রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় করা অস্ত্র আইনের মামলায় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনকে ২৭ বছর করে কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।
গতকাল ঢাকার ১ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘আসামিরা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী হলেও তাদের বাসায় নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা লুকিয়ে রাখার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। এ ধরনের তথাকথিত রাজনীতিবিদরা রাজনীতির ছদ্মাবরণে শুধু নিজেদের পকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তারা দেশ ও জাতীর জন্য কল্যাণকর কোনো কাজ করতে পারে না। দেশ ও জাতির জন্য তারা বিপজ্জনক। এই আসামিরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও সজ্জন কোনো রাজনৈতিক নেতা-কর্মী নয়।’ এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু সাংবাদিকদের জানান, রায় ঘোষণা উপলক্ষে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রায়ে অস্ত্র আইনের ১৯ এর ‘এ’ ধারায় অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে পাপিয়া ও সুমনকে ২০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। আর ১৯ এর ‘এফ’ ধারায় অবৈধভাবে গুলি রাখার দায়ে ৭ বছর করে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। তবে দুই ধারার সাজা একসঙ্গে কার্যকর হওয়ায় এই দম্পতিকে মোট ২০ বছরের সাজা খাটতে হবে। এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবু ফাতেহ মো. গোলাম ফাত্তাহ ও শাখাওয়াত হোসেন জানান, এ রায়ে আসামিরা ন্যায়বিচার পাননি। তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন। উল্লেখ্য, নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তখন আসামিদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল নোট, ১১ হাজার ৪৮১ ডলার, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের কিছু মুদ্রা এবং দুটি ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়। পরে পাপিয়ার ফার্মগেটের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০টি গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড উদ্ধার করে র্যাব। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি অস্ত্র ও একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা করা হয়। পাপিয়া গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেল ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে যে আয় করতেন, তা দিয়ে হোটেলে বিল দিতেন কোটির টাকার ওপরে। পরে এ ঘটনার তদন্ত করে গত ২৯ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১ এর এসআই মো. আরিফুজ্জামান ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।