শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

দেশে আর কেউ না খেয়ে থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে আর কেউ না খেয়ে থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সবার ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। কাজেই এ দেশে আর কোনো দিন কেউ না খেয়ে থাকবে না। বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২০ উপলক্ষে গতকাল হোটেল সোনারগাঁওয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আসুন এ বিশ্বকে আমরা ক্ষুধামুক্ত করি। আর বাংলাদেশ সম্পর্কে আমাদের একটাই চিন্তা- জাতির পিতা চেয়েছিলেন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। আমরা সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। ইনশা আল্লাহ আমরা তা অর্জন করতে পারব। বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত সাহসী এবং তারা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা করোনার সঙ্গে সঙ্গে ঝড়, বন্যা সবই মোকাবিলা করে যাচ্ছি। এভাবেই আমাদের বাঁচতে হবে প্রকৃতির সঙ্গে। খাদ্য নিরাপত্তা যাতে নিশ্চিত থাকে, প্রতিটি মানুষের ঘরে যেন খাবার পৌঁছায় সে ব্যবস্থা করেছি। হতদরিদ্র যারা তাদের মধ্যে বিনা পয়সায় খাবার দিয়ে যাচ্ছি। এটা অব্যাহত রাখব সব সময়। একজন মানুষও না খেয়ে কষ্ট পাবে না, একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। সব মানুষ চিকিৎসাসেবা পাবে, তাদের দোরগোড়ায় আমরা চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ পুষ্টিহীনতায়ও ভুগবে না। সেজন্য মায়েদেরও আমরা মাতৃত্বকালীন আর্থিক সাহায্য দিচ্ছি। সদ্যপ্রসূত মা বা যাঁরা ব্রেস্ট ফিডিং করান তাঁদেরও আমরা আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি। বিশাল সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের যে কর্মসূচি রয়েছে তাঁর মাধ্যমেও আমরা আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, খাদ্যের সঙ্গে সঙ্গে যাতে পুষ্টির নিশ্চয়তা হয় এবং মানুষ যেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

বাংলাদেশের মানুষ যেন কোনো কষ্ট ভোগ না করে সেজন্য তাঁর সরকার নানা প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রণোদনার প্যাকেজ অনুযায়ী কৃষকদেরই সব থেকে বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে যাতে তাঁরা তাঁদের সাধারণ কাজগুলো (কৃষিকাজ) ভালোভাবে চালাতে পারে।

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মতিয়া চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (এফএও) মহাপরিচালক কিউ ডংইউর পূর্বে ধারণকৃত একটি ভাষণ প্রচার করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মেসবাউল হাসান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রের সাফল্যের ওপর একটি ভিডিওচিত্রও দেখানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী করোনাকালে তাঁর সরকার-প্রদত্ত প্রণোদনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলেন, আমরা ইতিমধ্যে দেশের দরিদ্র জনগণ যাঁরা করোনার জন্য কোনো কাজ করতে পারেনি তাঁদের জন্য ২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করে যাচ্ছি। যাঁরা হাত পেতে টাকা নেবে না, কিনে খেতে চায় অথচ বেশি টাকাও নেই তাঁদের জন্য আমরা ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহের ব্যবস্থা হিসেবে ২৫১ কোটি টাকা খরচ করেছি।

তিনি বলেন, আমরা কৃষক তাঁর উৎপাদিত পণ্য যাতে বাজারজাত করতে পারে সেজন্য ৮৬০ কোটি টাকার সহায়তা দিচ্ছি। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকের উৎপাদিত ধান-চাল কিনেও আমরা তাঁদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি।

‘কৃষির যান্ত্রিকীকরণকে তাঁর সরকার বিশেষভাবে উৎসাহিত করছে’, উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি যাতে তাঁরা অল্পমূল্যে কৃষিযান্ত্রিকীকরণ করতে পারে। বাকি অর্থ সরকারের পক্ষ থেকেই দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া কৃষির জন্য কৃষি সহায়তা হিসেবে আমরা ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রেখেছি। তিনি বলেন, আমরা চাই এক ইঞ্চি জমিও কেউ ফেলে না রেখে বৃক্ষ, ফলমূল, তরিতরকারি যা কিছুই হোক না কেন যেন উৎপাদন করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার করোনার জন্য জিডিপির প্রায় ৪ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছে এবং করোনাকালে কেবল কৃষির জন্যই ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে।

মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য খাদ্যকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে কৃষকের ধান কাটায় সহযোগিতা করায় ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগসহ আওয়ামী লীগের সব সহযোগী সংগঠন এবং মূল সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমাদের ছাত্ররা (ছাত্রলীগ কর্মী) কাজকে গুরুত্ব দিয়ে মাঠে ছুটে গেছে এবং ধান কেটে কৃষকের গোলায় দিয়ে এসেছে। আমরা ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়ে করোনার মধ্যেও অর্থনীতির চাকা যাতে সচল থাকে সে ব্যবস্থা করেছি।

জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে এসে ঐতিহাসিক রেসকোর্সের (৭ মার্চের ভাষণের স্থান এবং বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে যে ভাষণ দেন তার অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন পদেক্ষেপের চৌম্বক অংশ আলোচনায় তুলে আনেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আমার জীবনের একমাত্র কামনা বাংলাদেশের মানুষ যেন খাদ্য পায়, আশ্রয় পায়, উন্নত জীবনের অধিকারী হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা এ লক্ষ্য নিয়েই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সে সময় ৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে ১০১ কোটি টাকাই তিনি (বঙ্গবন্ধু) রেখেছিলেন কৃষি উন্নয়নের জন্য। কারণ, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য এবং ১৯৭৩ সালেই তিনি কৃষি পুরস্কার তহবিলও গঠন করেন এবং মাত্র নয় মাসে আমাদের যে সংবিধান উপহার দেন সেখানেও সব মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতের পাশাপাশি কৃষিকেও তিনি গুরুত্ব দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আমরা যখন প্রথম সরকার গঠন করি, সে সময় ২৪ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিল বাংলাদেশ। তিনি বলেন, সে দেশে খাদ্য উৎপাদন করে ২০০১ সালে যখন সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হয় তখন ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত রেখে যায় তাঁর সরকার। তাঁর সরকারের ২ কোটি ১০ লাখ কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণ, কৃষিভাতা, কৃষকবন্ধু সেবা ‘৩৩৩১’, কৃষি জানালা বা কৃষি কল সেন্টার ‘১৬১২৩’ চালু, ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ, জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি-২০২০ প্রণয়ন, নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ প্রণয়নসহ খাদ্যের সঙ্গে জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানেও তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন এবং সারসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণের মূল্য কৃষকের নাগালের মধ্যে রেখে তা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগও তুলে ধরেন তিনি।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিশ^ খাদ্য সংস্থা (এফএও) প্রতি বছর এ দিবসটি উদ্যাপন করে থাকলেও সংস্থাটির ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজকের দিনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ^ খাদ্য দিবসে আমি তাঁদের অভিন্দন জানাই।’

বিশ^ খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সম্প্রতি নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হওয়ায় সংস্থাটিকেও প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনাভাইরাসের কারণে চলমান মুজিববর্ষ কাক্সিক্ষতভাবে উদ্যাপন করতে না পারার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাঁর সরকারের ডিজিটালাইজেশনের সুবাদে ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এবং কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর