শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
ঢাকায় মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রোহিঙ্গা সংকটে আন্তর্জাতিক জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা সংকটে আন্তর্জাতিক জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন

ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন পদ্মায় গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলোতে জোরালো ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান।

গতকাল ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিকভাবে সব দেশের কাঁধে কাঁধ  মিলিয়ে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করতে চাই আমি। এটা কেবল বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব নয়, বৈশ্বিক অগ্রাধিকার। এরপর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান স্টিফেন বিগান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পরিদর্শন বইয়ে তিনি লেখেন, আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে গৌরবের অংশীদার হতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে দেখতে চাই।

বুধবার তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট (উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী) স্টিফেন ই বিগান। ঢাকা সফরের প্রথম দিন সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে স্টিফেন বিগান বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সব দেশের উচিত রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমার যাতে উদ্যোগী হয়, সেজন্য সমানভাবে স্পষ্টভাষী হওয়া। মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোগী ভূমিকায় আছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে আরেকটি ‘দীর্ঘমেয়াদি’ জয়েন্ট রেসপন্স প্রোগ্রাম আলোচনায় থাকলেও বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরানোর বিষয়ে জোর দিতে। আগামী ২২ অক্টোবর জয়েন্ট রেসপন্স প্রোগ্রামের আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিগান বলেন, আমরা এটাকে রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হিসেবে দেখি না। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমরা একমত যে, রোহিঙ্গাদের অধিকার পুনরুদ্ধার ও ক্যাম্প থেকে তাদের ফিরে যাওয়ার ওপর ভিত্তি করে সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের তাৎক্ষণিক মানবিক প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি সংকটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে পৌঁছানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ দ্বিগুণ করতে হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে যুক্তরাষ্ট্র ‘সবসময় স্পষ্টভাষী’ ছিল এবং মিয়ানমারের ভিতরে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধে এবং তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে রাজনৈতিক প্রভাবও ব্যবহার করেছে। গতকালের বৈঠকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সমস্যা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়ে বিগান বলেন, এক্ষেত্রে কেবল তাদের জরুরি প্রয়োজন মেটানো নয়, পাশাপাশি বাংলাদেশের কাঁধ থেকে এ বোঝা নামানোর জন্য, স্থায়ী সমাধানের জন্য বিরাজমান ইস্যুগুলোকে সমন্বয় করতে আমরা কীভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারি, তা আলোচনায় ছিল। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখে এবং অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়তে সেই অংশীদারিত্ব বাড়াতে চায়। এই অঞ্চলে আমাদের কাজের ক্ষেত্রে কেন্দ্রভূমি হবে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানোর বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আমরা আলোচনা করেছি, এটা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল দেখে থাকেন। তারা এ বিষয়টি রিভিউ করছেন বলে জানিয়েছেন।

মায়ামিতে বাংলাদেশ কনস্যুলেট হচ্ছে : যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে বাংলাদেশ কনস্যুলেট করার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিগান বলেন, আমেরিকার জনগণ ও বাংলাদেশি আমেরিকানদের কল্যাণে বাংলাদেশের কূটনৈতিক উপস্থিতি বাড়াতে চাই আমরা। যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা সম্পর্কে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, কভিড-১৯-এর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলোতে লোকবলের সংকট রয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রেও এ রোগের প্রকোপ এ সমস্যার একটি কারণ। তিনি বলেন, নীতিগতভাবে এখানে কোনো বাধা নেই। টিকার মাধ্যমে বড় রকমের চিকিৎসা শুরু হলে এ সমস্যা কেটে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর