বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
অধ্যাদেশ জারি

এখন থেকে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। গতকাল দুপুরে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ এ অধ্যাদেশ জারি করে। এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাতে স্বাক্ষর করেন। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মধ্যে জরুরি বিবেচনায় আইনটি সংশোধন করে এই অধ্যাদেশ জারি করল সরকার। বর্তমানে জাতীয় সংসদের অধিবেশন না থাকার পরিপ্রেক্ষিতে সংশোধনীটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হলো।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারির জন্য এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে এই অধ্যাদেশ উপস্থাপন করতে হবে। আইনটি বলবৎ রাখতে চাইলে পরে বিল আকারে তা আনবে সরকার।

২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি এতদিন ছিল যাবজ্জীবন কারাদন্ড। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড। পাশাপাশি দুই ক্ষেত্রেই রয়েছে অর্থদন্ডের বিধান। এ আইনে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ডের বিধান করার পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে বিচার ও রায় কার্যকর করার জন্য আইন সংশোধনের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই করা হচ্ছিল বিভিন্ন সংগঠনের তরফ থেকে।

সম্প্রতি নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে গৃহবধূকে নির্যাতন, সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে গৃহবধূ ধর্ষণসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যৌন নিপীড়নের ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে সেই দাবি আবারও জোরালো হয়ে ওঠে। এই অধ্যাদেশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২০ নামে পরিচিত হবে। ২০০০ সালের আইনের ৯ নম্বর ধারার ১ উপধারায় শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছিল- যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন। সংশোধিত অধ্যাদেশে ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হয়েছে। ২০০০ সালের আইনের ৯ নম্বর ধারার ৪ (ক) উপধারায় বলা হয়েছিল, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করিয়া মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন। সংশোধিত অধ্যাদেশে এখানেও ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

২০০০ সালের আইনের ৩২ ধারায় বলা ছিল এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের শিকার ব্যক্তির সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করিয়া মেডিকেল পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে কিংবা সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে স্বীকৃত কোনো বেসরকারি হাসপাতালে সম্পন্ন করা যাইবে। সংশোধিত অধ্যাদেশে অপরাধের শিকার ব্যক্তির পাশাপাশি ‘অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির’ মেডিকেল পরীক্ষা করার বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩২ ধারার সঙ্গে ৩২-ক শিরোনামে নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে অধ্যাদেশে। সেখানে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির ধারা ৩২ এর অধীন মেডিকেল পরীক্ষা ছাড়াও উক্ত ব্যক্তির সম্মতি থাকুক বা না থাকুক, ২০১৪ সালের ডিএনএ আইনের বিধান অনুযায়ী তার ডিএনএ পরীক্ষা করিতে হইবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর