সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

ট্রাম্পের অসুস্থতা নিয়ে নানা গুঞ্জন

প্রতিদিন ডেস্ক

ট্রাম্পের অসুস্থতা নিয়ে নানা গুঞ্জন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সস্ত্রীক প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তার পরবর্তী অবস্থা নিয়ে সর্বত্র নানা গুঞ্জন চলছে। বিশেষ করে আগামী ৩ নভেম্বর নির্ধারিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে এ গুঞ্জন জোরদার হয়েছে। কারণ, ট্রাম্পের অসুস্থতা কোন পর্যায়ে যাচ্ছে, তিনি অসুস্থতাজনিত কারণে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন কিনা, না পারলে কার হাতে ক্ষমতা যাবে, আবার ট্রাম্প ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে সে নির্বাচনও নির্ধারিত তারিখে হবে কিনা- এসব প্রশ্ন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।

ট্রাম্পের শ্বাসকষ্ট ‘মারাত্মক’ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তিনি সেখানে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। শুক্রবার একটি সূত্র মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএনকে জানিয়েছে, ট্রাম্পের শ্বাসকষ্ট ‘মারাত্মক’ আকার ধারণ করেছে এবং তিনি খুবই ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। ওই সূত্র আরও দাবি করেছে, স্ত্রী মেলানিয়ার চেয়ে ট্রাম্পের অবস্থা অনেক বেশি খারাপ।

এদিকে হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত সতর্কতা ছাড়াই ট্রাম্পকে ওয়াল্টার রিড হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাকে দুর্বল  দেখাচ্ছে, তবে তার মনোবল চাঙ্গা রয়েছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কেইলি ম্যাকএনানি জানিয়েছেন, ‘ডাক্তার ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মোতাবেক ওয়াল্টার রিড হাসপাতাল থেকে ট্রাম্প আগামী কয়েক দিন প্রেসিডেন্টের দাফতরিক কাজ সম্পন্ন করবেন। হাসপাতালে যাওয়ার আগে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি বেশ ভালো বোধ করছেন এবং তেমন কোনো সমস্যা নেই। মেলানিয়াও ভালো আছেন।’ 

৪৮ ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ : গত শনিবার রাতে এক ভিডিওবার্তায় ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন, ‘তিনি হাসপাতালে আসার সময়ে অসুস্থ বোধ করলেও এখন ভালো আছেন।’ তবে একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিন হবে তার জন্য ‘সত্যিকারের পরীক্ষা’। ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ভালো আছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। এদিকে চিফ অব স্টাফ মার্ক মিডোস বলছেন ভিন্ন কথা। তাকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ‘২৪ ঘণ্টা কঠিন সময় পার করেছেন ট্রাম্প। সামনের ৪৮ ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি ঝুঁকিমুক্ত নন। তিনি পুরোপুরি সুস্থতার পথে নেই।’

নির্বাচনের তারিখ কি পিছিয়ে যেতে পারে : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেরে উঠতে সময় নেন- তাহলে ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কী হবে- এমন প্রশ্নে গুঞ্জন চলছে সর্বত্র। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া যাবে কিনা, কে বা কারা এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন- সে প্রশ্নও চাঙ্গা হয়েছে।

এ বিষয়ে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন প্রেসিডেন্ট নিজে করতে পারবেন না। সেটা করতে পারেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা। নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দিতে হলে মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষে এ প্রস্তাবটিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হবে। তবে সমস্যাও রয়েছে। ধরা যাক কংগ্রেসের উভয় কক্ষের সদস্যরা নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে ভোট দিলেন। কিন্তু মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী একজন প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের আয়ুু হচ্ছে ঠিক চার বছর। তাই সংবিধান মোতাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার  মেয়াদ আপনা-আপনি শেষ হয়ে যাবে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি দুপুরবেলা। তাই নির্বাচনের তারিখ পাল্টালে সংবিধানেও পরিবর্তন আনতে হবে।

ট্রাম্প দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে যা হবে : প্রেসিডেন্ট যদি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে- তিনি তার দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, তাহলে মার্কিন সংবিধান ২৫তম সংশোধনী অনুযায়ী ভাইস প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন তিনি। প্রেসিডেন্ট সুস্থ হলে তিনি আবার তার পদে ফেরত আসবেন। প্রেসিডেন্ট যদি ক্ষমতা হস্তান্তর করার মতো সুস্থও না হন-তাহলে তার মন্ত্রিসভা এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট তাকে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ ঘোষণা করতে পারেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্টই তখন প্রেসিডেন্টের ভূমিকা নিতে পারেন। এরপর যদি ভাইস প্রেসিডেন্টও দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে পড়েন, তাহলে প্রেসিডেনশিয়াল সাকসেশন অ্যাক্ট নামে আইন অনুযায়ী প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার এ দায়িত্ব নেবেন। অবশ্য বর্তমানে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি যেহেতু একজন ডেমোক্র্যাট, তাই সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেন, এরকম কোনো পরিস্থিতি হলে তা আইনি লড়াইয়ের জন্ম দিতে পারে।

ট্রাম্প নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারলে ব্যালটের কী হবে : প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কোনো প্রার্থী যদি কোনো কারণে প্রার্থী থাকতে না পারেন- সে ব্যাপারে স্পষ্ট বিধি রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন ঠিকই-কিন্তু তিনি রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচনী প্রার্থী বলে বিবেচিত হবেন না। পার্টির নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় কমিটি ভোটাভুটির মাধ্যমে একজন নতুন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচন করবেন। হয়তো সেভাবে মাইক পেন্স নতুন প্রার্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন, তবে তখন একজন নতুন রানিং মেটও বেছে নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অবশ্য আগে কখনো এ পরিস্থিতি হয়নি।

অনেক ভোট হয়ে যাওয়ায় যা হবে : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ নিয়েও অনেক রকম অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি হবে। কারণ লাখ লাখ ভোট এরই মধ্যে ডাকযোগে দেওয়া হয়ে গেছে। একজন বিশেষজ্ঞ, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক রিক হ্যাসেন বলেছেন, সম্ভবত অসমর্থ হয়ে পড়া প্রার্থীর নাম-বিশিষ্ট ব্যালট পেপার দিয়েই ভোট চলতে থাকবে। কিন্তু তার জায়গায় নতুন যে প্রার্থী আসবেন-তাকে রাজ্যগুলোর ইলেকটোরাল কলেজের নির্বাচকমন্ডলী  ভোট দিতে পারবেন কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। মার্কিন আইনের আরেক অধ্যাপক রিচার্ড প্লাইডস বলেছেন, ‘যাই ঘটুক না কেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম ব্যালট পেপারে থাকবে এটা প্রায় নিশ্চিত। রিপাবলিকান পার্টি হয়তো প্রার্থীর নাম পরিবর্তন করার জন্য আদালতে যেতে পারে, কিন্তু বাস্তবে তার জন্য যথেষ্ট সময় থাকবে না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর