মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

সমাজ পরিবর্তনের জন্য আন্দোলনে যেতে হবে

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

জিন্নাতুন নূর

সমাজ পরিবর্তনের জন্য আন্দোলনে যেতে হবে

ধর্ষণ প্রতিরোধে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে আর সেই শাস্তি দৃশ্যমান হওয়াই ভালো। রাষ্ট্রকে অপরাধীদের বিচারের অধীনে আনতে হবে এবং দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে। এসব অপরাধ দমনে আমাদের সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে যেতে হবে। আর পরিবর্তন না করে শুধু অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ করা যাবে না। বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব বলেন। তিনি বলেন, ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে আমাদের গোটা ব্যবস্থাটাকেই বদলাতে হবে। আমাদের এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। যে ব্যক্তিমালিকানায় বিশ্বাস করে সেখানে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সামাজিক মালিকানাই হচ্ছে এই সংকটময় অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ। এখানে সব মানুষের সমান অধিকার থাকবে। সমবায়ী পদ্ধতিতে পণ্য উৎপাদিত হবে। একই পদ্ধতিতে বণ্টন হবে। কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না। এই ব্যবস্থায় একটা ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে তা হারিয়ে গেলে চলবে না। এই শিক্ষাবিদ বলেন, ধর্ষণের ঘটনাগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। যদিও এগুলো বিচ্ছিন্নভাবে ঘটে। এগুলো সবই একটি রোগের প্রতিফলন আর সেটি হচ্ছে আমাদের দেশে অপরাধ করলে অপরাধীর জন্য এখানে জবাবদিহিতা নেই, শাস্তি হয় না। ধর্ষকরা যারা এই কাজ করে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও মনে করে যে তাদের শাস্তি হবে না। এই ধর্ষকদের পেছনে আবার রাজনৈতিক সমর্থন থাকে। তারা সরকারি দলের সঙ্গে যুক্ত থাকে। দেখা যাচ্ছে যে ছাত্রলীগের ছেলেরা অনেকেই ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের পুরো সমাজ শুধু পুরুষতান্ত্রিক না, পিতৃতান্ত্রিকও। এখানে পুরুষের যে আধিপত্য তা একেবারে ক্ষমতার আধিপত্য। পুরুষ আধিপত্য করছে সামাজিকভাবে এবং সামাজিক সম্মতির ভিত্তিতে তা না আধিপত্য করছে গোটা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ভিত্তিতে। আর পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা গোটা পিতৃতান্ত্রিক। সামান্তবাদী ব্যবস্থাতে আমরা আগে ছিলাম তা পিতৃতান্ত্রিক ছিল, কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আরও বেশি পিতৃতান্ত্রিক। এই ব্যবস্থাতে নারীকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা ভোগের সামগ্রী হিসেবে দেখা হয়। পরিবারের মধ্যে তার অবস্থান সম্পত্তির মতো। আর পরিবারের বাইরে তাকে ভোগের সামগ্রী হিসেবে দেখা হয়। তিনি বলেন, আবার আমাদের বিজ্ঞাপনগুলোতে মেয়েদের ভোগের সামগ্রী হিসেবে দেখানো হয়। পত্রিকাগুলোতে যে তথাকথিত বিনোদন পাতা থাকে সেখানে এত অশ্লীল ছবি আমরা আগে কখনো দেখতাম না। রঙিন ছবিতে অর্ধনগ্ন অবস্থায় তারকাদের কাহিনি যেভাবে আনা হয় এবং তাদের পারিবারিক জীবন নিয়ে আলোচনা করা হয় এগুলো সবকিছুই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ভোগবাদিতার উন্মোচন। করোনাভাইরাস হচ্ছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সর্বসাম্প্রতিক উন্মোচন। করোনা মানুষকে কোণঠাসা করে ফেলছে, মানুষের এ জন্য কোনো বিনোদন নেই, কোনো সামাজিক জীবন নেই, সামাজিক সম্পর্কগুলো ভেঙে দিচ্ছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলছে। আর এই সবকিছুই অর্থাৎ বিচ্ছিন্নতা, আত্মকেন্দ্রিকতা, কোণঠাসা করে রাখা, মানুষের মুখ বন্ধ করে দেওয়া পুঁজিবাদের মধ্যেই আছে। এ সমস্ত জায়গা থেকে আমরা সারাবিশ্বে পুঁজিবাদের চরম অধঃপতন দেখছি। বিশেষ করে বাংলাদেশে দুই ক্ষেত্রে এই অধঃপতন দেখছি। একটি দেখছি ধর্ষণের ক্ষেত্রে আরেকটি দুর্নীতিতে। ধর্ষণ আর দুর্নীতি কিন্তু আলাদা না। দুটোই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর