বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

পাশবিকতা রুখতেই শাস্তি বৃদ্ধি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাশবিকতা রুখতেই শাস্তি বৃদ্ধি : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধর্ষণ একটা পাশবিকতা। মানুষ পশু হয়ে যায়। যার ফলে, আমাদের মেয়েরা আজকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ‘পাশবিকতা’ রুখতেই শাস্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

গতকাল সকালে গণভবন থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। 

ধর্ষণ প্রতিরোধে সরকারের কঠোর অবস্থান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটা সময় প্রচুর অ্যাসিড নিক্ষেপ হতো। সেটাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। বিএনপির আন্দোলনের নামে জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। সেটাও কিন্তু আমরা মোকাবিলা করেছি। পাশাপাশি অ্যাসিড নিক্ষেপ, সেটাকেও আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। সেখানে আমরা আইন সংশোধন করেছিলাম। এখন ধর্ষণ করলে সেখানে মৃত্যুদন্ডের বিধান করা হয়েছে। যেহেতু সংসদ অধিবেশন নেই, আমরা এটা অধ্যাদেশ জারি করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা মোকাবিলা করা এবং সেটাকে দূর করার লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানের সভাপতিত্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম এবং ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। দুর্যোগ সহনীয় ঘর প্রাপ্ত উপকারভোগীদের পক্ষে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার বেদেনি নুরুন্নাহার এবং গাইবান্ধার মো. রিয়াজুল হক এবং মহিলা সিপিপি কাশফিয়া তালুকদার অনুভূতি ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। পরে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৪২ জন পুরুষ এবং ৪২ জন নারীর মাঝে পদক বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানের গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সারা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই চলি। কাজেই তিনি আমাদের যে পথ দেখিয়ে গেছেন, সেই দেখানো পথেই আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করব। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ভূমিকম্প, অগ্নিকান্ড, নদী ভাঙন, খরার মতো দুর্যোগ প্রতিনিয়ত আসতেই থাকবে এবং সেগুলো মোকাবিলা করেই বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হবে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস আরেকটি দুর্যোগ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে আমাদের মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগও মোকাবিলা করতে হয়। তিনি বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে যে দেশগুলো এর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। জলবায়ু পরিবর্তনে ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ আছে, যদি সাগরের পানি একটু বেড়ে যায় সেসব দেশ একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আমাদের উপকূলীয় অঞ্চল, বসতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাহলে এই মানুষগুলো যাবে কোথায়? তাদের জায়গা দিতে হবে। এগুলো মোকাবিলা করার পদক্ষেপ এখন থেকেই নিতে হবে এবং আমরা তা নিয়ে যাচ্ছি। আমরা ইতিমধ্যে দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য জরুরি অপারেশন সেন্টার পরিচালনার কার্যক্রম শুরু করেছি। এ ছাড়া স্কুলজীবন থেকেই ছেলেমেয়েদের দুর্যোগ মোকাবিলার শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই শিক্ষা দিতে হবে। সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি, আমাদের নিতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করার আগে ভাবতে হবে, বাংলাদেশ ছোট একটি ভূ-খ-, তাও আবার ব-দ্বীপ; তাতে বিশাল জনসংখ্যার বসবাস। এই ব-দ্বীপের ভিতরে প্রায় ৭০০ নদী প্রবাহিত। খাল-বিলের পানি সেখানে প্রতিনিয়ত যাচ্ছে। এই জায়গায় দুর্যোগ মোকাবিলা করে মানুষকে রক্ষা করা, জান-মাল বাঁচানো, তাদের নিরাপদ রাখা এবং তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা- এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কাজ। আমরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। তিনি বলেন, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে যদি আমরা কৃত্রিম উপায়ে ম্যানগ্রোভ বন তৈরি করতে এবং সবুজ বেষ্টনী করে দিতে পারি, তাহলে জলোচ্ছ্বাস থেকে আমাদের দেশ রক্ষা পাবে। পাশাপাশি আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা পাবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। সেই সঙ্গে আমি সবাইকে আহ্বান করব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য এবং বাঁচার জন্য ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করা। তিনি বলেন, ২১০০ সাল পর্যন্ত এই ব-দ্বীপটাকে কীভাবে উন্নত করব, আমরা সেই পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। আমরা আমাদের নদীগুলোকে ড্রেজিং করে নাব্যতা বাড়ানো, গভীরতা বাড়ানো, আমাদের খাল, বিল, পুকুর, জলাধার যেগুলো আছে সেগুলো পুনঃখনন করে সেখানে যেন পর্যাপ্ত পানি থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থাও নিচ্ছি। 

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই যে সরকারের লক্ষ্য, সে কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা রাস্তাঘাট যা কিছু তৈরি করি না কেন, সবাইকে আমি এটাই অনুরোধ করব যে, আমাদের জলাধার, আমাদের নদী-নালা, খাল-বিল এগুলো যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলায় সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরির ওপর জোর দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কীভাবে মানুষ নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারে- এর ওপর আমাদের টেলিভিশন, রেডিও বিশেষ করে রেডিওটা মানুষ বেশি শোনে। রেডিওর মাধ্যমে এটার একটা নিয়মিত প্রচার এবং কিছু কিছু প্রদর্শনী একান্ত দরকার। স্কুল থেকেই আমাদের ছেলেমেয়েদের এই শিক্ষাটা দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এই শিক্ষাটা দিতে হবে। এই ব্যবস্থাটা আমরা নিচ্ছি এবং আমাদের নিতে হবে। সরকারপ্রধান বলেন, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের সভায় জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান-কি মুন দুর্যোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব অভিযোজন কেন্দ্র ঢাকা অফিস স্থাপনের ঘোষণা দেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসে বৈশ্বিক অভিযোজন কেন্দ্রের (গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন-জিসিএ) কার্যালয় আমরা স্থাপন করেছি। আমরাই একটা দৃষ্টান্ত দেখাতে পেরেছি আন্তর্জাতিকভাবে। সেদিক থেকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি শুধু না, বাংলাদেশ পথ দেখাতে পারছে কীভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করা যায়। শেখ হাসিনা বলেন, এবারের বন্যায় নদী ভাঙনের কারণে বহু মানুষ গৃহহারা হয়ে গেছে। আমার নির্দেশ রয়েছে, যারা গৃহহারা প্রত্যেকের ঘর তৈরি করে দিতে হবে। যাদের ভিটামাটি নেই তাদের জমি কিনে ঘর তৈরি করে দেব। একটা মানুষও বাংলাদেশে গৃহহারা থাকবে না। মুজিববর্ষে অন্য অনুষ্ঠান করতে পারলাম না। কিন্তু মানুষের সেবা করা, মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, চিকিৎসা সেবা সেটা আমরা করে যাচ্ছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর