বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বেড়েছে মানি লন্ডারিং আর্থিক প্রতারণা

করোনার সময় কেন এমন হচ্ছে পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বৃহস্পতিবার বৈঠক ডেকেছে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত ওয়ার্কিং কমিটি

মানিক মুনতাসির

করোনাভাইরাস মহামারীতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সীমিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকিং খাতে আর্থিক প্রতারণা, মানি লন্ডারিং, আর্থিক জালিয়াতি এবং এ-সংক্রান্ত সাইবার অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এসব ঝুঁকি নিরসন ও জালিয়াতির ঘটনা কমিয়ে আনতে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার জন্য মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ-সংক্রান্ত ওয়ার্কিং কমিটিকে পরামর্শ দিয়েছে বিভাগটি। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। একইভাবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), শুল্ক গোয়েন্দা পরিদফতর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সমন্বয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এসব বিষয় পর্যালোচনা ও কার্যকর পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়নে করণীয় নির্ধারণে আগামীকাল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ-সংক্রান্ত এই ওয়ার্কিং কমিটিই ঠিক করবে কীভাবে মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায়।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সম্প্রতি সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। একই সঙ্গে দেশ থেকে অর্র্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা দেশের আর্থিক খাতের কার্যক্রম সীমিত করা হয়। সে সময় নানা কারণে পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন কাজেও কিছুটা শিথিলতা ছিল। সেই সুযোগে মানি লন্ডারিং, আর্থিক প্রতারণা, জালিয়াতি ও সাইবার-সংক্রান্ত অপরাধ কর্মকান্ড বেড়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এতে করে দেশ থেকে এ সময় বিপুল পরিমাণ অর্থ মানি লন্ডারিং হয়েছে। ব্যাংক খাতেও অনেকগুলো জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। সাইবার অপরাধের মাত্রা বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাদকদ্রব্যেরও বিস্তার ঘটেছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের তথ্যগুলোর সমন্বয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

বিভিন্ন সময় পাচার হওয়া অর্থ, চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থ উদ্ধার, সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত বাংলাদেশিদের অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে একটি কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা ওই দিনের সভায় উপস্থাপন করা হবে। এ জন্য অর্থ উদ্ধার সম্পর্কিত মামলা, বিদ্যমান আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, তথ্য বিনিময়ের বিভিন্ন জটিলতা, বিভিন্ন দেশের এ-সংক্রান্ত আইনকানুন পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় ভার্চুয়াল সভায় উপস্থাপন করা হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অর্থ পাচার কিংবা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সবার আগে দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা। একই সঙ্গে মানব পাচারের সঙ্গে মানি লন্ডারিং ইস্যু অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই মানব পাচার রোধ করতে পারলে মানি লন্ডারিং অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি বেড়েছে- তিন মাস আগে এমন তথ্যই দিয়েছিল সুইজারল্যান্ডের ব্যাসেল ইনস্টিটিউট অন গভর্নেন্স। সে সময় সংস্থাটি মানব পাচার রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিল বাংলাদেশকে। এবার বিশ্বব্যাংকও সেটিকে আমলে নিয়ে বলেছে, কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশে মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি বেড়েছে। এ জন্য মানব পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে তদারকি বাড়াতে বলা হয়েছে। কেননা প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয় আমদানি-রপ্তানির আড়ালে। এ জন্য অনলাইনে নিরাপদ লেনদেনকে দ্রুত জনপ্রিয় করারও পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ক্যাসলেস লেনদেন বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে কভিডকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের কার্ড ও অনলাইন লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে মানুষ। এটাকে অবশ্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিশ্বব্যাপী অর্থলগ্নিকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংক। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের মানি লন্ডারিং-সংক্রান্ত এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও ব্যাসেল ইনস্টিটিউট অন গভর্নেন্সের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিএফআইইউসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ-সংক্রান্ত ওয়ার্কিং কমিটি স্টাডি করে একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়য়ের ঝুঁকি কমাতে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এদিকে বিশ্বব্যাংক বলছে, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারের ঘটনা বেড়েছে। এমনকি মানব পাচারের সঙ্গে একজন আইনপ্রণেতার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সংসদ সদস্য পাপুল কুয়েতের কারাগারে রয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর