০ হাজার ৪৮৩ জন। শ্রীলঙ্কা থেকে চুক্তি শেষে ফেরত এসেছেন ৫৪৮ জন। এর বাইরে বিভিন্ন কারণে দেশে ফিরেছেন ইতালি থেকে ১৫১ জন, রাশিয়া থেকে ১০০ জন, যুক্তরাজ্য থেকে ৫৩ জন, নেপাল থেকে ৫৫ জন, হংকং থেকে ১৬ জন, জাপান থেকে ৮ জন।

পুনর্বাসনে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ ও সনদের চিন্তা : বিদেশ থেকে নানা কারণে দেশে ফিরে আসা বাংলাদেশিদের পুনর্বাসনের চিন্তা করছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশি কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এ জন্য বিভিন্ন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের মাধ্যমে নাম নিবন্ধন করা করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘অভিবাসী কর্মীদের আর্থ-সামাজিক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ ও পূর্ব দক্ষতার ভিত্তিতে শিক্ষা সনদ প্রদান করা হবে। এ লক্ষ্যে আগ্রহী বিদেশ থেকে ফেরত আসা (প্রত্যাগত) কর্মীদের জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে নাম নিবন্ধনের জন্য অনুরোধ করা হলো’।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর