শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
ব্রিফিংয়ে নবনিযুক্ত হাইকমিশনার

বাংলাদেশ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার আছে থাকবে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার আছে থাকবে

বাংলাদেশকে ভারতের সর্বোচ্চ স্তরের গুরুত্ব দেওয়া কখনই কমবে না বলে জানিয়েছেন নতুন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। গতকাল তিনি ঢাকায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করার মাধ্যমে কাজ শুরুর পর এ কথা বলেন। নতুন চ্যালেঞ্জের শুরুতেই গুলশানে ভারত ভবনে গণমাধ্যমের কাছে নিজের অবস্থান জানান বিক্রম দোরাইস্বামী। ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, প্রথমত, আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই যে, বাংলাদেশ সবসময় ভারতের অত্যন্ত বিশেষ অংশীদার ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বাংলাদেশ ভারত বন্ধুত্ব কৌশলগত অংশীদারিত্বের অনেক ঊর্ধ্বে, কারণ এই বন্ধুত্ব রচিত হয়েছে অভিন্ন ত্যাগ, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি এবং আত্মীয়তার অনন্য সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে। আমি একটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করতে চাই যে, বাংলাদেশকে ভারত সর্বোচ্চ স্তরের গুরুত্ব দেয় এবং এটি কখনই হ্রাস পাবে না। দ্বিতীয়ত, আমাদের অংশীদারিত্বের উৎস পারস্পরিক শ্রদ্ধা। ঐতিহাসিক জনযুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয়ের ভিত্তিতে একটি জাতিকে রূপদানকারী হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের চেতনার প্রতি আমরা গভীরভাবে প্রশংসা ও সম্মান জানাই। আপনারা অসংখ্য মৃত্যু ও মা- বোনদের প্রতি বর্বর নির্যাতন উপেক্ষা করে অনন্য সাহস এবং বীরত্বের সঙ্গে নিজেদের ওপর হওয়া অত্যাচার ও কঠোরতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। আপনাদের এই মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের অন্যতম অনুপ্রেরণা। মুক্তিযুদ্ধে আপনাদের সহায়তা করতে পারা আমাদের জন্য সবসময়ই সম্মানের বিষয় হয়ে থাকবে যেমনভাবে, প্রায় পঞ্চাশ বছর পরেও বাংলাদেশের মানুষের সাহসের প্রতি ভারতে আজও সম্মান জানানো হয়।

ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, সামাজিক সূচকে উল্লেখযোগ্য উন্নতির জন্য বাংলাদেশ আজ সমানভাবে সম্মানিত। একইভাবে, দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম গতিতে বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ভারত অভিনন্দন জানায়। সেই সঙ্গে ভারত বাংলাদেশের বিশ্বখ্যাত আন্তরিকতা এবং আতিথেয়তার চেতনার প্রশংসা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক সাফল্য বা ক্রিকেট পিচে টাইগারদের অপ্রতিরোধ্য মনোবল যাই হোক না কেন, সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে নতুন সম্মানের সঙ্গে দেখছে। নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে এই উপযুক্ত স্বীকৃতিতে ভারত আনন্দিত। তিনি বলেন, এই চেতনায় এবং মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পকের্র পঞ্চাশতম বার্ষিকীর স্বীকৃতি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আমি আখাউড়া স্থল সীমান্ত থেকে সরাসরি ধানমন্ডিতে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘর পরিদর্শন করে বঙ্গবন্ধুর উজ্জ্বল নেতৃত্বের প্রতি বিনীত ও আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। সাভারে গিয়ে বাংলাদেশের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাব।

নতুন হাইকমিশনার বলেন, তৃতীয়ত, এটা অনস্বীকার্য যে, নিকটতম সম্পর্কেরও পরিচর্যা করা প্রয়োজন। ভারত সরকার আমাকে ঠিক তাই করার নির্দেশ দিয়েছে। আমি এবং আমার সহকর্মীরা এই অংশীদারিত্বকে সর্বস্তরে প্রচার করতে কোন সুযোগই ছাড়ব না। আমরা উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার মাধ্যমে এই অংশীদারিত্বের পক্ষে সর্বোচ্চ সমর্থন জানাব। এই নির্দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক যে ভারতের অন্যতম সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তাকেই প্রতিফলন করে। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই বিমান চলাচল শুরু করার জন্য দুই সরকারের সহায়তায় একটি বিশেষ ‘এয়ার বাবল’ ব্যবস্থা চালু করব। আমরা কভিড মোকাবিলায় যৌথভাবে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এমনভাবে কাজ করব যাতে সবাই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের প্রতি পূর্ণ সম্মান নিশ্চিত করে।

এর আগে, নতুন হাইকমিশনার বঙ্গভবনে গিয়ে কূটনৈতিক পরিচয়পত্র পেশ করেন। ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভারতের নবনিযুক্ত হাইকমিশনারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন ভারত শুধু বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী নয়, বিশ্বস্ত বন্ধুও। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। এ সম্পর্ক কূটনৈতিক পরিমন্ডল ছাড়িয়ে বাণিজ্য-বিনিয়োগ, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, নবনিযুক্ত হাইকমিশনার দায়িত্ব পালনকালে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সম্ভাবনাময় প্রতিটি ক্ষেত্রকে কাজে লাগাতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাবেন। ভারতের নবনিযুক্ত হাইকমিশনার বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। তিনি জানান ভারতে যে করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদিত হবে সেটা বাংলাদেশ সময়মতো পাবে। ভারতের নতুন হাইকমিশনার দায়িত্ব পালনকালে রাষ্ট্রপতির সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামীম উজ জামান, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর