সিলেট মহানগর পুলিশের আওতাধীন সাতটি ফাঁড়ি যেন অপরাধের স্বর্গরাজ্য। ফাঁড়ির ইনচার্জ ও পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই সাধারণ মানুষের। হয়রানির শিকার হয়েছেন যারা ভয়ে তারা এতদিন মুখ খুলতেন না। কিন্তু রায়হান আহমদ হত্যাকান্ডের পর প্রধান অভিযুক্ত বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ সাব ইন্সপেক্টর আকবর হোসেন ভূইয়ার দুর্নীতি, হয়রানি ও অপরাধ কর্মকান্ড প্রকাশ্যে আসার পর ফাঁড়ি পুলিশের অপরাধ কর্মকান্ডের ব্যাপারে মুখ খোলা শুরু হয়। ফাঁড়িতে দায়িত্ব পেয়ে ইনচার্জরাও যেন পেয়ে যান সোনার খনি। তাই একবার কেউ ইনচার্জ হলে আর বদলি হয়ে যেতে চান না থানায়। ঘুরতে থাকেন ফাঁড়ি থেকে ফাঁড়িতে। ফাঁড়িই যেন তাদের কাছে মধুর

হাঁড়ি। ২০১৪ সালে পদোন্নতি পেয়ে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হন আকবর হোসেন ভূইয়া। গেল বছরের মাঝামাঝি সময়ে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্ব পেয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আকবর। তার বিরুদ্ধে হকার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, অসামাজিক কার্যকলাপের সুযোগ করে দিয়ে বিভিন্ন হোটেল থেকে মাসোহারা আদায় এবং মাদক, ছিনতাই ও জুয়ার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। লকডাউনের সময় ব্যবসায়ীদের দোকান খোলার সুযোগ দিয়ে শার্টার প্রতি ১ হাজার টাকা করে আদায় করতেন আকবর। এ ছাড়া রাতে নিরীহ লোকজনকে ধরে এনে মাদক ও অবাঞ্ছিত নারীদের দিয়ে চালান দেওয়ার ভয় দেখিয়েও টাকা আদায় করতেন। গত শনিবার রাতে নগরীর নেহারীপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান আহমদকে ফাঁড়িতে ধরে এনে দাবিকৃত ১০ হাজার টাকা না পেয়ে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ ওঠে এসআই রায়হান ও ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ার পর এসআই আকবরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এর পরপরই গা ঢাকা দেন আকবর।

কদমতলী ফাঁড়িতে ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই ফয়েজ এর আগে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ইনচার্জের দায়িত্বে ছিলেন। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে বাস টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশন কেন্দ্রিক জুয়া ও মাদক ব্যবসা থেকে অর্থ আদায়ের। দক্ষিণ সুরমার কয়েকটি আবাসিক হোটেল থেকেও মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেই ফাঁড়ি থেকে ফাঁড়িতে ঘোরেন এসব ইনচার্জ। এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্লাহ তাহের জানান, মহানগর পুলিশে ইতিবাচক অনেক পরিবর্তন আসছে। ফাঁড়ির ইনচার্জরা কেন শুধু ফাঁড়িতে থাকতে চায় তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।