বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

সরকারের সঠিক পদক্ষেপে অর্থনীতি গতিশীল আছে

একনেকে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারের সঠিক পদক্ষেপে অর্থনীতি গতিশীল আছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাকালে সরকার সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ায় অর্থনীতি গতিশীল রয়েছে। নগদ সহায়তা, প্রণোদনাসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা খুব সময়মতো পদক্ষেপ নিয়েছিলাম।

গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। নগরীর শেরেবাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রী ও সচিবরা অংশগ্রহণ করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ বৈঠকে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শিল্প ও অন্যান্য খাতের পাশাপাশি কৃষিতে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। আমরা ক্ষুদ্র, মাঝারি, বড় এবং পোশাকশিল্পে আলাদা করে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। এ ছাড়া কভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে সব খাতে প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কত টাকা আছে, কী আছে না আছে তা চিন্তা করিনি। বরং একটাই চিন্তা করেছিলাম- এ দুঃসময়ে আমাদের অর্থনীতির চাকা যদি গতিশীল রাখতে হয় তাহলে অবশ্যই মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি টাকা না থাকে তাহলে সাধারণ মানুষের জীবন চালানোই মুশকিল হয়ে পড়ে। কাজেই তাদের সাহায্যার্থে নগদ অর্থ এবং বিভিন্ন সেক্টরে আমরা সরাসরি যে টাকা পাঠিয়েছি তা কাজে লেগেছে। গ্রামে মানুষের কিছু একটা করে খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেটা তারা করতে পেরেছে। তিনি বলেন, সর্বাগ্রে আমি কৃষির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বলেছি কৃষিকে আমাদের ধরে রাখতে হবে এবং খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। মানুষের যেন খাবারের কষ্ট না হয় তা আমরা নিশ্চিত করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমরা যে প্রণোদনা দিয়েছি সে প্রণোদনা যখনই সবাই নিতে শুরু করেছে, তখনই কিন্তু আস্তে আস্তে নিজ নিজ ব্যবসা-বাণিজ্যে তারা ফিরে আসতে পেরেছে। কারণ, এমন কোনো খাত নেই যেখানে আমরা সাহায্য করিনি। শুধু বড়লোক বা বিত্তশালী নয়, সব ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরাই প্রণোদনা পেয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বাড়াতে অর্থের অভাব হবে না : বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গবেষণা বাড়াতে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল একনেক সভা শেষে প্রকল্পের সার্বিক বিষয় ও প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন বাজার না হয়ে যায়। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি হবে তার একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। যাতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ইচ্ছামতো অনির্দিষ্ট সংখ্যায় ছাত্র ভর্তি অব্যাহত না রাখে।

‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ৩৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যত্রতত্র অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা বাড়াতে হবে। এর জন্য যত টাকা প্রয়োজন সরকার দেবে। গবেষণার পাশাপাশি প্রকাশনা আরও বাড়াতে হবে। প্রকল্পের আওতায় শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন, ১১-২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য টাওয়ার নির্মাণ, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আবাসিক ভবন, মাল্টিপারপাস হল কাম টিএসসি কাম জিমনেসিয়াম ভবন নির্মাণ, চিকিৎসা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের জন্য আবাসিক ভবনসহ মসজিদ নির্মাণ, বিদ্যমান ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, ক্যাম্পাসের চারদিকে সবুজ বেষ্টনী নির্মাণ এবং বিভিন্ন ল্যাব যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, ল্যাপটপসহ আনুষঙ্গিক ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি কেনা হবে। প্রকল্পটি আরও আগে অনুমোদন দেওয়ার দরকার ছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ‘হাতে কলমে কারিগরি প্রশিক্ষণে নারীদের গুরুত্ব দিয়ে বিটাকের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন’ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এখানে মেয়েদের বেশি করে সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় এলাকার পোল্ডার পুনর্বাসন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্প প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের নদীমাতৃক দেশ। সুতরাং নির্মাণকাজে আরও সতর্ক হতে হবে। নদীর পাড়ে কোনো নির্মাণকাজ শুরু করলে শীত মৌসুমে শেষ করতে হবে। যেটুকু শীত মৌসুমে সম্পন্ন করা যাবে সেটুকু কাজ হাতে নিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। কারণ বর্ষায় নির্মাণকাজের ক্ষতি হয়ে যাবে।

ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কের উদ্বোধন কাল : ‘হাওরের বিস্ময়’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কের উদ্বোধন আগামীকাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সকাল ১০টায় হাওরাঞ্চলের মানুষের বহু কাক্সিক্ষত এ সড়ক উদ্বোধন করবেন।

 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কিশোরগঞ্জের পূর্ব প্রান্তে বিস্তীর্ণ হাওর নিয়ে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার অবস্থান। হাওর এলাকায় সড়ক যোগাযোগ ছিল না বললেই চলে। বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে এ তিন উপজেলার জনগণকে অবর্ণনীয় কষ্টের সম্মুখীন হতে হতো। হাওরবাসীর কষ্ট লাঘবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের অভিপ্রায়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক নির্মাণ প্রকল্প গৃহীত হয়। সড়কটির দৈর্ঘ্য ২৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮৭৪ কোটি টাকা। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। সড়কটি নির্মিত হওয়ায় ভবিষ্যতে মিঠামইন উপজেলার সঙ্গে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের মাধ্যমে করিমগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে এবং অষ্টগ্রাম উপজেলার মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার সঙ্গে তথা রাজধানী ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর