শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

ফরম ফিলাপের অর্থের কী হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন। এর মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১ জন আর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ছিল দুই লাখ ৬৬ হাজার ৫০১ জন। এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষা বোর্ডে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ফরম পূরণ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ ২০০ কোটি টাকার বেশি টাকা নিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। পরীক্ষা বাদ দিয়ে জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ফরম পূরণের এই বড় অঙ্কের টাকা কীভাবে ব্যয় হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এইচএসসি পরীক্ষা ২০২০-এর ফরম পূরণ উপলক্ষে শিক্ষা বোর্ডগুলোর বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা বোর্ডে ফি জমা দিতে হয়েছে এক হাজার ৪৯৫ টাকা। এ ছাড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের জন্য ফি দিতে হয়েছে এক হাজার ৬৯৫ টাকা। সংশ্লিষ্ট কলেজগুলো সোনালী ব্যাংকের সোনালী সেবার মাধ্যমে শিক্ষা বোর্ডে এই ফি জমা দিয়েছে। অনিয়মিত প্রতি পরীক্ষার্থীকে বাড়তি জমা দিতে হয়েছে ১০০ টাকা। সে হিসাবে সব শাখার নিয়মিত শিক্ষার্থীরা বোর্ড ফি জমা দিয়েছে কমপক্ষে ১৬২ কোটি টাকা। আর অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে বোর্ড ফি জমা দিয়েছে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া এক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ, দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ, মানোন্নয়নের জন্য শিক্ষার্থীরা মিলে দিয়েছেন আরও কমপক্ষে প্রায় ১০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার জন্য শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রায় ২১৫ কোটি টাকা নিয়েছে।

বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষরা বলছেন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মডারেশন আর প্রশ্নপত্র পাঠানো বাবদ ট্রান্সপোর্ট খরচ ছাড়া বড় অংশের টাকাই এখনো শিক্ষা বোর্ডের ফান্ডে রয়ে গেছে। এ ছাড়া পরীক্ষার জন্য ছাপানো খাতার সবগুলোই পরবর্তী কোনো পাবলিক পরীক্ষায় ব্যবহার করা যাবে। আর পরীক্ষার্থীদের ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ফি, সনদ ফি ছাড়াও রোভার স্কাউট/গার্লস গাইড ফি, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি বাবদ কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়ে যাবে। কিন্তু সিংহভাগ অর্থই শিক্ষা বোর্ডের কাছে অবশিষ্ট রয়ে যাবে। কারণ, কেন্দ্র ফি, পরিদর্শক ফি, খাতা মূল্যায়নসহ যাবতীয় খাতে কোনো অর্থই খরচ হচ্ছে না শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রতিবেদককে বলেন, ফরম পূরণের জন্য নেওয়া অর্থ থেকে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে তা বাদ দিয়ে বাকি টাকা কলেজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দেওয়া যেতে পারে। এ টাকা ফেরত না দিলে তেমন কোনো হিসাবই পাওয়া যাবে না মোটা এই অঙ্কের টাকার। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী আঁখি খাতুন বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে অনেক পরিবার সংকটে পড়েছে। পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকা ফেরত দিলে অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার উপকৃত হবে। এ প্রসঙ্গে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক গতকাল সন্ধ্যায়  বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ নেওয়া টাকার সিংহভাগই খরচ হয়ে গেছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়নেই সব থেকে বেশি ব্যয় হয়েছে। এ ছাড়া মূল্যায়নের পর এই ছাত্র-ছাত্রীদের ট্রান্সক্রিপ্ট, সনদপত্র দেওয়া বাবদ আরও কিছু ব্যয় হবে। আর বকেয়া যে টাকা রয়েছে তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরনের সুযোগ নেই। এ টাকা শিক্ষা বোর্ডের ফান্ডে থাকবে বলে জানান তিনি। শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, পরীক্ষার আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ কত খরচ হয়েছে, আর কত টাকা রয়ে গেছে তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর