সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পুলিশ হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে গতকাল মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়। এদিকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত বন্দরবাজার ফাঁড়ির সাময়িক বরখাস্ত ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার খোঁজ মিলছে না। গতকাল অনেক খোঁজাখুঁজি করে কেউ তার কোনো সন্ধান পায়নি। অনেকে বলছেন গ্রেফতার এড়াতে ও মামলার তদবিরের জন্য তিনি রহস্যজনকভাবে লাপাত্তা হয়ে গেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রবিবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট নগরীর নেহারীপাড়ার রায়হান উদ্দিনকে ওসমানী মেডিকেলে ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেক এলাহী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছিনতাইকালে গণধোলাইয়ের শিকার হয়ে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে। পরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে ফাঁড়িতে নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ তুললে তদন্তে নামে পুলিশ। পরে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এদিকে, হত্যার ঘটনায় রবিবার রাতেই অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় মামলা করেন নিহত রায়হান উদ্দিনের স্ত্রী তানিয়া আক্তার তান্নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহর আলী শেখকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ ও অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পান। এরপরই এসআই আকবরসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এদিকে, বরখাস্তের পর থেকে এসআই আকবরসহ নির্যাতনে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি ওঠে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন করে এ দাবি জানানো হয়। এই অবস্থায় গতকাল সকাল থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন এসআই আকবর। পাশাপাশি হত্যাকান্ডে র পরপরই ফেসবুক অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দেন তিনি। দিনভর সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি তাকে। ধারণা করা হচ্ছে গ্রেফতার এড়াতে তিনি লাপাত্তা হয়েছেন।
এদিকে, প্রভাবমুক্ত থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে গতকাল রায়হান হত্যা মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়েছে। পুলিশ হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জ্যোর্তিময় সরকার।এদিকে, রায়হান হত্যায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও ফাঁড়ি ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, তালতলা ও আখালিয়ায় মানববন্ধন এবং বন্দরবাজার ফাঁড়ির সামনে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষুব্ধ সিলেটবাসী।
অপরদিকে, নিহত রায়হান উদ্দিনের চাচা মো. হাবিবুল্লাহ জানান, তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। রায়হান হত্যায় জড়িতরা গ্রেফতার না হওয়ায় যে কোনো সময় তাদের ক্ষতি করতে পারে। পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
বিচারিক তদন্ত চেয়ে হাই কোর্টে রিট : সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমেদ (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনার বিচারিক তদন্ত চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। গতকাল জনস্বার্থে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফজলে এলাহী এই রিট আবেদন করেন। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিটটির শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন এ আইনজীবী। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), সিলেটের পুলিশ কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) ও পুলিশ সুপারসহ (এসপি) সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
গত রবিবার সকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রায়হান আহমেদ মারা যান। তিনি সিলেট নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন রায়হান। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান উদ্দিনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে নিহতের পরিবার। এ ঘটনায় রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।