শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
উৎকণ্ঠা হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে

নবাবগঞ্জ থানায় মৃত্যুতে তোলপাড়, মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিলেট মহানগরের বন্দর ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে থাকা এক যুবকের মৃত্যু ঘটনার দুই দিন পর ঢাকার নবাবগঞ্জ থানা হাজতের টয়লেটের ভিতর থেকে হত্যা মামলার আরেক আসামির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে  তোলপাড় শুরু হয়েছে।

পুলিশ দাবি করেছে, গ্রেফতারকৃত আসামি  মামুন হোসেন (৩১) নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে হাজতের টয়লেটের ভিতরের গ্রিলের সঙ্গে লুঙ্গি দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনায় রাজধানীর বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বি এম ফরমান আলী ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহবুব  হোসাইনের বিরুদ্ধে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করা হয়েছে। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেখুন আসামি যে আত্মহত্যা করেছেনÑ এটা স্পষ্ট। থানার সিসিটিভি ফুটেজেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে। তবুও এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’  স্থানীয় সূত্র বলছে, গত রবিবার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের দেওতলা খ্রিস্টান পাড়া গ্রামের একটি নির্জন স্থানের বাঁশ বাগান থেকে রাজিয়া সুলতানা (৩৫) নামের এক মহিলার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুই সন্তানের জননী ওই নারী মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার লস্করপুর গ্রামের প্রবাসী ইয়াকুব ঢালীর স্ত্রী। নিহত রাজিয়াদের একটি ঘর গ্যারেজ হিসেবে ভাড়া নেয় স্থানীয় আবুল মিস্ত্রি। একপর্যায়ে রাজিয়ার গোসলের দৃশ্য গোপনে মোবাইলে ধারণ করে তাকে দফায় দফায় ব্ল্যাকমেইলিং করতে থাকেন আবুল। তবে মৃত্যুর ১১ দিন আগে আবুলের মোবাইলে তার ছেলে মামুন তার বাবা এবং রাজিয়ার বিশেষ মুহূর্তের ভিডিও দেখতে পায়। পরে মামুন ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে নিহত রাজিয়ার মেয়ে সুমাইয়াকে কুপ্রস্তাব দেয়। তবে সুমাইয়া তা প্রত্যাখ্যান করলে মামুন তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। স্থানীয়ভাবে এ বিষয়টি নিয়ে শালিস হয়। সর্বশেষ রবিবার বিকালে নিখোঁজ হয় রাজিয়া। এর দুই দিন আগে তার মেয়ে সুমাইয়ার বিয়ে হয়। এ ঘটনায় সন্দেহজনক হিসেবে শ্রীনগর থানা পুলিশ মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করার চেষ্টা করলে স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন বাধা দেন। পরদিন রাজিয়ার লাশ পাওয়া যায়। এরপর মামুন ও তার মা পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজন তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। এ সময় লস্করপুর এলাকার আবদুল নামের এক নেতা মামুনকে ধরিয়ে দেওয়ায় রাজিয়ার পরিবারের লোকজনের ওপর চড়াও হন এবং তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, থানার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে বেলা দেড়টার দিকে হাজত খানায় মামুন তার পরনের লুঙ্গি খুলছে। তবে এরপর ফুটেজে আর কোনো দৃশ্য নেই। পরবর্তীতে মামুনের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায় হাজতখানার টয়লেটে। নবাবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ বলেন, নবাবগঞ্জ থানা পুলিশকে অবগত করা হলে তারা মামুনকে আমাদের হেফাজতে দিয়ে দেয়। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে কথাবার্তায় ব্যাপক অসঙ্গতি পাওয়া যায়। পরে তাকে ওই মামলায়  গ্রেফতার দেখিয়ে দুপুরে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল। এ সময় মামুন হাজতের টয়লেটে গিয়ে ভিতর থেকে লক করে গ্রিলের সঙ্গে গলায় লুঙ্গি পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এর প্রমাণ থানার সিসি ক্যামেরায় স্পষ্ট রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মামুনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে বাদীর স্বামীকে নির্যাতন করায় রাজধানীর বিমানবন্দর থানার ওসি বি এম ফরমান আলী ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহবুব হোসাইনের বিরুদ্ধে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে এ মামলাটি করেন সাহেল সুলতানা সোমা। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পরে আদেশ দেবে বলে জানান। আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাদীর স্বামী শামীম হোসাইন ও আসাদকে বিমানবন্দর থানার একটি মামলায় গত ১০ অক্টোবর হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ওসি বি এম ফরমান আলী ও এসআই মাহবুব হোসাইনের নির্দেশে তার স্বামী শামীম ও আসাদকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন করে আহত করা হয়। বর্তমানে শামীম ও রাসেল জেলহাজতে রয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর