শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

তালিকা হচ্ছে দলীয় দখলবাজদের

জিরো টলারেন্স নীতিতে সরকার, দলীয় পরিচয়ে ছাড় মিলবে না

রফিকুল ইসলাম রনি

এবার তালিকা হচ্ছে দলীয় দখলবাজদের। যারা দলের নাম ভাঙিয়ে সরকারি সম্পত্তি, নদী, বালুমহাল, সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করেছেন তাদের তালিকা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এই তালিকায় সরকারদলীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র কিংবা স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ/দাপুটে নেতার নাম রয়েছে।

সরকারের নীতিনির্ধারণী ফোরামের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, দলীয় পরিচয়ে যারা ঢাকার প্রাণ প্রবাহ বুড়িগঙ্গাসহ চারপাশের নদী অবৈধভাবে দখল করে শিল্প-কলকারখানা কিংবা স্থাপনা গড়ে তুলেছেন তাদের পৃথক তালিকা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় জেলাগুলো এবং অন্যান্য জেলা-উপজেলা-পৌরসভায় তালিকা করা হচ্ছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা দলীয় দখলবাজদের তালিকা তৈরির কাজ করছেন। চারভাগে ভাগ করে এই তালিকা তৈরি করে খুব শিগগিরই সংশ্লিষ্ট হাইকমান্ডে জমা দেওয়া হবে। এরপর চলবে দখলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলীয় পরিচয়ে অপকর্ম করার দিন শেষ। অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান ও ফরিদপুর আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে সে বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন থেকে যারা দলীয় পরিচয়ে নদী, বালুমহাল, সরকারি কিংবা অন্যের সম্পত্তি দখল নিয়েছেন তাদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। কোথাও কোথাও সরকারদলীয় এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র কিংবা স্থানীয় থানা-উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এর সঙ্গে যুক্ত। সরকারি সম্পদ ও অন্যের জায়গা দখলমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দখলবাজ যত শক্তিশালীই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অঙ্গীকার তিনি কোনো অপরাধীকে ছাড় দেবেন না। সে দলের হোক কিংবা কারও ছত্রছায়ায় থাকুক। দখলবাজ, সন্ত্রাসী, নৈরাজ্যকারীর জায়গা আওয়ামী লীগে হবে না। তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যত দিন যাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দখলদারের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে আরও কঠোর হবেন। গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সরকার যে কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে অটল। নিজ দলের কেউ অপরাধ করলে শাস্তি প্রদানের সাহস একমাত্র শেখ হাসিনাই রাখেন।’ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের জায়গা দখলের অভিযোগ করেছেন হিন্দু, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা। শুধু দখলই নয়, ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের জায়গা দখলের অভিযোগ করেছেন হিন্দু, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০০১-২০০৮ সাল পর্যন্ত একটি গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের জায়গা দখল, সহিংসতা করেছেন এমনকি দেশ ছাড়া করেছেন। ২০০৯ সালে এই সরকার (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় আসার পর সহিংসতা থাকলেও রাজনৈতিক লেবাসধারী ব্যক্তিদের মাধ্যমে সংখ্যালঘুর বাড়িঘর দখল, মন্দিরে হামলার ঘটনাও থেমে নেই। যারা ব্যাংক লুট করছে, বালু মহল দখল করছে, নদী দখল করছে তারাই সংখ্যালঘুর বাড়ি দখল করছে। আবার কেউ সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে নানা অপচেষ্টাও চালাচ্ছে। জানা গেছে, ২০১০ সালে প্রণীত বালুমহাল আইনে সেতু, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইনের পাশ থেকে বালু তোলা নিষিদ্ধ হলেও রাজধানীর বুড়িগঙ্গাসহ পার্শ¦বর্তী এলাকায় এগুলো চলছেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতা, সহযোগী সংগঠনের নেতা, দলীয় এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যান এমনকি পৌর মেয়ররাও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার কারণে ৫৪ জেলার আড়াই শতাধিক স্থানে বর্তমানে নদী ভাঙছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম মেম্বার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলীয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ বরাবরই কঠোর। এর প্রমাণ মিলেছে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে। ফরিদপুরে দলীয় নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একইভাবে যারা দলের নাম ভাঙিয়ে নিজের আখের গোছাবে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর