বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

এবার হচ্ছে না এইচএসসি পরীক্ষা

জেএসসি-এসএসসি গড় মূল্যায়নে পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার হচ্ছে না এইচএসসি পরীক্ষা

অবশেষে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। জেএসসি ও সমমান এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের গড়ের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের ২০২০ সালের এইচএসসি পাসের মূল্যায়ন করা হবে। মূল্যায়নের পর ডিসেম্বরে এই ফলাফল প্রকাশ করা হবে। গতকাল ভার্চুয়াল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষামন্ত্রীর এই ব্রিফিংয়ের মধ্য দিয়ে প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নিয়ে সংশয় কাটল। ব্রিফিংয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল দেওয়ার সিদ্ধান্তে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করবেন। আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, এ বছর কোনো এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে অকৃতকার্য দেখানোর সুযোগ নেই।

শিক্ষামন্ত্রী এইচএসসির এ মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে বলেন, এটি আদর্শ কোনো ব্যবস্থা নয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে সব ঝুঁকি এড়িয়ে সর্বোচ্চ ভালো কী করা যায় সেটি আমরা করার চেষ্টা করছি। প্রতিবেশী দেশগুলোর পরীক্ষার মূল্যায়ন দেখেই ‘আন্তর্জাতিক মানের’ মূল্যায়ন করা হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দেশে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রেও কোনো সমস্যা হওয়ার কারণ নেই। শিক্ষামন্ত্রী ব্রিফিংয়ে বলেন, সারা দেশে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১ জন আর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী রয়েছেন ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫০১ জন। এক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ ১ লাখ ৬০ হাজার ৯২৯ জন, দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ ৫৪ হাজার ২২৪ জন এবং সব বিষয়ে অনুত্তীর্ণ ৫১ হাজার ৩৪৮ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। নিয়মিত-অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর বাইরে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী রয়েছেন ৩ হাজার ৩৯০ জন। মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থী রয়েছেন ১৬ হাজার ৭২৭ জন। ডা. দীপু মনি বলেন, কভিড-১৯ পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নিতে ৩০ থেকে ৩২ কর্মদিবস প্রয়োজন হয়। ২ হাজার ৫৭৯টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষা কেন্দ্রে এক বেঞ্চে দুজন করে আসন নির্ধারিত থাকে। স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে প্রতি বেঞ্চে একজন করে ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে দ্বিগুণ পরীক্ষা কেন্দ্র প্রস্তুত করতে হবে। প্রশ্নপত্র অনেক আগেই প্যাকেটজাত করে পাঠানো হয়েছে। বিদ্যমান কেন্দ্রভিত্তিক প্রশ্নপত্র প্যাকেট ভেঙে নতুন প্যাকেট করারও সুযোগ নেই। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিষয় কমিয়ে কিংবা সিলেবাস কমিয়ে হয়তো পরীক্ষা  নেওয়া যায়, কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের প্রতিটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষা নেওয়া শুরু হলে পরীক্ষার্থী বা তার পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে কী হবে? এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে কী করা হয়েছে তা আমরা  দেখেছি। বেশির ভাগ জায়গায় পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে বা এখনো স্থগিত রয়েছে। আমাদের কাছে অবশ্যই পরীক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে পরীক্ষা গ্রহণ না করে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।

তিনি আরও বলেন, পরীক্ষা না নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন একেবারেই নতুন। ফলে কীভাবে মূল্যায়ন করা হলে ফলাফল দেশে ও বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করবে এবং শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা সে বিষয়গুলোও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞ পরামর্শক কমিটি : এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা উত্তীর্ণের পর অনেক শিক্ষার্থী বিভাগ পরিবর্তন করেছে। কেউ সাধারণ শিক্ষা থেকে কারিগরি বা মাদ্রাসা শিক্ষায় এসেছে। তাই এসব শিক্ষার্থীর এইচএসসি ও সমমান মূল্যায়ন করে ফল প্রদানের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ পরামর্শক কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এ কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করবেন। আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এতে সদস্য সচিব থাকবেন। কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হবে। এতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা অধিদফতরের একজন প্রতিনিধি, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারমান এতে সদস্য হিসেবে থাকবেন। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কমিটি প্রতিবেদন দেবে বলে জানান মন্ত্রী।

ডিসেম্বরের মধ্যেই ফল : করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই এইচএসসি ও সমমানের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যাতে জানুয়ারি থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সম্মান প্রথম বর্ষে ভর্তি করা যেতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা : সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যাবে বলে ব্রিফিংয়ে আশা ব্যক্ত করেছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে কীভাবে গুচ্ছ পরীক্ষা নেওয়া যায় সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যবস্থা নেবে। তবে ভর্তি পরীক্ষা সশরীরে নেওয়া হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, আশা করছি পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণিতে কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে সে ব্যাপারে শিগগিরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। প্রসঙ্গত, গত ১ এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকায় ও সংক্রমণ বন্ধ না হওয়ার কারণে প্রস্তুতি নিয়েও এ পরীক্ষার কোনো আয়োজন করতে পারেনি সরকার। করোনার কারণে এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষা/মূল্যায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে। নভেম্বরে এসব পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর