শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

আলু রপ্তানিতে আসতে পারে নিষেধাজ্ঞা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সরকার আলুর দাম সর্বোচ্চ ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও সেটি বাজারে কার্যকর না হওয়ায় এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় এই সবজিটি রপ্তানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে সরকার। কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আলু রপ্তানিতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ কেউ ১০০ টাকার আলু রপ্তানি করলে সরকার তাকে আরও ২০ টাকা প্রণোদনা দিচ্ছে। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে আলুর দাম ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর সেই রপ্তানিতে লাগাম টানা দরকার বলে মনে করছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছে, অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে আলুর দাম বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে অভ্যন্তরীণ বাজারেও। এ অবস্থায় আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুটি বিকল্প নিয়ে ভাবা হচ্ছে। এক. রপ্তানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং দুই. প্রয়োজনে পিঁয়াজের মতো সরকারি সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে ভোক্তার কাছে আলু বিক্রি করা। জানা গেছে, চিকিৎসা শেষে গতকাল রাতে দেশে ফেরার কথা বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির। তিনি দেশে ফেরার পর পরই আলু রপ্তানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। এদিকে হিমাগারগুলোতে আলুর মজুদ কম থাকায় পণ্যটি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোশারফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের পাশাপাশি গত মৌসুমে ভারত ও নেপালেও পণ্যটির ফলন কম হয়েছে। ফলে দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ আলু নেপালে রপ্তানি হয়েছে। এই মুহূর্তে যে পরিমাণ আলু হিমাগারে মজুদ আছে তাতে রপ্তানির কোনো সুযোগ নেই। আমরা এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাব। কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, এ মুহূর্তে তাদের হিমাগারগুলোতে কমবেশি ২৫ লাখ মেট্রিক টন আলু রয়েছে। এর মধ্যে বীজ আলুর পরিমাণ ১১ লাখ মেট্রিক টন এবং বাকি ১৪ লাখ মেট্রিক টন খাবার আলু রয়েছে। হিমাগার মালিকরা বলছেন, দেশে প্রতি মাসে আলুর চাহিদা রয়েছে ৭ লাখ মেট্রিক টনের কাছাকাছি। ফলে মজুদ আলু দিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। বিলম্বিত বন্যার কারণে জানুয়ারিতে নতুন আলু না পাওয়া গেলে পণ্যটির সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন হিমাগার মালিকরা। আর এ আশঙ্কা থেকেই তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সবজিটির রপ্তানি বন্ধে সুপারিশ পাঠাবেন। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আলুর দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার পর এটি রপ্তানির বিষয়টি পর্যালোচনা করা দরকার। তবে কৃষিপণ্য হিসেবে আলু রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ লাগবে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনে টিসিবির মাধ্যমে আলু বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে বলেও জানান বাণিজ্য সচিব। টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবির বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে তারা পিঁয়াজের মতো ন্যায্যমূল্যে আলু বিক্রির উদ্যোগ নেবেন।

কত আলু রপ্তানি হয়েছে : কৃষিপণ্য হিসেবে আলুর উৎপাদন, বিপণন, বাজারমূল্য এবং রপ্তানি এসব তথ্য সংগ্রহ করে কৃষি বিপণন অধিদফতর। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত অর্থবছরে প্রায় দ্বিগুণ আলু রপ্তানি হয়েছে আগের অর্থবছরের চেয়ে।

অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তারা দেখেছেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশ থেকে আলু রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৫ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেড়ে প্রায় ৬৬ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। গত অর্থবছরে প্রায় ২ কোটি ৩৩ লাখ মার্কিন ডলারের আলু রপ্তানি হয়েছে। আর গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে আলু রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের।

অ্যাকশনে যাচ্ছেন ডিসিরা : হিমাগার, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও আলুর দাম না কমায় সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের অ্যাকশনে যেতে বলেছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ গতকাল উত্তরবঙ্গ, মুন্সীগঞ্জসহ যেসব এলাকায় আলুর উৎপাদন বেশি হয় ও হিমাগার রয়েছে সেসব এলাকায় হিমাগারগুলো থেকে সবজিটির সরবরাহ বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে টেলিফোনে তাগিদ দিয়েছেন। সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি না করা হলে প্রয়োজনে ডিসিরা যেন অ্যাকশনে যান সে বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (বাজার সংযোগ) মো. মজিবর রহমান জানিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর