বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
উৎকণ্ঠা হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে

লাশ তোলার নির্দেশ, শাস্তি দাবি এসআই আকবরের

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

দায়িত্ব পেয়েই সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান আহমদ নামের যুবকের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। এ ছাড়া পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রায়হানের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে পুনরায় ময়নাতদন্তের অনুমতি দিয়েছেন সিলেটের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। পাশাপাশি লাশ উত্তোলনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, গতকালও লাপাত্তা ছিলেন প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া। পুলিশসূত্রে জানা গেছে, সাময়িক বরখাস্ত ব্যক্তিকে প্রতিদিন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে হয়। কিন্তু তা তিনি করছেন না। এদিকে গতকালও রায়হান হত্যার বিচার দাবিতে সিলেটের বিভিন্ন্ স্থানে প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন ও ফাঁড়ি ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত তদন্তের স্বার্থে মঙ্গলবার রায়হান হত্যা মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয় পুলিশ হেডকোয়াটার্স। এরপর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পিবিআইয়ে মামলার নথি হস্তান্তর করে সিলেট মহানগর পুলিশ। নথি পেয়ে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে তদন্তে নামেন পিবিআই কর্মকর্তারা। প্রথমেই পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মো. খালেদুজ্জামানের নেতৃত্বে তদন্তকারী দল ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যায়। দুপুর সোয়া ১টার দিকে ফাঁড়ি থেকে বের হন পিবিআই কর্মকর্তারা। এ সময় উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. খালেদুজ্জামান জানান, বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তে এ ঘটনার সঙ্গে যাদেরই সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদের মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পুলিশ সুপার খালেদুজ্জামান জানান, ‘আগের তদন্ত কর্মকর্তা পুনঃ ময়নাতদন্তের জন্য রায়হান আহমদের লাশ কবর থেকে উত্তোলনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সে অনুমতি দিয়েছেন। এজন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই কবর থেকে রায়হানের লাশ উত্তোলন করা হবে।’

ফাঁড়ি ঘেরাও কর্মসূচি পালিত : রায়হান হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন ও ফাঁড়ি ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়। নিহত রায়হানের বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও তিন মাসের সন্তানের পাশে দাঁড়ান সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। ন্যায়বিচার নিশ্চিতে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন তারা। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সিলেট মহানগর পুলিশের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রায়হানের পরিবারকে সান্ত¡না দিতেও যাননি তার বাসায়। এতে হত্যাকান্ডের পর অভিযুক্ত সদস্যদের রক্ষার যে অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে তা থেকে বের হয়ে আসতে পারেননি তারা। নিহত রায়হানের ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম রিফাত জানান, নির্মম এ হত্যাকান্ডের পর সিলেটের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সান্ত্বনা দিতে তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু পুলিশের কোনো কর্মকর্তাকে তাদের পাশে পাননি। উল্টো গ্রেফতার না করে প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেনকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন তারা। এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সব পুলিশ খারাপ নয়। কিন্তু বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যে ঘটনা ঘটেছে এরপর সিলেট মহানগর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর দায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এড়াতে পারেন না। নির্মম এ ঘটনার পর মানবিক কর্মকর্তা হিসেবে তারা রায়হানের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারতেন। কিন্তু সান্ত¡না দিতেও কেউ যাননি, এটা খুবই দুঃখজনক।

এসআই আকবরের বিচার দাবি : ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়ার জন্মভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জেও তাকে নিয়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। তার কর্মকা-ে হতাশ স্থানীয়রা। বিচারও দাবি করেছেন অনেকে। জানা গেছে, আশুগঞ্জ উপজেলার বগইর গ্রামের জাফর আলী ভূইয়ার বড় ছেলে এসআই আকবর কনস্টেবল পদে চাকরিতে যোগ দেন। পরে ধাপে ধাপে এসআই পদে উন্নীত হন। পুলিশে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরপরই বদলে যায় আকবরের পরিবার। পেয়েছেন সোনার হরিণ, বনে গেছেন বিপুল অর্থবিত্তের মালিক। নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। প্রথম তলার কাজ ইতিমধ্যে শেষ করেছেন। পাশাপাশি বাড়ির সামনে নির্মাণ করছেন আধুনিক ফটক। যার নির্মাণকাজ চলমান। রয়েছে অটেল সম্পত্তি। আর সবকিছু হয়েছে এসআই আকবরের বদৌলতে। আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হানিফ মুন্সি জানান, আকবর ও তার পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কখনো জড়িত ছিলেন না। তিনি তার শাস্তি দাবি করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর