শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

কঠোর শাস্তির দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নোয়াখালীতে গা শিউরে ওঠা নারী নির্যাতনের পর দেশব্যাপী একের পর এক ধর্ষনকান্ডের অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ মানুষ। চতুর্থ দিনের মতো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থী, বিভিন্ন পেশার মানুষসহ ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও  প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সমাবেশ থেকে ধর্ষণকান্ডের বিচারের জন্য আলাদা টাস্কফোর্স, ধর্ষকদের মৃত্যুদন্ডসহ আইন সংশোধনের দাবি জানানো হয়। এসব দাবি লিখিত আকারে আনুষ্ঠানিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রতিবাদের অংশ হিসেবে রাজধানীর শাহবাগে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা। এ ছাড়া বিক্ষোভ-সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিল করেছে ‘যৌন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী জোট’, ‘সেভ আওয়ার উইমেন’, ‘ধর্ষকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ও ‘টিম পজিটিভ বাংলাদেশ’সহ বিভিন্ন সংগঠন। ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে প্রগতিশীল সংগঠনের নেতা-কর্মীরা গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন। বিক্ষোভের পাশাপাশি জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদী চিত্রাঙ্কন কর্মসূচি পালন করেন তারা। বিক্ষোভকারীরা স্লোগানে স্লোগানে ধর্ষকদের বিচার দাবি করেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণ চান। এ ছাড়া বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থী, প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের কর্মী ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। তারা বলেছেন, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় দোষীদের সহায়তা দেওয়া হয়। এতে দোষীরা বারবার এমন ঘটনা ঘটায়। ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত বিচার হলে বারবার এমন ঘটনা ঘটবে না। অন্যদিকে উত্তরায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের কয়েক শ শিক্ষার্থী। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা দলে দলে আসতে থাকে উত্তরায় বিএনএস সেন্টারের সামনে। ধর্ষণের বিচার দাবিতে বেলা ১১টার দিকে তারা বিএনএস সেন্টারের সামনে প্রথমে মানববন্ধন করে। পরে মানববন্ধনটি বিক্ষোভে রূপ নেয়। একপর্যায়ে তারা সড়ক অবরোধ করে। বিক্ষোভকারীরা বিকাল ৪টায় বৃষ্টি শুরু হওয়া পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান করে। এতে ওই সড়কে দিনভর সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে। বৃষ্টি শুরু হলে বিক্ষোভকারীরা সড়ক থেকে সরে গেলে সন্ধ্যায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। রামপুরায়ও সড়কের এক পাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় সেখানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল ৯টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।

‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ মুভমেন্টের আহ্বায়ক ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনীক রায় বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে এখানে অবস্থান করছি। সারা দিন অবস্থান করব।’ এর আগে ‘উইমেন ফর বাংলাদেশ’ নামে আরেকটি সংগঠন বেলা ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানববন্ধন করে। তারা ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ড করার দাবি জানায়। সকাল সাড়ে ১০টায় বিক্ষোভ করে ফেসবুকভিত্তিক শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফরম ‘সেভ আওয়ার উইমেন’। ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে বেলা ১২টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে আসেন কোটা আন্দোলনের প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীরা। সংগঠনের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হোসেন জাদুঘরের সামনে বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ৯৯ শতাংশ অপরাধী আওয়ামী লীগের কেউ না কেউ। একটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হয়নি। অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। আমরা সবাই প্রতিবাদ জানাই।’ পরে ডাকসুর সদ্যসাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের নেতৃত্বে তারা কালো পতাকা মিছিল নিয়ে মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, পল্টন হয়ে জিরো পয়েন্টে গেলে পুলিশ আটকে দেয়। সেখানে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। পরে পুলিশের বাধার মুখে জিরো পয়েন্টে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এ সময় নুরুল হক নূর বলেন, ‘শুক্রবার (আগামীকাল) বিকালে শাহবাগে “সরকারের গুম-খুন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে” গণসমাবেশ ও মশাল মিছিল করবে “ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী ছাত্র-জনতা”। ওরা আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে ধর্ষণ করেছে, বিচার বিভাগকে ধর্ষণ করেছে, ভোটাধিকারকে অনেক আগেই ধর্ষণ করেছে। আজকে যদি ধর্ষণের বিরুদ্ধে আমরা গণআন্দোলন গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে এ ধর্ষণ বন্ধ হবে না। এ ধর্ষণ থেকে আমরা রেহাই পাব না।’ চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ধর্ষণসহ শিশু ও নারীদের ওপর সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ এবং নির্যাতনের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন সংগঠন ইপসা। গতকাল বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উদ্যাপন উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে চট্টগ্রামের ২০টির বেশি উন্নয়ন সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারা তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। ইপসার প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে দেশে শিশু ও নারী নির্যাতন অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ধর্ষণ, শিশু ও নারী নির্যাতনসহ সব ধরনের সহিংসতার দ্রুত বিচার এবং সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ বন্ধে প্রয়োজনে দেশের প্রচলিত আইন পরিবর্তন করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের সচেতনতাই পারে আমাদের এ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে। সন্তানকে বাসায় নৈতিকতা, সুশিক্ষা এবং নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে।’ ইপসার কর্মসূচি সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী শাহিন বলেন, ‘গত নয় মাসে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৭৫টি, তার মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ২০৮টি। ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪৩টি। আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭৩২। চলতি বছর প্রতিদিন অন্তত তিনজন নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এ হিসাব অসম্পূর্ণ। পত্রিকায় সব খবর আসে না। বিশেষ করে প্রভাবশালী বা অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যদের প্রভাবে অনেক ধর্ষণের তথ্য চাপা পড়ে যায়। তাই সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে শিশু ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে।’

খুলনা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, সারা দেশে ধর্ষণ, নির্যাতনে হত্যার প্রতিবাদে খুলনায় গণস্বাক্ষর ও ধর্ষকদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ শপথবাক্য উচ্চারিত হয়েছে। গতকাল নগরীর শিববাড়ী মোড়ে জনউদ্যোগ, খুলনা, গুণীজন স্মৃতি পরিষদ ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়। গণস্বাক্ষর ও শপথ চলাকালে ধর্ষণের শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদন্ড, প্রয়োজনে ক্রসফায়ারের দাবি জানান বক্তারা। একই সঙ্গে অবিলম্বে ধর্ষকদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা, যাতে অন্য নারী ধর্ষণের শিকার না হন। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম। বক্তৃতা করেন জনউদ্যোগ খুলনার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শামীমা সুলতানা শীলু, জনউদ্যোগ খুলনার সদস্যসচিব মহেন্দ্র নাথ সেন, বয়রা মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সৈয়দা লুৎফুন্নাহার, রেহেনা আক্তার, রোজী রহমান, সিপিবি নারী সেলের সুতপা বেদজ্ঞ, সংস্কৃতি কর্মী জেসমিন জামান, মহিলা পরিষদের ইসরাত আরা, আগুয়ান ’৭১ সালের আবদুল্লাহ চৌধুরী, আবিদ শান্ত, কমলেশ বাছাড় প্রমুখ।

বরিশাল থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে বেলা ১১টায় স্যান্ডো গেঞ্জি ও শর্ট প্যান্ট পরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতীকী বিবস্ত্র মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবাদ এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বরিশালে সাইকেল র‌্যালি করেছে লাল সবুজ সোসাইটি নামে একটি সংগঠন। বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। একই দাবিতে ছাত্রফ্রন্টের একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে থেকে সাইকেল র‌্যালিটি শুরু হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে গিয়ে শেষ হয়। একই দাবিতে গতকাল বরিশালে ইশরাত জাহান সুরাইয়া নামের এক কলেজছাত্রী প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন নগরীর পানি উন্নয়ন বোর্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানমীমসহ আরও কয়েকজন। রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, দ্বিতীয় দিনের মতো রাজশাহীতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শেষে মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা মিছিলের চেষ্টা করলে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বসে বিক্ষোভ করতে থাকেন। লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, নারীর নিরাপত্তা ও ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করার দাবি নিয়ে লক্ষ্মীপুরে সম্মিলিত প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। গতকাল বেলা ১২টায় জেলা প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদ জেলা শাখার ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচি পালন করা হয়। সমাবেশে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরসহ সারা দেশের নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন পরিষদের জেলা শাখার আহ্বায়ক শাহেদ সরোয়ার, যুগ্ম-আহ্বায়ক ইউসুফ, সদস্য অনন্যা মণি অণু, মারুফ জাকির, ওমর ফারুক প্রমুখ। সমাবেশে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের হাতে ‘১.২.৩.৪, ধর্ষকরা বাংলা ছাড়’, ‘আমার বোন ধর্ষিতা কেন, পুলিশ প্রশাসন জবাব চাই’ লেখা পেস্টুন দেখা গেছে।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের দাবিতে মানিকগঞ্জে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন ব্লাক মিরর ফেসবুক গ্রুপ। গতকাল বেলা ১২টায় মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাব চত্বরে আয়োজিত কর্মসূচিতে বলা হয়, আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অভিযুক্তরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এ কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের আইন করা দরকার।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, সারা দেশে ধর্ষণ, নির্যাতন বন্ধ ও অপরাধীদের দ্রুত বিচার দাবিতে নেত্রকোনার কলমাকান্দায় মানববন্ধন করেছেন উপজেলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ‘নিরাপদ থাকুক সব মা-বোন, দেশে বন্ধ হোক ধর্ষণ ও নির্যাতন’ স্লোগানে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলমাকান্দা পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের সড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে বক্তারা অবিলম্বে সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। জামালপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল দুপুরে শহরের দয়াময়ী মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে জামালপুর স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের আহ্বায়ক ফাহাদ আহমেদের সভাপতিত্বে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী এনামুল হক নাহিদ, অথই রহমান, অন্তরা চৌধুরী প্রমুখ।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধনের আয়োজন করে জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। মানববন্ধনে বক্তারা অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ সময় ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে জেলার সংস্কৃতি কর্মীরা মানববন্ধনে অংশ নেন। জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, গতকাল বেলা ১১টায় শহরের জিরো পয়েন্টে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঘণ্টাব্যপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধনে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানান বক্তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, সকালে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব চত্বরে শুরু হয় মানববন্ধন ও জমায়েত। সচেতন ছাত্র সমাজের ব্যানারে দুই ঘণ্টাব্যাপী শহরের প্রধান সড়কে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্লোগানে যোগ দেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। স্মরণকালের দীর্ঘ এই মানববন্ধনে ছাত্রদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ। সমাবেশে ছাত্র সমাজের পক্ষে ধর্ষণ বন্ধে ৮ দফা দাবিনামা পেশ করা হয়। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। দেশের প্রচলিত আইনে ধর্ষক-নির্যাতনকারীদের কঠোর বিচারের দাবিতে সোচ্চার থাকবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সকালে স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেন জেলার অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। এক ঘণ্টা ধরে চলা মানববন্ধনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হেল্পলাইন, স্পর্শ, বেটার চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি অনলাইন প্লাটফর্ম ও ফেসবুক গ্রুপের সদস্য এবং স্থানীয় সুধীজন উপস্থিত ছিলেন। দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, ধর্ষকদের গ্রেফতার ও  ফাঁসিসহ সাত দফা দাবিতে সকালে পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েস ও বহ্নিশিখা দিনাজপুর জেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধন হয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। বীরগঞ্জে একই দাবিতে মানববন্ধন করেছে এক্সচেঞ্জ ব্লাড ব্যাংক, বীরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি ও এসএবিডি সংগঠনের নেতারা।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পিস ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশন ও শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আলাদাভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধু সড়কে সাত দফা দাবিতে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে পিস ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশন। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন। পরে ধর্ষণ আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করাসহ সাত দফা দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন তারা।

পরে একই স্থানে গোপালগঞ্জের সব শিক্ষার্থীর ব্যানারে কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধনে অংশ গ্রহণকারীরা বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন। পরে তারা কোটালীপাড়ায় ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই আসামিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করে।

জাবি প্রতিনিধি জানান, বেলা ১২টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ মিনার চত্বরে পূর্বঘোষিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে একটি মৌন মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। কর্র্মসূচি থেকে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি ধর্ষণকে ধর্ষণ হিসেবে স্বীকার করা, সরকারি আমলা, কর্মকর্তা দ্বারা ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে তাকে বহিষ্কার এবং তার পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত সব সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাতিল করাসহ বিচারিক কার্যক্রম ৩০ দিনের মধ্যে শুরু করার দাবি জানান তারা।

বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত ও মেয়েদের নিজেকে সুরক্ষিত রাখার কৌশল শিক্ষা বাধ্যতামূলক করাসহ ১৩ দফা দাবিতে প্রতিবাদী সমাবেশ করেছে বগুড়ার সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টায় জেলার জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় ওই প্রতিবাদী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলার সহস্রাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ধর্ষকের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে পারবেন না, তিন মাসের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন, রাজনৈতিক মদদে কোনো ধর্ষকের ছাড় না পাওয়া, ভিকটিমের পরিচয় কেউ প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, প্রতিটি রাস্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, মেয়েদের নিরাপত্তাজনিত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা প্রভৃতি।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন ও ধর্ষিতার বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণসহ সাত দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ময়মনসিংহের কলেজশিক্ষার্থীরা। গতকাল নগরীর টাউন হল শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্বরে আনন্দমোহন সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন আশজাদুল বোরহান, মানিক, বাহাউদ্দিন শুভসহ অন্যরা। এতে ধর্ষণবিরোধী স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা।

পাবনা প্রতিনিধি জানান, বেলা ১২টার দিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) উদ্যোগে মানববন্ধন করেছেন চিকিৎসকরা। মানববন্ধনে পাবনার চিকিৎসক-নার্সসহ হাসপাতালে কর্মরত সব কর্মকর্তা অংশ নেন। মানববন্ধনে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পাবনা স্বাচিপের ডা. জাহিদ হাসান রুমি, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. নাজমুল ইসলাম, পাবনা ইন্টার্নি চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. স্বপন বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক ডা. সুমন, বাংলাদেশ পাবনা মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ড. মাহফুজ নয়ন, পাবনা জেলা শাখা নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মো. আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ।

শেরপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল দুপুরে শহরের চকবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও সহিংসতার প্রতিবাদে মুখে কালো মাস্ক পরে প্রতিবাদী সমাবেশ হয়েছে। নাগরিক প্লাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও রুরাল ডেভেলপমেন্ট সংস্থা আরডিএস যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ থেকে কেবল অপরাধী গ্রেফতারই নয়, দ্রুত বিচারের মাধ্যমে সাজার রায় কার্যকর করার দাবি জানানো হয়।

টঙ্গী প্রতিনিধি জানান, বিকালে টঙ্গী চেরাগ আলী এলাকায় ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ গাজীপুর মহানগর শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সংগঠনের গাজীপুর মহানগর শাখার সভাপতি মুফতি সাব্বির আহম্মেদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মুফতি মাওলানা নাসির উদ্দিন খান, আবদুল কাদের, আবু সুফিয়ান মানছুর প্রমুখ। বক্তারা বলেন, বিচারহীনতার কারণেই দেশে বাড়ছে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা। ধর্ষণকারী বা নির্যাতনকারীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অন্যরা এ ধরনের অপরাধের সাহস পেত না। বক্তারা সিলেটে নববধূ ধর্ষণ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনসহ সব ধর্ষণ ও নির্যাতনকারীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর