বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

পরিবারের উচিত অপরাধী সন্তানকে ধরিয়ে দেওয়া

জিন্নাতুন নূর

পরিবারের উচিত অপরাধী সন্তানকে ধরিয়ে দেওয়া

রাশেদা কে চৌধুরী

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী সংশ্লিষ্ট পরিবারকে ধর্ষকদের ধরিয়ে দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, সিলেটের এমসি কলেজের ধর্ষকদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অপরাধীর পরিবারই তাদের লুকিয়ে রাখতে বা পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। প্রশ্ন হলো, পরিবারগুলো কেন ধর্ষকদের ধরিয়ে দিচ্ছে না। পরিবারগুলো জানে, তাদের সন্তান কী অপরাধ করেছে। তা হলে তারা কী করে এমন অপরাধীকে আশ্রয় দেয়? গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আর কত সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলকে আমরা দায়ী করব। ধর্ষকরা তো কোনো না কোনো পরিবারেরই সন্তান। তাহলে অভিভাবকদের কি এ বিষয়ে কোনো দায় নেই? দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যদি অপরাধীদের বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা যায় তাহলে এই ঘৃণ্য অপরাধ হয়তো কিছুটা কমবে। তিনি বলেন, ধর্ষণের বিরুদ্ধে এখন নানা শ্রেণির ও মতের মানুষ প্রতিবাদে যুক্ত হচ্ছেন। আমি এই প্রতিবাদকে স্বাগত ও সাধুবাদ জানাই। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে এই শিক্ষাবিদ বলেন, আমরা প্রধানত দুটো কারণে এই ধরনের প্রতিবাদের বা আন্দোলনের জোয়ার ধরে রাখতে পারি না। মনে করিয়ে দিতে চাই, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কথা। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেই আন্দোলনে নেমেছিল। তবে এই নাগরিক আন্দোলন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল একে দলীয়করণের চেষ্টা করার জন্য। এক্ষেত্রে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি। দ্বিতীয়ত এ ধরনের আন্দোলনে যখন সরকারের একশ্রেণির পেটোয়া বাহিনী ধরপাকড় শুরু করে তখনো সাধারণ মানুষ আন্দোলন থেকে পিছু হটে। কিন্তু আন্দোলন থেকে পিছিয়ে যাওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, ধরপাকড় যখন শুরু হয় তখন আন্দোলনকারীদের জন্য আইনজীবীও খুঁজে পাওয়া যায় না। তারপরও বলব এ ধরনের আন্দোলন থেমে থাকা উচিত না।

রাশেদা কে চৌধুরী বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অনেক সময় বিচারবিভাগ স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে এসেছে। এটি আমরা আরও অনেক বেশি প্রত্যাশা করি। বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে বিচারবিভাগ স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসবে বলেই প্রত্যাশা করি। আমরা দেখেছি, বিভিন্ন সময় আদালতের বিভিন্ন নির্দেশ মানতে বাধ্য হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি বলেন, ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ যা আগে থেকেই ছিল তা মাদক, সামাজিক অস্থিরতার কারণে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সঙ্গে আছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। দেখা যাচ্ছে, ধর্ষণ মামলাগুলো সময়মতো থানায় লিপিবদ্ধ হচ্ছে না। আবার কিছুক্ষেত্রে ধর্ষক কোনো প্রভাবশালীর সন্তান ও নিকট আত্মীয় হলে থানায় মামলা নেওয়া হচ্ছে না। আর সময় পেরিয়ে গেলে ঘটনাগুলো ধর্ষণ বলে প্রমাণ করাও কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি ধর্ষণ মামলাগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যে আদালতও ‘অসহায়’ থাকে। দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য যে মামলা হয় তার মাত্র ৪ শতাংশের বিচার হয়েছে। বাকি ৯৬ শতাংশই বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে পড়েছে। এমন হলে ধর্ষকরা অপরাধ করার জন্য সাহস তো পাবেই। রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বেশিরভাগক্ষেত্রে আমরা দেখেছি অপরাধীরা বিভিন্ন দলের লেজুড়বৃত্তি করে। কিন্তু ধর্ষক কোনো দলের হতে পারে না। অর্থাৎ এই অপরাধীরা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে পার পেয়ে যায়। তার মতে, ধর্ষণ প্রতিরোধে মানুষের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখতে হবে। এ ছাড়া নির্যাতিতার পাশে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে নির্যাতিতার পরিবার সাহস পাবে না। এ ধরনের মামলা পরিচালনা করাও বেশ ব্যয়বহুল। রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে তিনজন নারী সদস্য আছেন। সরাসরি নির্বাচনে কোথাও কোথাও আরও বেশি নারী সদস্য আছেন। ধর্ষণ রোধে এই সদস্যদের দায়িত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল থেকেও বারবার উচ্চারণ করা হচ্ছে এ ধরনের অপরাধ সহ্য করা হবে না। কিন্তু তারপরও আমরা অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিভিন্ন পর্যায়ে আশ্রয় প্রশ্রয় পেতে দেখি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর