মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

ভাইরালের আগে পুলিশ কী করেছে, প্রশ্ন হাই কোর্টের ভিডিও সরানোর নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে স্বামীকে বেঁধে রেখে নিজ ঘরে গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার ভিডিও সামাজিক মাধ্যম থেকে সরাতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। তবে সিডি বা পেনড্রাইভে ফুটেজের কপি রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ওই নারীর পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঘটনাটি আদালতের নজরে আনার পর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়। বেগমগঞ্জ থানা পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে হাই কোর্ট বলেছে, এই ঘটনার ৩২ দিন পর যখন ভিডিও ভাইরাল হলো তখন পুলিশ তৎপর হয়েছে। এর আগে তারা কী করেছে? এই ভিডিও যদি ভাইরাল না হতো তাহলে তো পুলিশ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত না। ঘটনা সবার চোখের আড়ালেই থেকে যেত।

এ ঘটনায় ভিকটিমের বক্তব্য গ্রহণে পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কিনা তা অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি করে দিয়েছে আদালত। নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা সমাজ সেবা অফিসার এবং চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষকে তা অনুসন্ধান করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাই কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ওই ঘটনায় করা ফৌজদারি মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে ২৮ অক্টোবর আদালতকে প্রতিবেদন দিতে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

কোনো মানবাধিকার সংগঠন বা নারী সংগঠন এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে আদালতে না আসায় হতাশা প্রকাশ করে হাই কোর্ট বলেছে, আমরা আশাহত হয়েছি যে অধিকার, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাস্টের মতো সংগঠন বা কোনো নারী সংগঠন এগিয়ে আসেনি। আদালত আরও জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখন এ ধরনের বর্বর ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয় তখন বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়। রুলে ওই নারীকে রক্ষায় এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অবহেলার কারণে বেগমগঞ্জের ওসি ও বেগমগঞ্জ থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তাও জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এর আগে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় স্বামীকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে নিজ ঘরে ধর্ষণচেষ্টায় বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা হাই কোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও আবদুল্লাহ আল মামুন। পরে আদালতে মতামত তুলে ধরেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন, সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ইয়াদিয়া জামান, জামিউল হক ফয়সাল, রাশিদা চৌধুরী নিলু, তানজীম আল ইসলাম প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী।  শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন এ ঘটনায় করা মামলা উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে রাখার আর্জি জানান। জেড আই খান পান্না ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি সাক্ষ্য হিসেবে সংরক্ষণের নির্দেশনা চান। ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনায় মনোবিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, তাদের মতামত নিয়ে দেখা উচিত কেন একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, এ ধরনের ঘটনা এখন সারা দেশেই ঘটছে। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবং ঘটনায় জড়িতরা পার পেয়ে যাচ্ছে। তাই তাৎপর্যপূর্ণ আদেশের মাধ্যমে একটি উদাহরণ তৈরি হওয়া দরকার। আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী নিলু বলেন, এ ঘটনার বিচারের দিকটি উচ্চ আদালত ফলোআপে রাখলে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর