সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

কবে আসবে ভ্যাকসিন

সব ট্রায়ালেই শোনানো হচ্ছে আশার কথা, বাস্তবে সুনির্দিষ্ট তারিখ কেউ বলছে না

জুলকার নাইন

কবে আসবে ভ্যাকসিন

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্বব্যাপী চলতে থাকা শত শত গবেষণার প্রতিটিতেই আশার কথা শোনা যাচ্ছে। প্রতি সপ্তাহেই নানা ধরনের ভ্যাকসিনের একেক রকম ট্রায়ালের বিষয়ে বক্তব্য প্রচার হচ্ছে। কিন্তু আসলে ভ্যাকসিন কবে সাধারণ মানুষের জন্য বাজারে আসবে তা জানেন না কেউ। অনেকেই বলছেন আগামী বছরের শুরুতেই ভ্যাকসিন আসবে। তবে কার্যকর ভ্যাকসিনের যথাযথ ট্রায়াল ও অনুমোদন আসলেই আগামী বছরের মাঝামাঝিও শেষ হবে কিনা তা নিয়ে দেশে দেশে বিজ্ঞানীদের মধ্যে সংশয় আছে। তাদের মতে, এত দ্রুততম সময়ে বিশ্বে আগে কখনই ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন মরণব্যাধি প্লেগে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এর সম্ভাব্য ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ চলছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা তিন বছর আগেই ১৭টি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কথা জানায়। কিন্তু এখনো কোনো ভ্যাকসিনকে লাইসেন্স দেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রয়োগ করা তো দূরের কথা। করোনাভাইরাসের মতোই লক্ষণ নিয়ে ইনফ্লু¬য়েঞ্জা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়লে ১৯৩০ সাল থেকে গবেষণা করে ১৫ বছর পর পর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা সম্ভব হয়। তবে কিছু দিন পর দেখা গেল সেই ভ্যাকসিন কার্যকর নয়। কারণ ভাইরাস রূপ বদল করে। এখনো ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন প্রতিনিয়ত আপডেট করে ব্যবহার করতে হচ্ছে।  বিশ্বের একটি বিশাল অংশে একসঙ্গে ছড়িয়ে পড়লে টাইফয়েড রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে বিশ্বব্যাপী গবেষণা শুরু হয় ১৯৮৬ সালে। সেই ভ্যাকসিন পরে বাজারে আসে ১৯১৪ সালে। একইভাবে পোলিও ভ্যাকসিন পেতে বিশ্বের সময় লেগেছে ৪৫ বছর। আর ৩৬ বছর ধরে চেষ্টা করেও এখন পর্যন্ত তৈরি করা সম্ভব হয়নি মরণব্যাধি এইডস রোগের ভ্যাকসিন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের মনোযোগ, রাষ্ট্রগুলোর বিনিয়োগ, ওষুধ কোম্পানিগুলোর আগ্রহ ও বিশ্বব্যাপী চাহিদা এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। এ কারণে বিশ্বব্যাপী মিডিয়াগুলোতে প্রতিনিয়ত ভ্যাকসিনের অগ্রগতির যে কোনো খবরকে ‘চমকপ্রদ সুখবর’ হিসেবে প্রচার হচ্ছে। 

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, বিশ্ব সবচেয়ে বেশি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে যে ভ্যাকসিনের দিকে সেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কভিড ভ্যাকসিন গবেষণার ২৫ জনের মধ্যে থাকা বাঙালি কন্যা চন্দ্রাবলী দত্ত এখন কলকাতায়।  সেখানে চন্দ্রাবলী দত্ত বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই করোনা ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। এই মুহূর্তে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। সেই ভ্যাকসিন ২০২১-এর ফেব্রুয়ারি নাগাদ ভারতেও পৌঁছে যাবে বলেই বিশ্বাস চন্দ্রাবলীর। ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো বলছে, বর্তমানে এই ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল চলছে। যুক্তরাজ্যের ভ্যাকসিন সংক্রান্ত জয়েন্ট কমিটি একটি বিশেষ প্রটোকলের উন্নয়ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার ভ্যাকসিন মার্কিন নির্বাচনের আগে বাজারে নিয়ে আসার রাজনৈতিক প্রচেষ্টাও এখন থমকে গেছে। খুব সহজে কার্যকারিতা প্রমাণ ছাড়া যে এফডিএ এর অনুমোদন দেবে না তাও ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে। তবে ভ্যাকসিন বাজারে আনার বিষয়ে তাড়াহুড়ো আছে রাশিয়া ও চীনের। রাশিয়া ও চীনের ইতিমধ্যেই একটি করে ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেওয়ার খবর এসেছে। ভারত ভ্যাকসিন আবিষ্কার থেকে মাত্র এক পা দূরে আছে বলে বলা হচ্ছে। ভারত বায়োটেকের কোভ্যাকসিন তৃতীয় দফার ট্রায়াল শুরু করার অনুমতি চেয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল বা ডিসিজির কাছে। যদিও দ্বিতীয় দফার ট্রায়াল এখনো শেষ করতে পারেনি ভারত বায়োটেক। তবে ভ্যাকসিনের অনুমোদনের বিষয়ে সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। সংস্থার মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেছেন, আাগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্যাপকহারে ভ্যাকসিন সরবরাহের ব্যাপারে আশা করা যাচ্ছে না। কারণ, এখন ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা এবং সুরক্ষা  নিশ্চিত করতে কঠোর যাচাই-বাছাইয়ে মনোযোগ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। উন্নত ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত কেউই তাদের ভ্যাকসিনের অন্তত ৫০ শতাংশ কার্যকারিতারও ‘স্পষ্ট সংকেত’ দেখাতে পারেনি। ভ্যাকসিন ট্রায়ালের তৃতীয় পর্যায়টি আরও বেশি সময় নিয়ে করতে হবে, এতে আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করব যে, তা কতটা নিরাপদ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। এটি ভ্যাকসিন গবেষণার সময় বলা হয়েছিল যে, প্রচুর সংখ্যক জনসাধারণের মাঝে ট্রায়ালের মাধ্যমে ভ্যাকসিনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। মূলত আমরা নিশ্চিত হতে চাই যে, ভ্যাকসিন মানবদেহে সঠিকভাবে কাজ করে কিনা। কিন্তু এখনো আমরা সেভাবে কোনো ভ্যাকসিনের সংকেত পাইনি। জানা যায়, ১৭০ দেশ নিয়ে কোভ্যাক নামে একটি সম্মিলিত ভ্যাকসিন কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর লক্ষ্য সারা বিশ্বে সুষ্ঠু ও সমানভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা। তবে এর মধ্যে নেই যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে যারাই ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা করছেন সেখানেই আলাদাভাবে ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি করছে বিশ্বে ধনী রাষ্ট্রগুলো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর