বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
বিবস্ত্র করে নির্যাতন

ইউপি সদস্যসহ আরও দুজন গ্রেফতার

নোয়াখালী প্রতিনিধি

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার এখলাসপুরে বাড়িতে ঢুকে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় এক ইউপি সদস্যসহ আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- পূর্ব এখলাসপুর গ্রামের নোয়াব আলী ব্যাপারী বাড়ির লোকমান হোসেনের ছেলে সাজু (২১) এবং জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত গোলাম মোস্তফার ছেলে মোজাম্মেল হোসেন সোহাগ (৪৮)।

বেগমগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, সোমবার রাতে সাজুকে ঢাকার শাহবাগ থেকে এবং সোহাগকে নিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ। সাজু নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার ৫ নম্বর আসামি। মোজাম্মেল হোসেন সোহাগ এখলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য। আদালতে ভুক্তভোগীর দেওয়া জবানবন্দিতে সোহাগের নাম উঠে আসায় তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানান ওসি। এ নিয়ে এই মামলায় মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে রবিবার রাতে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রহিম ও রহমত উল্লাহকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই দিন র‌্যাব নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে মামলার প্রধান আসামি বাদল ও মূল পরিকল্পনাকারী দেলোয়ার হোসেনকে। এদিকে বাদল ও সোহাগকে গতকাল বিকালে জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে বাদলের দুই মামলায় ২০ দিনের এবং ইউপি সদস্য সোহাগের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এ বিষয়ে শুনানি শেষে বিচারক মাসফিকুল হক দুই মামলায় বাদলের ৭ দিন এবং সোহাগের ২ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে একই আদালতে মামলার সাক্ষী ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন গতকাল সকালে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা মামলার বাদী নির্যাতনের শিকার ওই নারীর সঙ্গে দেখা করে সাংবাদিকদের বলেন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার এখলাসপুরে বাড়িতে ঢুকে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে যার যার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের প্রত্যেককে আসামি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে। অপরাধীকে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। এ মামলার সব আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনা হবে। এ সময় ডিআইজি মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কথা বলেন। পরে তিনি নির্যাতিতার বাড়ি ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল মাহামুদ ফয়জুল কবিরও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ঘরে ঢুকে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে জেলা যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ নেটওয়ার্ক। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, মানবাধিকার ও নারী অধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। একই সময় জেলা জজ আদালত সড়কে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থীদের ফোরাম। এ সময় বক্তারা বলেন, একের পর এক নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও এসব ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অপরাধীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় নিজেকে আড়াল করছে। বক্তারা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্মম নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের ইন্ধনদাতাদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর বেগমগঞ্জ উপজেলার এখলাসপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুরে স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর ৭-৮ জন সদস্য ওই নারীকে তার ঘরে বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতন করে। যার ভিডিও ৪ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ওই নারী বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর