মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

তিন বিভাগের সমন্বয় ও সুসম্পর্কের খামতির কারণে বাড়ছে দ্বন্দ্ব

নিজামুল হক বিপুল

তিন বিভাগের সমন্বয় ও সুসম্পর্কের খামতির কারণে বাড়ছে দ্বন্দ্ব

আবু আলম মো. শহীদ খান

সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেছেন, আমি সব সময় বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের তিন বিভাগ নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে সমন্বয় এবং সুসম্পর্কের খামতি দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের দ্বন্দ্ব বেড়েই চলছে। যার ফলে মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার বিষয়গুলো অহেতুক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ই-মেইলে পাঠানো এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

আবু আলম মো. শহীদ খানকে প্রশ্ন করা হয়, মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের দ্বন্দ্বে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কিনা। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারদের সংগঠন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন এখন মাঠ পর্যায়ে কোনো ঘটনা ঘটলেই বিচার চেয়ে বিবৃতি দিচ্ছে। তাদের এই বিবৃতি দেওয়াটা কতটা  যৌক্তিক? প্রশ্নের জবাবে আবু আলম শহীদ খান আরও বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে শাসক রাজনৈতিক দলের দ্বন্দ্ব-সংঘাত একেবারেই নতুন ঘটনা নয়। আমরা অতীতেও এ রকম ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি কালেভদ্রে। কিন্তু সেটা এখনকার মতো পুরো দেশজুড়ে বিস্তৃত ছিল না। সেগুলো সামাল দেওয়াও সম্ভব হয়েছে, এমনকি  স্বৈরশাসন আমলেও। তিনি বলেন, মাঠ প্রশাসন ঔপনিবেশিক কাঠামোতে যেমন ছিল, বস্তুত এখনো তেমনই আছে। তাই আমরা মাঝে মধ্যেই মাঠ প্রশাসনে সাধারণ ও বিশেষজ্ঞ দ্বন্দ্ব, ক্ষমতা, অর্থ ও কাজের দ্বন্দ্ব, পদমর্যাদাগত দ্বন্দ্ব প্রত্যক্ষ করি। কিন্তু সবচেয়ে বড় বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের দ্বন্দ্ব। কোনো কোনো জনপ্রতিনিধি প্রকাশ্যেই মারমুখী হয়ে উঠছেন। জনপ্রতিনিধি কিংবা তাদের কথিত ক্যাডার বাহিনীর হাতে নিগৃহীত, লাঞ্ছিত হচ্ছেন মাঠের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এসব ধামাচাপা দেওয়ার প্রবণতাই বেশি। বিচার না হওয়ায় এসব ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই আমরা এখন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনকে কোনো ঘটনা ঘটলেই বিচার চেয়ে বিবৃতি দিতে দেখছি। অনেকেই প্রশ্ন করেন এটি ট্রেড ইউনিয়ন আচরণের পর্যায়ে পড়ে কিনা। আমি মনে করি পেশাজীবী এবং কল্যাণমুখী সংগঠনগুলো তাদের সদস্যদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিয়ে বক্তব্য রাখতেই পারেন। কখনো কখনো সংগঠনের সাধারণ সদস্যদের চাপে কিংবা তাদের নৈতিক মনোবল ধরে রাখার জন্য সভা করে বিবৃতি দেওয়াও জরুার হয়ে পড়ে। এর প্রয়োজন হতো না যদি আইন তার নিজস্ব গতিতে চলত। আবু আলম বলেন, তাই যে কাজটি সর্বাগ্রে করা প্রয়োজন তা হলো, সংবিধান অনুসারে প্রশাসন ও রাজনীতি পৃথকীকরণ। আইন, বিধিবিধান, রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশাসনকে চলতে দেওয়া। কোনো স্থানীয় বা জাতীয় রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রী সরকারি কর্মচারীদের কোনো নির্দেশ দিতে পারবেন না। রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং ক্যাডারদের হাত থেকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি কর্মচারীরাও রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে কোনো অনুগ্রহ ভিক্ষে করবেন না। বিধি অনুযায়ী সেটি অপরাধ। দলীয় বিবেচনা নয় সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি চাকরিবিধি অনুযায়ীই হবে। তিনি বলেন, রাজনীতি ও প্রশাসনের সীমারেখা প্রায় অস্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় নিরপেক্ষ ও পেশাদার প্রশাসন ভেঙে পড়ছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সবকিছু ভেঙে পড়ার আগে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। বেরিয়ে আসতে হবে এই অশুভ চক্র থেকে। আমরা জানি, রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ- নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে যথাযথ সমন্বয় ও সুসম্পর্কের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সংবেদনশীল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর