বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

ধরা পড়ছে ধর্ষক, তবু থামছে না ধর্ষণ

সিলেটে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার দুই আসামি রিমান্ডে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটের মুরারীচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে নববধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় ওঠে সারা দেশে। নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে সিলেট। এখনো প্রতিদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ইতিমধ্যে গণধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব আসামি গ্রেফতারও হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতা, সাধারণ মানুষের প্রতিবাদী আন্দোলন কিছুই যেন দমাতে পারছে না ধর্ষক নরপশুদের। প্রায় প্রতিদিনই সিলেটের কোথাও না কোথাও ঘটছে ধর্ষণ বা ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

গত সোমবার রাত ১১টার দিকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকে গ্রেফতার করা হয় শিশু ধর্ষণ চেষ্টার আসামি হৃদয় আহমদ নামের এক কিশোরকে। সে কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল ইউনিয়নের চাতলপাড় গ্রামের বিল্লাল মিয়ার ছেলে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি কে এম নজরুল ইসলাম জানান, গত রবিবার সকালে দেড় বছরের শিশুসন্তানের চিকিৎসার জন্য চাতলপাড় গ্রামের এক দম্পতি গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে যান। এ সময় বাড়িতে তাদের সাত বছরের মেয়ে একা ছিল। সকাল ১০টার দিকে প্রতিবেশী হৃদয় আহমদ ফাঁকা ঘরে ওই শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। ভাগ্যক্রমে ওই সময় পাশের ঘরের এক নারী এসে ঘটনাটি দেখতে পেলে হৃদয় পালিয়ে যায়। অভিযোগ পেয়ে সোমবার রাতে হৃদয়কে আটক করে পুলিশ। এর আগে শনিবার রাতে নগরীর শামীমাবাদ আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর রোডে পাঁচ সন্তানের জননী ধর্ষিত হন। একই রোডের দেলোয়ার হোসেন ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় ধর্ষণে সহযোগিতা করে আরও তিনজন। পরে ওই নারী ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি হন। রবিবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত দেলোয়ার ও তার সহযোগী হারুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দেলোয়ার নগরীর শামীমাবাদ আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর রোডের ২ নম্বর বাসার ভাড়াটে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বেড়ানোর কথা বলে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার এক বাসায় এনে ধর্ষণ করে মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী রাকিব হোসেন নিজু। গত ২ অক্টোবর এ ঘটনায় ছাত্রীর মা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। গত শনিবার সিলেটের মোগলাবাজার এলাকা থেকে রাকিব হোসেনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। রাকিব সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার এলাকার আবদুল কাইয়ুমের ছেলে। সে নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার একটি বাসায় ভাড়া থাকত। এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর শহরতলির রায়েরগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে রায়েরগাঁওর দুই যুবক। এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ জালালাবাদ থানার রায়েরগাঁওয়ের নাসির উদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন ও একই এলাকার তজম্মুল আলীর ছেলে এখলাছ মিয়াকে গ্রেফতার করে। গতকাল আদালত তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। একের পর এক ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য রাজনৈতিক প্রভাব ও সামাজিক অবক্ষয়কে দায়ী করছেন সচেতন নাগরিকরা। সিলেট মুক্তিযুদ্ধ অনুশীলন কেন্দ্রের সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক আল আজাদ বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবে কেউ কেউ অন্ধ হয়ে গেছে। ছোট ছোট অপরাধ করে রাজনৈতিক পরিচয়ে পার পেয়ে যাওয়ায় এখন তারা বড় অপরাধে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া এসব অপরাধ কর্মকান্ড বেড়ে যাওয়ার পেছনে সামাজিক অবক্ষয়ও দায়ী। এ অবস্থার উত্তরণ করা না গেলে ধর্ষণ কেন কোনো ধরনের অপরাধই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার জানান, ধর্ষকদের ব্যাপারে পুলিশ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করছে। কোথাও ধর্ষণের ঘটনার খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

সিলেটে স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ মামলার দুই আসামি রিমান্ডে : সিলেটে ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত দুই আসামিকে দুদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল সকালে তাদের সিলেট মহানগর হাকিম ৩য় আদালতে হাজির করা হলে বিচারক শারমিন খানম নিলা তাদের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আসামিরা হলেন-জালালাবাদ থানার রায়েরগাঁওয়ের নাসির উদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন (২২) ও একই এলাকার তজম্মুল আলীর ছেলে মো. এখলাছ মিয়া (২০)। মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানা পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানালে বিচারক ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে রবিবার ভোরে জসিম উদ্দিনকে সুনামগঞ্জের আক্তাপাড়া এলাকা থেকে ও মো. এখলাছ মিয়াকে সিলেট শহরতলীর কালাপাহাড় এলাকায় থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রসঙ্গত, ১৩ সেপ্টেম্বর শহরতলীর রায়েরগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে জসিম ও এখলাছ মিয়া। পরে স্কুল ছাত্রীর পিতা ওই রাতেই জালালাবাদ থানায় দুজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার ১৯ দিন পর গ্রেফতার হয় অভিযুক্তরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর