বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ

শুধু ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়ায় ধর্ষণ হয়নি বলে প্রমাণ হয় না

নিজস্ব প্রতিবেদক

শুধু ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়ার কারণে মামলা অপ্রমাণিত বলে গণ্য হবে না। বরং ভিকটিমের মৌখিক সাক্ষ্য ও অন্যান্য পারিপার্শি¦ক সাক্ষ্য দ্বারা আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ভিত্তিতেই আসামিকে সাজা প্রদান করা যেতে পারে। একটি ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজার বিরুদ্ধে আসামির আপিল খারিজ করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

খুলনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামি ইব্রাহীম গাজীর সাজা বহাল রেখে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর নেতৃত্বাধীন হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এ রায় দেয়। সম্প্রতি রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট। রায়ের বিষয়টি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌস রূপা। এ মামলায় আসামিপক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আমিনুল হক হেলাল।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, আবদুস সোবহান বনাম রাষ্ট্র নামে একটি মামলায় ঘটনার দীর্ঘ ২১ দিন পর ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয় এবং তাতে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। কিন্তু ধর্ষণ সম্পর্কিত ভিকটিমের সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য হওয়ায় আসামিকে প্রদত্ত নিম্ন আদালতের সাজা আপিল আদালত বহাল রেখেছে। ফলে শুধু ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়ার কারণে ধর্ষণ প্রমাণ হয়নি বা আপিলকারী ধর্ষণ করেনি, এই অজুহাতে আসামি খালাস পেতে পারে না। ভুক্তভোগী দেরিতে মামলা করলেও তা মিথ্যা নয় বলেও রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাই কোর্ট।

রায়ের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌস রূপা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ রায়ে দেওয়া পর্যবেক্ষণ একটি নির্দিষ্ট মামলার ক্ষেত্রে দেওয়া হলেও হাই কোর্টের সব রায়ই নজির হিসেবে থেকে যায়। ভবিষ্যতে নিম্ন আদালত ধর্ষণ মামলার বিচার করার ক্ষেত্রেও হাই কোর্টের এই পর্যবেক্ষণ আমলে নিতে পারে।

এর আগে খুলনার দাকোপে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অপরাধে ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আসামি মো. ইব্রাহীম গাজীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ সঙ্গে ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদ- দিয়ে রায় দেয়। এরপর আসামি ইব্রাহীম রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল দায়ের করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে হাই কোর্ট আসামির সাজা বহাল রেখে তার আবেদনটি খারিজ করে রায় ঘোষণা করে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ভুক্তভোগী ছাত্রীর পিতা একজন মসজিদের ইমাম। তার মেয়ে প্রায়ই স্কুলে যাওয়ার পথে আসামি ইব্রাহীম তাকে উত্ত্যক্ত করত এবং খারাপ প্রস্তাব দিত। ২০০৬ সালের ১৫ এপ্রিল সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে সে পার্শ্ববর্তী মসজিদে কোরআন শরিফ পড়তে যায় এবং সেই মসজিদের ঘাটে অজু করে। সেখানে আগে থেকেই ওতপেতে থাকা আসামি ইব্রাহীম ওই ছাত্রীকে পেছন থেকে ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরে এবং পাজাকোলা করে পাশের বাঁশবাগানের নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরে ওই ছাত্রী তার মাকে ঘটনা অবহিত করলে প্রথমে তৎকালীন ইউপি সদস্য মো. সৈয়দ ভূঁইয়ার কাছে বিচারে সহায়তা চাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে শালিসের উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হন। এরপর থেকে আসামিপক্ষ ভুক্তভোগীর পরিবারকে বারবার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় তারা দাকোপ থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে আত্মীয়দের পরামর্শে ২০০৬ সালের ২৩ এপ্রিল খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে নালিশি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনাল দাকোপ থানাকে মামলা গ্রহণ করে অনুসন্ধান করতে এবং একই বছরের ১৭ মে ভুক্তভোগীর ডাক্তারি পরীক্ষা করতে খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেয়। কিন্তু পুলিশ সঙ্গে না যাওয়ায় ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এরপর এ মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে আসামি ইব্রাহীমকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেয় খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর