শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

ধর্ষণ প্রতিরোধে ব্যাপক ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধর্ষণ প্রতিরোধে ব্যাপক ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমাজের কতগুলো ব্যাধি আছে। ইদানীং ধর্ষণটা খুব বেশি, ব্যাপকভাবে হচ্ছে এবং প্রচারও হচ্ছে। আর এটা যতবেশি প্রচার হয় এর প্রাদুর্ভাবটা কিন্তু তত বেশি বাড়ে। ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো প্রতিহত করতে আমাদের কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

গতকাল বিসিএস কর্মকর্তাগণের ৭০তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও সাতটি বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সঙ্গে ভার্চুয়ালে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে আইন সংশোধন করে আমরা একটা অধ্যাদেশ জারি করে দিয়েছি। কাজেই এখানে এ ধরনের ঘটনা রোধ করার জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে। মানুষের মাঝে জনসচেতনতাও সৃষ্টি করা দরকার। সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের খেটে খাওয়া, অসহায়, বঞ্চিত এবং গ্রামগঞ্জে থাকা মানুষের সেবা করাই সরকারি কর্মচারীদের সব  থেকে বড় দায়িত্ব। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, এই দেশের গরিব মানুষ যারা এখনো তৃণমূলে পড়ে আছেন, তারাই এদেশের মালিক। আর তাদেরই ঘর থেকে সবাই লেখাপড়া শিখে আজকে উঠে এসেছেন। কাজেই সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই তাদের সেবা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা এ দেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। কিন্তু তার যে স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার, তা তিনি করে যেতে পারেননি। কাজেই সেই কর্তব্য এখন সবার। এই দেশটাকে গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জনগণের সেবা করবেন। জনগণের সেবার জন্যই আজকে আপনারা উপস্থিত হয়েছেন, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে বলা কথাগুলো উল্লেখ করেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি কোট করছি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় ওই গরিব কৃষক। আপনার মাইনে দেয় গরিব শ্রমিক, আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। আমি গাড়িতে চড়ি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলেন, ওদের ইজ্জত করে কথা বলেন। ওরাই মালিক।’ প্রশিক্ষণ নেওয়া কর্মচারীদের এ কথাগুলো মাথায় রেখে কাজ করার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যতটুকু আমরা যা করতে পারছি, সবকিছুর ভিত্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান করে গেছেন। আমাদের নিজস্ব প্রশাসন হবে এবং সেই প্রশাসনের কার্যক্রম চলবে এটাও কিন্তু তিনি নিজেই সৃষ্টি করে গেছেন। তার হাতেই গড়া প্রতিটি ক্ষেত্র। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা কিন্তু পদক্ষেপ নিচ্ছি। সরকারপ্রধান উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। বাংলাদেশের যে মানুষগুলো একেবারে তৃণমূলে বাস করে, যাদের পক্ষে একবেলা খাদ্য জোগাড় করা সম্ভব ছিল না, তারা পেট ভরে খাবে, শিক্ষা পাবে, চিকিৎসা পাবে, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের গৃহ হবে। তারা উন্নত জীবন পাবে, তারা সুন্দর জীবন পাবে। কিন্তু ১৫ আগস্ট যখন তাকে হত্যা করা হলো, তখন বাংলাদেশ স্বাধীনতার যে আদর্শ, যে নীতি, যে চেতনা তা সম্পূর্ণভাবে ভূ-লুণ্ঠিত করে স্বাধীনতাবিরোধীরা।

দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কামনা : অতিদ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে পুনর্বাসনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। গতকাল গণভবনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট (উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী)  স্টিফেন ই বিগান সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা অতিদ্রুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চাই। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমিতে পুনর্বাসনে সহযোগিতা করা।   শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমাদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা। মিয়ানমারের মাধ্যমে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তাদের উচিত তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া।

একটি চক্র রোহিঙ্গাদের বিভ্রান্ত করে সমাজবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত করার চেষ্টা করতে পারে। সুতরাং দ্রুত তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্রও রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান চায় জানিয়ে বিগান বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী ও যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা সেবা চালু করা হবে বলে জানান বিগান। তিনি বলেন, অর্থনীতি ও বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের করোনা পরিস্থিতি ও সেখানে ২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেন তিনি। বিগান বলেন, আমরা ভ্যাকসিন সরবরাহের খুব কাছাকাছি। আশা করি পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে ভ্যাকসিন বাজারে সরবরাহ করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতির দুর্দান্ত স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির প্রশংসা করেন তিনি। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর